ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


যোগ্যদের হাতেই কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব!


৩ নভেম্বর ২০২০ ০৬:২৬

আপডেট:
৩ নভেম্বর ২০২০ ০৬:৩১

নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয়তা বিবেচনা করেই কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।

তিনি বলেন, নেতা নিবার্চনে যোগ্য ও কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যদের হাতেই নতুন নতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাদের কাছে তথ্য নিয়ে যাচাই বাছাই করেই নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এসম্পর্কে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সভায়ও আলোচনা হয়েছে। যাদের হাতে নতুন নেতৃত্ব এসেছে তারা নি:সন্দেহে ভালো ছেলে-সুশিক্ষিত ও সৎ সাহসী তরুণ যোগ্যদের হাতে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এসময় তিনি বলেন,যেকোন প্রয়োজনে সাদ্দাম-মারুফ পাশে আছি এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন একই সাথে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে ধন্যবাদও দেন।

এদিকে,নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য ১৪ জনের নতুন এ কমিটি অনুমোদন দেন।

নতুন কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে সদ্য বিলুপ্ত কক্সবাজার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মারুফ আদনানকে। তাদের সাথে আরো ১২ জনকে সহ-সভাপতি, যুগ্ন-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক করে এক বছরের জন্য কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। একই সাথে নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজ কমিটি অনুমোদনের প্যাড আপলোড করেন।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কক্সবাজার জেলা শাখার মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হল এবং সেই সাথে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে আগামী একবছরের জন্য নিম্নোক্ত কমিটি অনুমোদন দেওয়া হল-

নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে মো. মাইন উদ্দিন, কাইসার উল আলম মুন্না চৌধুরী, বোরহান উদ্দিন খোকন, নারিমা জাহানকে। যুগ্ম-সম্পাদকের পদ পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদুল হক, মো. শওকত হোসেন। সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়াসিফ কবির, কামরুজ্জামান হিরু, এহসানুল হক মিলন ও গাজী নাজমুল হক।

এদিকে, ঘোষিত কমিটির কপি হাতে পেয়ে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগকে গতিশীল ও সুসংগঠিত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন নব গঠিত কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান।

অপরদিকে, নতুন কমিটি স্বাগত জানিয়ে রাতে মিছিল করেছে নতুন সভাপতি সাদ্দাম ও সম্পাদক মারুফ। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেয়।

অপরদিকে, নতুন কমিটি ঘোষণা আসার পর এ কমিটিকে অবৈধ কমিটি অবহিত করে বয়কটের ঘোষনা দিয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসাইন তানিম। তাদের নামে ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে তারা দুজনই পৃথক ভাবে অবৈধ কমিটি উল্লেখ করে বয়কটের ঘোষণা আপলোড করেন।

এ আপলোডের পর সম্মেলন আহবানের তারিখ ঘোষণা চেয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদক বরাবর ফেসবুকেই আবেদন করেন সভাপতি জয় ও সম্পাদক তানিম।

এরপরই নতুন কমিটির বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দিয়ে শহরের প্রধান সড়কের ফজল মার্কেট ও হাজেরা শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে সাবেক সভাপতি-সম্পাদকের অনুসারীরা। এসময় তাদের একদলকে সশস্ত্র অবস্থায় মহড়া দিতে দেখাযায় বলে উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীরা। এতে আতংকিত হয়ে অনেকে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি মুনীর উল গীয়াস তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ায় পদবঞ্চিতরা হয়তো বিক্ষুব্ধ হয়ে টায়ার জ্বালিয়েছে। খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারিদের ধাওয়া দেয়। অস্ত্র নিয়ে মহড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে জেলা ছাত্রলীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের এক মাস পর ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি ইশতিয়াক আহমেদ জয়কে সভাপতি ও ইমরুল হাসান রাশেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষিত হয় কমিটি। সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যুগ্ম-সম্পাদক মোর্শেদ হোসেন তানিম।

এ কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কয়েকবার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের অসহযোগিতা আর অনিচ্ছায় সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজুয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ নির্দিষ্ট তারিখে সম্মেলন করতে ব্যর্থ হলে কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব থেকে শোভন-রাব্বানী অব্যাহতি নেয়ার কারণে সেবারও সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ২ নভেম্বর জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য।