তালায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
মামলা রেকর্ড হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামিরা

সাতক্ষীরা তালা উপজেলার ইসলামকাটী ইউনিয়ন পরিষদে হত্যার উদ্দেশ্যে দুই সাংবাদিককে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনায় আসামিদের কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পরিবারের অভিযোগ, সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম এবং আতাউর রহমান ছেলে মেয়ের জন্ম সনদ সংগ্রহের জন্য ইসলামকাটী ইউনিয়ন পরিষদে গেলে কোন কারণ ছাড়াই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমাদের কন্ঠ ও ডেইলি টাইমস অফ বাংলাদেশ ও রুপান্তর প্রতিদিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও স্থানীয় দৈনিক সাতক্ষীরার সকাল পত্রিকার পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি আতাউর রহমানের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়।
১৯ নভেম্বর বেলা ১২ দিকে এই হামলার ঘটনায় ঐ দিন বিকালে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম বাদী হয়ে তালা থানায় সন্ত্রাসী মোঃ রমজান আলী সরদার(৩২) পিতাঃ মোঃ মোজাম সরদার গ্রাম- ড্যামসাখোলাসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা নং-৮ তারিখ ২০/১২/২৪। পরিবারের অভিযোগ, আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারা আতঙ্কে দিন পার করছেন। মামলা তুলে নিতে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল তাদের চাপ দিচ্ছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ছেলে মেয়ের জন্ম সনদ সহ ফুফার জমি সংক্রান্ত একটা বিষয় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আসলে বহু বিবাহের খল নায়ক,চাকুরী দেওয়ার প্রলোভনে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎকারী সন্ত্রাসী রমজান কতৃক সাংবাদিককে হত্যার জন্য ইসলামকাটি ইউপি ভবনে প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।
বর্তমানে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম জীবন মৃত্যুর সাথে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সন্ত্রাসী রমজানের বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্ককারী সহ নানা প্রতারণার অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে শত শত মানুষের সামনে আক্তারুল সহ আতাউর রহমানের উপর সন্ত্রাসী রমজান দ্বারা চরম মারপিটের স্বীকার হয়েছে।
নির্যাতিত সাংবাদিক আক্তারুল ইসলামের স্ত্রী আঁখি আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের দ্বারা মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি।'
হামলায় আহত সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। তিনি এখন কথা বলতে পারলেও মাথায় ব্যাথা অনুভব করছেন। চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তার কপালের ডান সাইডে ৬/৭ টা সেলাই দিতে হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন সুস্থ হতে সময় লাগবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে একজন চিকিৎসক জানান, তার অবস্থা স্থিতিশীল।
সাতক্ষীরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলাম বাবলু বলেন, মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তারে স্থানীয় থানা পুলিশ আন্তরিক নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, পুলিশ গ্রেফতারের আশ্বাসে সময় ক্ষেপণ করলেও অদৃশ্য কারণে আসামিরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এটা শুধুই 'আই ওয়াশ'।
তিনি আরও বলেন, "সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কারা হামলার সঙ্গে জড়িত। ফুটেজে যাদেরকে সাংবাদিকের ওপর হামলা করতে দেখা যাচ্ছে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।"
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শাহিনুর ইসলাম বলেন, মূল আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। তাই তাদের খুঁজে বের করতে সময় লাগছে।'
যোগাযোগ করা হলে, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, কেউ ভিকটিমদের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিলে তারা স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে পারেন।
তিনি বলেন, 'অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে গেছে-এই কথা বলে স্থানীয় থানা পুলিশের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ যেকোনো মূল্যে তাদের গ্রেপ্তার করবে। আমি ইতিমধ্যে তালা থানার ওসিকে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছি। আমি আবারও তার সঙ্গে কথা বলব।