আসন্ন ৪৮ বিশেষ বিসিএস (স্বাস্থ্য)
৫০০ ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ ও পর্যাপ্ত পদ সৃষ্টির দাবি বাংলাদেশ ডেন্টাল সার্জন ঐক্য পরিষদের

আসন্ন ৪৮ বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) ৫০০ জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ ও পর্যাপ্ত পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেন্টাল সার্জন ঐক্য পরিষদ।
আজ রবিবার শাহবাগ মোড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে এই দাবি জানান।
মানববন্ধনে নেতারা বলেন, ১৮ কোটি জনসংখ্যার এই স্বল্পোন্নত দেশের বেশির ভাগ মানুষ প্রায়শ মুখ ও দাঁতের নানাবিধ রোগে ভুগে থাকেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে মুখ ও মুখ গহ্বরের ক্যানসারে আক্রান্তের হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। যার বেসরকারি চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অথচ একজন ডেন্টাল সার্জন প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদান করতে পারলে এটি প্রতিরোধ করা অনেকাংশে সম্ভব।
দেশে ডেন্টাল সার্জনের সংখ্যাও অত্যন্ত নগন্য উল্লেখ করে তারা বলেন, উপজেলাগুলোতে চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষের বিপরীতে ৩১, ৫০ ও ১০০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে ডেন্টাল সার্জনের পদ মাত্র একটি। ১০ ও ২০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে ডেন্টাল সার্জনের কোনো পদই নেই। প্রায় একই অবস্থা অন্যান্য পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও।
যার ফলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ সরকারিভাবে মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে হাতুড়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হচ্ছেন, যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানহীন সেবা দিচ্ছেন।
সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে ছয় হাজার এমবিবিএস চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র ২৫০ জন বিডিএস চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৪২তম বিশেষ বিসিএসে চার হাজার এমবিবিএসের বিপরীতে কোনো বিডিএস চিকিৎসক নিয়োগ হয়নি। ৪৮তম বিসিএসে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের কথা চলছে, কিন্তু এতেও বিডিএস চিকিৎসকের কোনো পদ নেই।
তারা বলেন, রেজিস্টার্ড এমবিবিএস ও বিডিএস চিকিৎসকের অনুপাত ১০:১.৫ হলেও সরকারি চাকরিতে ২৫:১, যা সুস্পষ্ট বৈষম্য। ১৭ হাজার রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনদের মধ্যে এক হাজার ২০০ জন সরকারি চাকরিপ্রাপ্ত এবং এক হাজার ৫০০ জন বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত। অর্থাৎ দেশে আনুমানিক ১৪ হাজার ডেন্টাল সার্জন অনেকটা বেকার অবস্থায় আছেন, যা দেশের জন্য লজ্জাকর ও অসম্মানজনক।
এ অবস্থায় দেশের মানুষের মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্যসেবা, মুখের ক্যানসার প্রাথমিক ভাবে নির্ণয় এবং দুর্ঘটনাজনিত মুখমন্ডলের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে এনডিএফের ডেন্টাল বিভাগ আটটি দাবি তুলে ধরে। এগুলো হলো- ১০ ও ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জন পদ সৃষ্টিসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতি ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীর বিপরীতে একজন ডেন্টাল সার্জনের পদ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ হাজার জনে একজন ডেন্টাল সার্জন প্রয়োজন।
আসন্ন বিশেষ বিসিএসে ৫০০টি পদে ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে বিসিএসসহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় চিকিৎসকদের আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর থেকে ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ষষ্ঠ গ্রেডের দুটি জুনিয়র ডেন্টাল কনসালটেন্টের পদ সৃষ্টি করতে হবে। জেলা পর্যায়ে ষষ্ঠ গ্রেডের পাঁচটি ডেন্টাল কনসালটেন্ট এবং পঞ্চম গ্রেডের দুটি সিনিয়র ডেন্টাল কনসালটেন্টের পদ সৃষ্টি করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবায় সমতা বিধান করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে ডেন্টাল বিভাগে বিষয়বহির্ভূত পদায়ন বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ ডেন্টাল সার্জন পোস্টে সহকারী সার্জনদের পদায়ন বন্ধ করতে হবে।
জনগণকে স্বল্পমূল্যে দন্ত্যসেবা প্রদান ও প্রাথমিক পর্যায়ে ওরাল ক্যানসার শনাক্তের লক্ষ্যে ডেন্টিস্ট্রিকে অপারশনাল প্ল্যানের আওতায় আনতে হবে। জনগণের সঠিক ও নিরাপদ চিকিৎসা নিশ্চিতে বিডিএস ডিগ্রি ব্যতীত অন্য কেউ দন্ত্য চিকিৎসা প্রদান করতে পারবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিএসসি ইন ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট কোর্স বন্ধ করে বিএসসি ইন ডেন্টাল ল্যাব টেকনোলজি কোর্স চালু করতে হবে। বিএসসি ইন ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট এবং ডিপ্লোমা ইন ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের প্রাইভেট প্র্যাক্টিস অনুমোদনের চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে চলমান রিট মামলাসমূহের দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।