সাম্য হত্যা
'লং মার্চের’ হুঁশিয়ারি ঢাবি শিক্ষার্থীদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলা তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি সামনে না এলে বৃহস্পতিবার 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং মার্চ' করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এছাড়া সাম্য হত্যার বিচারের দাবিসহ নয় দফা দাবি তুলে ধরা হয় সেখানে।
সংবাদ সম্মেলনে সাম্যের বন্ধু সোহেল রানা সাব্বির বলেন, “আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই মামলার গতিবিধি দেখব। তারপর যদি আমরা মামলার অগ্রগতিতে খুশি হতে না পারি তাহলে বৃহস্পতিবারই আমরা কলাভবনের সামনে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান নিব। তারপর সেখান থেকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং মার্চ করবো।“
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ছুরিকাঘাতে’ আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল আলম শাহবাগ থানায় ‘১০ থেকে ১২ জনকে’ আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করার তথ্য দিয়েছে পুলিশ।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে।
সংবাদ সম্মেলনে, সাম্য হত্যা নিয়ে ‘নোংরা রাজনীতি চলছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তার বন্ধু এস এম নাহিয়ান।
তিনি বলেন, “আমরা দুঃখজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি সাম্যর হত্যাকাণ্ডের পর তাকে নিয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো বিভাজন ও নোংরা রাজনীতি করছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে রাজনৈতিক দলাদলি আমাদের আশাহত করেছে। আমাদের প্রত্যাশা সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবীতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ঐক্যবদ্ধ থাকবে।”
এসময় শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর হোসনে আরা বেগমসহ শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ, সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল হালিম, সহযোগী অধ্যাপক রাহুল চন্দ্র শাহাসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রোববার সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতি ও ‘মূল হত্যাকারী’ গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এছাড়া সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
নয় দফা দাবি হল
১. হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও জনসমক্ষে প্রকাশ করা।
২. ঘটনার সময়কার আশেপাশের এলাকার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ প্রকাশ করা।
৩. হত্যার সহযোগীদের ছেড়ে দেওয়ায় জড়িত পুলিশদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
৪. শাহবাগ থানার আশেপাশের অস্ত্র ও মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও পুলিশের গাফিলতির জবাবদিহি করা।
৫. প্রশাসনের অবহেলার প্রতিবাদ, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা।
৬. তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমে প্রশাসনের সক্রিয়তা এবং সাম্যের পরিবার ও সহপাঠীদের সম্পৃক্ত করা।
৭. বিচার নিশ্চিতে ‘সাম্যর বিচার নিশ্চিতকরণ কমিটি’ গঠন করা।
৮. প্রতিবাদে অনুপস্থিত সংগঠনগুলোকে একাত্ম হওয়ার আহ্বান।
৯. ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে, সাম্য হত্যা নিয়ে ‘নোংরা রাজনীতি চলছে’ বলে অভিযোগ করেছেন সাম্যের বন্ধু এস এম নাহিয়ান।