ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর অভিযোগ
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিম এখন পটুয়াখালীতে

২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) উপপরিচালক মো. হামিমুর রশীদের বিরুদ্ধে।
তৎকালীন সরকারের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা শুধু সহিংসতা জড়িত ছিলেন না, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধিদপ্তরে নিয়োগ বাণিজ্য ও তদবিরের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন হামিমুর রশীদ মানিকগঞ্জে উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে ঢাকায় চলে আসেন এবং সেগুনবাগিচা ও কাকরাইল এলাকায় পুলিশের সহযোগী হিসেবে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালান। এমন গুরুতর অপরাধের জন্য শাস্তি পাওয়ার পরিবর্তে, তাকে পুরস্কৃত করার মতো করে পর্যটনসমৃদ্ধ জেলা পটুয়াখালীর উপপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। এই বদলি নিয়ে অধিদপ্তরের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
৩০তম বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা হামিমুর রশীদ অধিদপ্তরে 'বঙ্গবন্ধু পরিষদ' নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসির একজন সহকারী পরিচালক বলেন, "হামিম স্যার পূর্ববর্তী সরকারের আমলে তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাকেসহ অনেককে জোর করে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই কমিটির নাম ভাঙিয়ে তিনি নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার কোনো নির্দেশ অমান্য করলে বিভাগীয় শাস্তির হুমকি দেওয়া হতো।"
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, হামিমুর রশীদ অধিদপ্তরের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) গণমাধ্যমকে বলেন, "আমরা এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে তাকে আমাদের নজরদারিতে (ওয়াচলিস্ট) রাখা হয়েছে। এটা সত্য যে তিনি পরাজিত ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষ নিয়েছিলেন এবং অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই 'বঙ্গবন্ধু পরিষদ' গঠন করেছিলেন। আপনারা (সাংবাদিকরা) এই বিষয়গুলো তুলে ধরলে আমাদের জন্য অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে।"
অন্যদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপপরিচালক হামিমুর রশীদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে (০১৪০৪০৭২৬১৯ ও ০১৯১১-৮৪৭১৮০) একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবদুল কাদের শেখ জানিয়েছেন, "বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্র-জনতার রক্তে হাত রাঙানো এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকা নতুন সরকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে একটি বড় অন্তরায়। দ্রুত তদন্ত করে এ ধরনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।