জোরপূর্বক অন্যের সম্পদ দখল করলেন ন্যাশনাল মেডিক্যালের ডা. মোশাররফ হোসেন

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় একটি হাসপাতালের জন্য ভাড়া নেওয়া ফ্লোর দখলে নিয়েছেন আওয়ামিলীগ আমলে রাজত্ব চালানো, ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যালের এনেস্থিসিয়া বিভাগের প্রধান ডা. মোশাররফ হোসেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যালে কর্মরত। নিজেকে তিনি বিএনপির বড় নেতা পরিচয় দিয়ে বেড়ালেও আওয়ামীলীগ এর আমলে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল গোপালগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন লে. কর্নেল ফারুক খানের সাথে। ফারুক খান নিজের আত্মীয়, এই পরিচয় দিয়ে রাজত্ব কায়েম করতেন ডাক্তারপাড়ায়। এখনো সরকার পতনের পর তার অপকর্ম যেন আরো বেড়েছে। ঘটনা থেকে জানা যায় মিটফোর্ড টাওয়ার এর ৩য় তলা হাসপাতালের জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন মেডিলাইফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ১লা মার্চ হাসপাতালের জন্য ভাড়া নেওয়া ফ্লোরে জোরপূর্বক তালা দিয়ে রাখেন তিনি এবং ৫ মার্চ ভোরে হাসপাতালের যাবতীয় সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ভাংচুর করে পুনরায় তালা দেন দখলকৃত ফ্লোরের দরজায়। এতে যেমন মিটফোর্ড এলাকাজুড়ে রোগী ও রোগীর স্বজনরা, ডাক্তার ও অন্যান্য ঔষধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চিন্তিত তেমনি আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো ন্যাশনাল মেডিক্যাল জুড়ে।
উক্ত ঘটনার ভুক্তভোগী মালিকপক্ষের লোকজন দিশেহারা হয়ে সমস্যার সমাধানের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেলের শরণাপন্ন হলে তিনি বিষয়টির সমাধানে উভয়পক্ষের সাথে দেখা করতে আসেন। উল্লেখ্য মালিকপক্ষের একজন ডা. হারিস, সম্পর্কে মেহেদী হাসান হিমেল-এর মামা। সমস্যা সমাধানে মালিকপক্ষ ও ভাড়া দেওয়া ফ্লোরের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডস্কেপ সিদ্ধান্ত নেয় মঙ্গলবার ও বুধবার (১৫ ও ১৫ এপ্রিল) আলোচনায় বসে বিষয়টির সমাধান করবে।
ঘটনার পর ডা. মোশাররফ হোসেন জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল-এর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন। এই ব্যাপারে ডা. মোশারফের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
অভিযোগের ব্যাপারে মেহেদী হাসান হিমেল জানান, ‘ডা. হারিস আমার মামা হন, তার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক। আমাদের বাড়িও পাশাপাশি। আমার মামার সাথে অন্যায় হচ্ছে, এটা শোনার পর আমি ঘটনার খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। উভয়পক্ষের সাথে কথা বলেছি, সমাধানের জন্য দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছে। তিনি আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির যেই অভিযোগ এনেছেন এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি কারো চাপে পড়ে আমার রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট করতে আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। তিনি নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছেন।’
ডা. মোশাররফ হোসেনের লুটপাটের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। দেখা যাচ্ছে তিনি ট্রাকে করে হাসপাতালের মালামাল সরাচ্ছেন।
এই ব্যাপারে দখল হওয়া ফ্লোরের মূল মালিকদের সাথে কথা বললে মালিক ডা. হারিস জানান, ‘মোশাররফ জোর করে আমাদের ক্রয়কৃত ফ্লোরে তালা লাগিয়ে উলটো আমাকে ও আমার অন্যান্য পার্টনারদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। একই সাথে আমার খোঁজ নিতে আসা আমার আত্মীয় হিমেলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন। যেই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
ডা: মুর্শিদা পারভীন বলেন, ‘মোশাররফ আওয়ামী আমলে ফারুক খানের ভাতিজি জামাই পরিচয় দিয়ে আমাদের অত্যাচার করেছে এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এ মেডিকেল অফিসার থেকে প্রফেসর প্লাস হেড অফ ডিপার্টমেন্ট হয়েছে।এখন আবার বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আমার ফ্লোর জোর করে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা তার অত্যাচারের কাছে অসহায়।’
ডা: রাজিব বলেন, ‘আমি ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একই ডিপার্টমেন্ট চাকরি করার কারণে আমার বিরুদ্ধে ডিরেক্টর, ডেপুটি ডিরেক্টর উনাদের কাছে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে হেনস্তা করে। সাথে আমার ফ্লোর জোরপূর্বক দখল করে রেখে আমাদেরকেই মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। যারা আমাদের বিপদে পাশে দাঁড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও মিথ্যে অভিযোগ আনছে।’
আরেকজন মালিক ডা: মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ওর মতো ভূমিদস্যুদের হাত থেকে আইনগত বা সামাজিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তার মত লোক দেশের জন্য ক্ষতিকর, আমরা চাইনা পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার কোন দোসর পুনরায় আর কারো সম্পদ দখল করুক।’
উল্লেখ্য, ডা. মোশাররফ ড্যাবের পরিচয় দিয়ে তার সকল অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে ঘটনার মীমাংসার জন্য সময় নির্ধারণ করা হলেও উক্ত সমস্যা সমাধানে তিনি আয়োজিত সভায় উপস্থিত হননি।