ঢাকা রবিবার, ১২ই মে ২০২৪, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩১


শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অপমান, লজ্জায় আত্মহত্যার চেষ্টা স্কুলছাত্রীর


২৩ জানুয়ারী ২০২০ ১২:৩২

আপডেট:
২৩ জানুয়ারী ২০২০ ১২:৩৫

প্রতিকী ছবি,

কুপ্রস্তাবে’ রাজি না হওয়ায় শিক্ষকের করা অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এক স্কুলছাত্রী। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী এখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

গত শনিবার ওই স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এদিকে বিষয়টি তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার ওই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার কথা রয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই স্কুলছাত্রী তার নিজ ফেসবুক আইডিতে অভিযোগ করেছেন, ‘গত শনিবার আমার সাথে স্কুলের শিক্ষক শাহীনুজ্জামান খুব খারাপ আচরণ করেন।

তিনি অনেকদিন ধরে আমাকে নানাভাবে কুপ্রস্তাব দেয়। সুযোগ পেলেই উত্যক্ত করে আমাকে। সেসহ আরও একজন সহকারী শিক্ষক এর সাথে জড়িত।

আমি ১৮ তারিখে স্কুলের প্রতিযোগিতায় নাম দিতে যাই। আমাকে সেদিনও খারাপ কথা বলে। বলে-‘ আমি নাম না দিলে, কেউ তোর নাম দিবে না, আমার কথা শোন কাজ হবে।’ আমি ভীষণ লজ্জা পাই। এক পর্যায়ে হেড স্যার এসেই আমাকে ভীষণ বকাঝকা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়।

হেড স্যার আমার মাকেও ফোনে খারাপ কথা বলে। আমি লজ্জায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিই।

বর্তমানে আমি খুলনা মেডিকেলে...আছি। ডাক্তার বলেছে যেকোনো সময় সমস্যা হতে পারে।

ওই স্কুলছাত্রী ফেসবুকে আরও লেখেন, ‘আমি গরিব পরিবারের মেয়ে, আমার চিকিৎসার খরচ মেটাতে পারছি না। আমার পরিবারকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেওয়া হচ্ছে।

আমি গরিব বলে আমার পাশে কেউ দাঁড়ায় না। আমার হেড স্যার সেদিন শাহীন স্যারের পক্ষ নিয়ে কেন বকা দিল জানি না। আমার যদি কিছু হয়-এর জন্য দায়ী থাকবে শাহীন স্যার, এরপর হেড স্যারসহ সব স্যাররা। কারণ কোনো স্যারই আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। আমাকে অন্যায়ভাবে খারাপ আচরণ করে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

ওই স্কুলছাত্রী আরও লেখে, ‘আমি খেতে পারছি না। আজ কিছুটা বসতে পেরে বাধ্য হয়ে লিখলাম। আমার নামে নানান খারাপ কথা ছড়ানো হচ্ছে। শেষ কথা আমি বাঁচতে চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা বলেন, ‘স্কুলের শাহীন স্যারের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন এক সদস্যের মেয়েকে ওই শাহীন স্যার ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা করেছিল। স্কুল থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়েছিল। পরে টাকা দিয়ে সব মিটিয়ে নিয়েছে। আমার মেয়ে ভালো বলে চরিত্রহীন ওই স্যারের কথায় রাজি হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা আইনের সহায়তা নিতে থানায় গিয়েছিলাম। তখন ওসি সাহেব ছিলেন না। অন্যরা মিটমাট করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। তারপর মেয়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় আর থানায় যাওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ গাজী বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমরা শিক্ষকরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে গিয়েছিলাম।

তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্কুলের সভাপতি সাহেবকে অবহিত করলে তিনি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। শরণখোলা থানার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য গিয়াস উদ্দিন মুন্সি ও বর্তমান সদস্য অমলেন্দু হালদার রয়েছেন ওই কমিটিতে। আগামীকাল ওই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। স্কুলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য মেয়েটি এসব অভিযোগ করছে। মেয়েটার কিছু পর্ন ছবি এলাকার মানুষের মোবাইলে ছড়িয়ে রয়েছে। যেটা নিয়ে অন্যান্য ছেলেমেয়েরা তাকে টিটকারি করে। মূলত সেইসব ঘটনার জন্য সে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এ ছাড়া ইতিপূর্বেও আমার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি।’