ঢাকা সোমবার, ১৮ই আগস্ট ২০২৫, ৪ঠা ভাদ্র ১৪৩২


মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ


প্রকাশিত:
১৮ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৪৬

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়েন আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সাকির হোসেন। আজ সোমবার দুপুরে তোলা। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সাকির হোসেন আজ সোমবার দুপুরে কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন। পরে কলেজের চলমান সংকট উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন তিনি। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান খান সাদি এসব কথা নিশ্চিত করেন।

অধ্যক্ষকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের এক অংশ আন্দোলন করছে। আজ দুপুর ১২টার দিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাকির হোসেনের কলেজে আসার খবরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা কলেজের একাডেমিক ভবনের চারতলায় শিক্ষক মিলনায়তনের কক্ষে তাঁকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে বেলা ২টার দিকে উদ্ধার করলে তিনি মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন।

৩ আগস্ট আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক সাকির হোসেন দায়িত্ব নেন। এর আগে গত ৩ জুলাই উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাকির উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক সাকির দায়িত্ব পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাঁকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে নামে। আন্দোলনের মুখে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তিনি কলেজে আসবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আজ ক্যাম্পাস এলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সাকির হোসেন আওয়ামী লীগের দোসর। তাঁর ছোট ভাই রাকিব হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাকিব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাগর হত্যা মামলার আসামিও। তাই অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদ শূন্য ঘোষণা করার দাবিতে গতকাল রোববার জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস বলেন, ‘শহীদ সাগরের রক্ত এখনো শুকায়নি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দোসরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তা আমরা কীভাবে মেনে নিই বলুন? আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ কলেজে আসবেন না বলে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সাকির স্যার গোপনে গোপনে বিভিন্ন ফাইলে স্বাক্ষর করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আজকে তিনি কলেজেও এসেছিলেন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। তাই আমরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করেছি। পরে তিনি মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।’

ভূগোল বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হারুনুজ্জামান সাগর বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের জায়গা আনন্দ মোহন কলেজে হবে না। আগেও বলেছি, এখনো বলছি—সাকির স্যারকে আমরা চাই না। এর ব্যত্যয় হলে আরও কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাকির হোসেনকে কটাক্ষ করে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাকির হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। পরে মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক খান সাদি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে স্যার মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সহকর্মী হিসেবে স্যারকে আমি অটোরিকশায় করে বাসায় পৌঁছে দিই। কলেজে আসেন সাক্ষাতে বিস্তারিত বলব।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, একটি বিষয়ে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাকির হোসেন কলেজে গেলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। পরে তাঁকে নিরাপদে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে পুলিশ গিয়ে সহযোগিতা করে।