ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৮ই বৈশাখ ১৪৩২


নতুন হজ বিধিমালা: প্রবেশ, অনুমতি এবং শাস্তির বিধান জানুন


২০ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৫৮

আপডেট:
২১ এপ্রিল ২০২৫ ০১:০২

ফাইল ছবি

সৌদি আরবে পবিত্র নগরী মক্কায় প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম জারি করেছে দেশটির সরকার। আগামী ২৩ এপ্রিল (২৫ শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি) থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে অবশ্যই সরকারিভাবে ইস্যু করা প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হবে। সৌদি আরবের পাবলিক সিকিউরিটি ডিরেক্টরেট (জননিরাপত্তা পরিদপ্তর) এই ঘোষণা দিয়েছে।

সৌদি কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ মূলত বার্ষিক হজ–এর নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এই নিয়ম সৌদি নাগরিক এবং প্রবাসী বাসিন্দা উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য হবে।

মক্কায় প্রবেশের জন্য অনুমতি বাধ্যতামূলক

নতুন এই নির্দেশনা হজ–এর সময় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রাখার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ এবং এটি সৌদি নাগরিক ও বাসিন্দাদের উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। যাদের কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকবে না, তাঁদের শহরের চারপাশে স্থাপিত নিরাপত্তা চৌকিতে ফেরত পাঠানো হবে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নিম্নলিখিত একটি নথি থাকলেই কেবল মক্কায় প্রবেশ করা যাবে:

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত, পবিত্র স্থানগুলোতে কাজের জন্য বৈধ অনুমতিপত্র।
মক্কায় নিবন্ধিত বসবাসের প্রমাণপত্র (ইকামা)।
সরকারিভাবে ইস্যু করা হজ পারমিট।

এই নীতিমালার লক্ষ্য হলো মক্কায় প্রবেশ সহজ করা, অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা এবং লাখ লাখ হজযাত্রীর আগমনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় নিরাপত্তা জোরদার করা।

প্রবেশের জন্য কীভাবে আবেদন করবেন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘আবশের ইনডিভিজুয়্যালস’ (Absher Individuals) এবং ‘মুকিম’ (Muqeem)–এর মাধ্যমে অনলাইনে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হচ্ছে। এটি ‘তাসরিহ’ (Tasreeh) নামক ইউনিফায়েড পারমিট সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত।

কর্মরত প্রবাসীরা হজ মৌসুমে সৌদি আরবের ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পূর্ণ সংযুক্ত থাকার কারণে পাসপোর্ট অফিসে না গিয়েও এই পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

‘নুসুক’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক হজ পারমিট

সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, হজযাত্রীকে অবশ্যই ‘নুসুক’ (Nusuk) নামের সরকারি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হজ পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। এটি ডিজিটাল সমন্বিত ব্যবস্থা ‘তাসরিহ’–এর সঙ্গে যুক্ত।

মন্ত্রণালয় আরও স্পষ্ট করে বলেছে, ওমরাহ, ভিজিট বা টুরিস্ট ভিসায় হজ পালনের অনুমতি মিলবে না।

ভুয়া হজ ক্যাম্পেইন সম্পর্কে সতর্কতা

কর্তৃপক্ষ সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভুয়া হজ ক্যাম্পেইন সম্পর্কে সতর্ক করেছে। এসব ক্যাম্পেইনে যেখানে লাইসেন্সবিহীন আবাসন বা পরিবহনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। নাগরিক ও বাসিন্দাদের জরুরি হটলাইন বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ ধরনের লঙ্ঘনের রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

পারমিটের জন্য ‘তাসরিহ’ প্ল্যাটফর্ম

অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি সৌদি ডেটা অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথোরিটি (এসডিএআইএ)–এর সঙ্গে সহযোগিতায় ‘তাসরিহ’ প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে।

এই কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা মক্কা এবং অন্য পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশকারী হজযাত্রী, কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক এবং অনুমোদিত যানবাহনের জন্য পারমিট ইস্যু করে। পারমিটধারীরা ‘তাওয়াক্কালনা’ (Tawakkalna) অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের অনুমোদনের স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন।

ওমরাহ ভিসার শেষ তারিখ

এ ছাড়া, হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, হজ মৌসুমের আগে, সৌদি আরবে অবস্থানকারী ওমরাহ ভিসা ধারীদের জন্য ২৯ এপ্রিল (১ জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি) হলো দেশত্যাগের শেষ তারিখ।

সৌদি সরকার সতর্ক করেছে, এই তারিখের পরে অবস্থানকারী ওমরাহ যাত্রীদের প্রত্যাবাসন, কারাদণ্ড এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে। এই তারিখের পরেও অবস্থান করা সৌদি আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

অবৈধভাবে অবস্থানের জন্য কঠোর শাস্তি

সৌদি আরব সরকার এর আগে ঘোষণা করেছে, ভিসার নিয়মনীতি লঙ্ঘনকারী এবং ২৯ এপ্রিলের সময়সীমার মধ্যে দেশ ত্যাগ করতে ব্যর্থ ওমরাহ যাত্রীদের বিরুদ্ধে প্রত্যাবাসন ও কারাদণ্ডসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই তারিখের পরে অবস্থান করা একটি আইনি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর জন্য বড় অঙ্কের জরিমানা, কারাদণ্ড এবং সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হতে পারে।