আইইউবিতে শেষ হলো দুই দিনের ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড চেঞ্জিং ক্লাইমেট ২০২৫’ সম্মেলন
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) এবং কোলোকাল প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড চেঞ্জিং ক্লাইমেট ২০২৫’ শেষ হয়েছে শুক্রবার ২১ নভেম্বর ২০২৫। ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক কৌশল ও স্থানীয় বাস্তবতার সমন্বয়’- এই উপপাদ্যকে সামনে রেখে আলোচনায় অংশ নেন দেশি-বিদেশি গবেষক, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
সম্মেলনটি শুরু হয় ২০ নভেম্বর। প্রথম দিনের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. এ. আতিক রহমান, ড. শাহপার সেলিম ও ড. ফয়সাল কবীর। তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষণা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নীতিনির্ধারণে স্থানীয় জ্ঞান ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরেন। উদ্বোধনী পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন আইইউবির উপাচার্য অধ্যাপক ম. তামিম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডব্লিউ. লুন্ড, এবং স্কুল অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেসের ডিন ড. কে. আয়াজ রাব্বানী।
পরিবেশ ও জলবায়ু ন্যায়বিচার নিয়ে পটগান পরিবেশন করে খুলনার‘রূপান্তর থিয়েটার’। মুয়ীজ মাহফুজ ব্যান্ড পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন। দিনের শেষাংশে আইইউবির এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জলবায়ু ও উন্নয়ন খাতের বর্তমান বাস্তবতা, বৈশ্বিক অর্থায়ন সংকট এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ছিল মূলত একাডেমিক পর্যালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মৌখিক ও পোস্টার উপস্থাপনায় গবেষকেরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, আদিবাসী জ্ঞান, টেকসই কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ নানাবিধ বিষয়ে তাঁদের গবেষণা তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি পরিচালিত হয় কয়েকটি কর্মশালা ও সাইড ইভেন্ট, যেখানে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
খুলনা ও সাতক্ষীরার দলিত ও মুণ্ডা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা প্রকৃতিনির্ভর সমাধান, ঝুঁকি, অভিজ্ঞতা ও দীর্ঘদিনের সংগ্রামের গল্প তুলে ধরেন। সিমিট, সুশীলন এবং আইইউবির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইক্যাড) যৌথ সেশনে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন (বা লোকালি লেড অ্যাডাপপেটশন) সম্পর্কিত বিভিন্ন উপায় ও প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ও উগান্ডার কোলোকাল ফেলোরা তাঁদের গবেষণা উপস্থাপন করেন এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। সমুদ্রবিদ্যা ও সহনশীলতা বৃদ্ধির ওপর একটি কর্মশালা পরিচালনা করে ‘নির্মল বাংলাদেশ’।
সম্মেলনে তারুণ্যের সম্পৃক্ততার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল । ‘ইনফ্লুয়েন্সার্স’ গ্রুপের কর্মশালায় তরুণরা শেখেন কীভাবে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে জলবায়ু-অ্যাডভোকেসিতে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা যায়। হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি আয়োজিত একটি সেশনে অংশগ্রহণকারীরা আন্তঃবিষয়ক জননীতি কেন্দ্রিক বিভিন্ন স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের ব্যাপারে জানতে পারেন।
সম্মেলনের আংশিক অর্থায়ন করেছে নরওয়েজিয়ান এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশনের (নোরাড) সহযোগিতায় পরিচালিত কো-ক্রিয়েটিং নলেজ ফর লোকাল অ্যাডাপটেশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ (কোলোকাল) প্রকল্প, যা বাংলাদেশ, নেপাল, উগান্ডা ও মোজাম্বিকের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু অভিযোজন গবেষণা ও শিক্ষায় সক্ষমতা বাড়ানো বিষয়ে গবেষণা করছে।
