জবিতে ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নাজমুল হকের বিরুদ্ধে ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এর প্রমাণ মিললো। তিনি ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও জালিয়াতি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ তদন্তে এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি। এতে অন্যদের সংশ্লিষ্টতাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নাজমুল হক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরেরই এক কর্মকর্তার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন মোঃ নাজমুল হক (৩৭), তার পিতার নাম মোঃ ফজলুল হক। তিনি মতলব চাঁদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র জমা নেওয়া ও তথ্য দেওয়ার কাজ করেন। দ্রুত কাগজ তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে রসিদ দিলে কাজ নির্ধারিত সময়ের তুলনায় দ্রুত হয়। এ রীতিকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেন নাজমুল। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা রসিদ পূরণ করে নাজমুলের কাছেই টাকা দিয়ে ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য বলতেন। শিক্ষার্থীদের দেওয়া ওই টাকা জমা না দিয়ে নকল সীল ব্যবহার করে নিজেই আত্মসাৎ করতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হৃদয় বলেন, আমি সার্টিফিকেট তুলতে গেছিলাম তখন নাজমুল আমাকে বলেন, রসিদ লিখে টাকা দিয়ে যাও আমি ব্যাংকে জমা দিয়ে দ্রুত কাজ করিয়ে দেব।
অভিযোগ আছে, ব্যাংকের সীল জালিয়াতি ও স্বাক্ষর নকল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের শুধু নাজমুল একাই নন, এ চক্রে আরো কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা শীর্ষ খবরকে বলেন, ব্যাংক রসিদে ভিন্ন ভিন্ন স্বাক্ষর সহ বেশ কিছু আলামত পাওয়ায় সন্দেহ হয়। পরে নাজমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সবকিছু স্বীকার করেন। তার কাছ থেকে ব্যাংকের নকল সীল জব্দ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে কিছু রসিদ ব্যাংকে যাচাইয়ের জন্য পাঠালে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি রসিদ তারা নকল বলে চিহ্নিত করেছেন। অন্যান্য রসিদ গুলোও যাচাই-বাছাই চলছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সন্দেহ হলে গত ৩ মে কর্মচারী নাজমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংক শাখার নামে 'নগদ গ্রহণ' লেখা নকল সিল উদ্ধার করা এবং ৫ মে সিলটি জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুল জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মচারী নাজমুল হক শীর্ষ খবরকে বলেন, শয়তানের প্ররোচনায় পরে আমি এ কাজ করেছি। ভুল হয়ে গেছে, স্যারের কাছে মাফ চাইছি। আমি এই ধরনের কাজ আর কোনদিনও করব না। নকল সীলও দিয়ে দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার আরিফুল হক ভূঁইয়া জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংকের কাছে সাতটি ভাউচার পাঠানো হয়, এর মধ্যে চারটিতে ভুয়া সিল পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন তালুকদার শীর্ষ খবরকে বলেন, জালিয়াতির সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা রেজিস্টার অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়েছি এবং এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক ডঃ শেখ গিয়াস উদ্দিন শীর্ষ খবরকে বলেন, এই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।