ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ই নভেম্বর ২০২৫, ২৮শে কার্তিক ১৪৩২


নড়াইলে উন্নয়নকাজ বন্ধ করতে ডিসির সাথে অসদাচরণ


প্রকাশিত:
১৬ আগস্ট ২০২৫ ১৬:২৫

সৌগত বিশ্বাস

নড়াইল পৌরসভার হাটবাড়িয়া পার্ক ও জমিদার বাড়ী যাওয়ার পিচঢালা রাস্তা সংস্কার করার সময় বাধাদানের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌগত বিশ্বাস জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের কাজে বাধা দেন। এসময় তিনি ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন, তার বাড়ির জমির কিছু অংশ দখল করে রাস্তার পুনঃসংস্কার ও বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা লাইভে এসে তার করা দাবিকে অসত্য বলে উল্লেখ করছেন।

এ ঘটনায় আজ শনিবার (১৬ আগস্ট) বেলা ১২ টার দিকে রাস্তার সংস্কারকাজে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে অভিযুক্ত সৌগত পরিবারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে জেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান রাস্তার সংস্কার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও জমি পরিমাপের কাজে যান। এসময় স্থানীয় বাসিন্দা সৌগত বিশ্বাস ঘটনাস্থলে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ফেসবুক লাইভে এসে এ কাজে বাধাপ্রদান করেন। একইসাথে জেলা প্রশাসন তাদের জমি দখল করে রাস্তা করছে বলেও দাবি করেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসময় লাইভ বন্ধ করে ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে আলোচনা করতে বললেও অস্বীকৃতি জানান তিনি। তখন স্থানীয় কয়েকজনের সাথে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয় সৌগত বিশ্বাসের। পরবর্তীতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় কাজ বন্ধ করেই চলে আসেন এনডিসি মোহাম্মদ মেহেদী হাসান। এসময় রাস্তার উন্নয়নকাজ বন্ধ করার জন্য ডিসিকে উদ্দেশ্য করে হুমকিও দেন স্থানীয় সৌগত বিশ্বাস।

এদিকে এ ঘটনার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাবেক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলামসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহানকে ফোন করে সৌগত বিশ্বাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করে বিভিন্ন কথা বলেন। এসময় জেলা প্রশাসককে 'ভূমিখেকো' ও 'মহিলা মানুষ' বলেও তারা কটাক্ষ করেন বলে অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসক।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, সরকারি এ রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য দীর্ঘদিন এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে আসছিল। আমি ৪৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজে হাত দিই। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌগত বিশ্বাস কাজে বাধা দিচ্ছে এই বলে যে, রাস্তা করতে গিয়ে তার জমি নাকি জেলা প্রশাসন দখল করছে। এটার জন্য আমি একজন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে জমি পরিমাপ করতে বলি। কিন্তু জমি পরিমাপ করতে গেলেও বাধা দেয়া হলো এবং রাস্তার কাজ বন্ধ করা হলো। এমন মানসিকতা হলে উন্নয়ন কীভাবে হবে?

তিনি আরও বলেন, এই সৌগত বিশ্বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ায় ঢাবির কয়েকজন ছাত্রনেতাকে দিয়ে আমাকে অপমান করিয়েছে। বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে আমাকে 'ভূমিখেকো' ও 'মহিলা মানুষ' ইত্যাদি বলে বাজে ভাষায় আক্রমণ করেছে। এখানে কথা হলো- আমি কেন ভূমিখেকো হবো? রাস্তা তো আমি ভোগ করব না৷ নড়াইলের মানুষই ভোগ করবে।

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত সৌগত বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমি জমি মাপতে বাধা দেইনি। কাউকে দিয়ে ফোন করিয়ে ডিসিকে হুমকি দিতে চাইনি, শুধু আমার ক্যাম্পাসের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে ডিসিকে ফোন করিয়েছি আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। কারণ রাস্তা পরিমাপ করার সময় আমি ফেসবুক লাইভ করলে স্থানীয় কিছু গুন্ডারা আমাকে মারধর করেছে।

এদিকে জেলা প্রশাসককে হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে কোটা আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতা হাসিব আল ইসলাম বলেন, আমি ডিসিকে কোনো খারাপ কথা বলিনি। শুধু ফোন করে বলেছি যেন সৌগত বিশ্বাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

এদিকে অভিযুক্ত সৌগত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিগত স্বৈরাচারী আমলে হাটবাড়িয়া পার্ক ও জমিদার বাড়ি এলাকার সরকারি খাস জমি দখল করে ভোগদখল করার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা কাজল ঘোষ বলেন, এই সৌগতের দুলাভাই ছাত্রলীগের নেতা। এরা এসব পরিচয় ব্যবহার করে স্বৈরাচারী আমলে সরকারি খাস জমি দখল করে ভোগ করেছে। এখন তারা রাস্তার কাজে বাধা দিচ্ছে। বলছে, তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক বলে নাকি তাদের জমি দিয়ে রাস্তা হচ্ছে। অথচ, আমাদের এই এলাকার ১০০ ঘরের মধ্যে ৫ ঘর বাদে সবই হিন্দু ধর্মের। হিন্দু ধর্মের লোকেরাই এই সৌগতদের হাতে নির্যাতিত।