ঢাকা রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


অর্থ-নারী কেলেঙ্কারিসহ শিক্ষামন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে হুমকি দিতেন রিয়াজ


১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৮

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৪

অর্থ-নারী কেলেঙ্কারিসহ শিক্ষামন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে হুমকি দিতেন রিয়াজ

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান নারী শিক্ষা মন্দির বর্তমানে শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডর (ঢাকা) বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- ঢাকা মহানগরীর সূত্রাপুর থানাধীন শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের স্কুল কমিটির (গভর্নিং বডির) বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন পদত্যাগ করেছেন। অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সভাপতি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) মনোনয়ন দেওয়া হলো।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নয় বরং তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা অনিয়ম, দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা ও যৌন হেনস্তার অভিযোগে স্মারক লিপি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর। সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ পরে খোঁজ নিলে অভিযোগের সত্যতা মেলে এবং রিয়াজ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেওয়া স্মারকলিপিতে উঠে এসেছে গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিনের বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারির চিত্র। রিয়াজ সভাপতি হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিচয় দিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় ম্যানেজ করে অডিট আটকে শূণ্যের কোটায় এনেছেন প্রায় ১৩ কোটি টাকার ফান্ড। এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন রিয়াজ নিজেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির দোহাই দিয়ে রিয়াজ নিয়মিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছেন এবং নারী শিক্ষকদের তিনি তার পার্সোনাল সাক্ষাৎ ও লংড্রাইভে যেতে প্রস্তাব দিতেন। এই প্রস্তাবে সাড়া না পেলে তার রোষানলে পড়তে হয় তাদের।

এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর কাছের লোক পরিচয় দিয়ে শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ এমনকি চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিতেন প্রতিনিয়ত। এখানেই শেষ নয়, শিক্ষার্থীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের জন্য সিটিং রুম সংকট থাকলেও রিয়াজ নিজের ক্ষমতার দাপটে বিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক একটি সভাপতির কক্ষ তৈরি করেছেন। যেখানে তিনি গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করেন। আর এখানে বসেই নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রয়োজনে সাক্ষাৎ করতে বলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা রিয়াজউদ্দিন রিয়াজের ঢাকা শহরে জীবন শুরু গুলিস্তানে ঝুঁড়িতে করে জুতা বিক্রি করার মধ্য দিয়ে। এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে। মূলত হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে স্বঘোষিত জিএস পরিচয় দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন তিনি।

তৎকালীন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে রিয়াজের হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে জীবন বদলে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তিনি সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হন। ছাত্রলীগের সিন্ডিকেট ম্যানেজ করে বাগিয়ে নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদ। এছাড়া তিনি জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর নেতা ও হোমিওপ্যাথি বোর্ডের সদস্য ডা. যুবরাজের স্ত্রী ডা. তাহমিনার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং পরবর্তীতে এটি জানাজানি হলে ডা. যুবরাজ গুপ্ত হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় রিয়াজের সম্পৃক্ততা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

স্মরক লিপিতে শিক্ষিকরা আরও উল্লেখ করেন- রিয়াজ প্রায়ই বলেন, তার সঙ্গে দীপু মনির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। যেটা রিয়াজ তার ফেসবুক প্রফাইলে লাইভ প্রকাশ করেছেন।

রিয়াজ শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ, যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল কলেজের গভার্নিং বডির সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়- এক সময় মাদরাসায় পড়ুয়া শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা রিয়াজ ঢাকায় এসে বনে যান আওয়ামী লীগের রিয়াজ।

বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তার জন্য বড় আশীর্বাদ। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে প্রচারণা আজ তাকে নিয়ে এসেছে এ পর্যায়ে। রিয়াজ শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন (তার মতে) এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে ওপেন সিক্রেট বিষয়। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নেতাকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেওয়ার ঘটনাও রাজনৈতিক অঙ্গনে ওপেন সিক্রেট। এসব সুযোগ নিয়ে তিনি বিভিন্ন অপকর্মে জড়ান।

এছাড়া তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দলের সুনাম নষ্ট করতে তৎপর রয়েছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে রিয়াজের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি বলেন, আমি এমন একটি ঘটনার কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।