শেষ হলো লেখক-পাঠকদের মিলন মেলা

শেষ হলো লেখক-পাঠকদের মিলন মেলা
শেষ হলো লেখক-পাঠক-প্রকাশক-দর্শনার্থীদের মিলনমেলা। গতকাল শনিবার মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিন মেলায় ছিল ভিড়।
এবারই প্রথম মেলায় বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন ড্যাফোডিল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না ইয়াসমিন।
মেলার শেষ দিন তার চোখে ঝরল পানি। মেলা শেষ, খুব মন খারাপ তামান্নার।
তিনি আমাদের দিনকে বলেন, ‘এবারই মেলায় প্রথম কাজ করেছি। শুরুর দিকে তেমন কাউকেই চিনতাম না।
পরে এখানে এসে অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব হয়েছে।
এখন বিদায়ক্ষণে মনে হচ্ছে কতদিন ধরে যেন মেলায় কাজ করছি। ভীষণ মায়া তৈরি হয়েছে। ’ শুধু তামান্না নয়, মেলার প্রাঙ্গণজুড়েই বেজেছে বিদায়ের সুর।
তবে এর উল্টোচিত্রও দেখা যায়। কেউ কেউ আনন্দ আর হইচই করে কাটিয়ে দিচ্ছেন মেলায় শেষ সন্ধ্যা। আবার কেউ কেউ বই উপহার দিচ্ছেন বন্ধুবান্ধব ও ছোটদের।
এর মধ্যে হুমায়ূন আজম রেওয়াজ নামে এক বইপ্রেমী পরিচিত অনেককেই উপহার দিয়েছেন বই। তিনি বলেন, ‘বই কিনতে, পড়তে এবং উপহার দিতে ভালো লাগে।
সব সময় হয়তো অর্থ সংকটের কারণে প্রচুর বই কেনা হয় না। তবে এবার মেলায় নিজের পছন্দের অনেক বই কিনেছি।
আমাকে অনেকে উপহার দিয়েছেন। আমিও অনেককে উপহার দিয়েছি। ’
এদিকে বই প্রকাশ এবং বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
পুরো মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।
গতবার বই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এবার বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ৫ শতাংশ। এর মধ্যে বাংলা একাডেমির নিজস্ব স্টলে বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই।
এবার নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ৪ হাজার ৯১৯টি। যা গতবারের চেয়ে ২৩৪টি বেশি।
এর মধ্যে ৭৫১টি নতুন বইকে মানসম্পন্ন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গতবার মানসম্পন্ন বই বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ১ হাজার ১৫১টি। গতকাল সন্ধ্যায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।
প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ছিল ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ, ২০১৬ সালে ৪০ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৫ সালে ২১ কোটি ৯৫ লাখ, ২০১৪ সালে সাড়ে ১০ কোটি এবং ২০১৩ সালে ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
এদিকে এবার বই বিক্রির পরিমাণ বাড়লেও সেটি মেলার পরিসর বাড়ার তুলনায় কম বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘এবার মেলার পরিসর বেড়েছে। তাই বই বিক্রি ১০০ কোটির বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা হয়নি। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি
ক্রির পরিমাণ মেলার পরিসরের তুলনায় কম। ’ বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী এবারের মেলায় নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ ৬৪৪, উপন্যাস ৭৩১, প্রবন্ধ ২৭১, কবিতা ১৫৮৫, গবেষণা, ১১২, ছড়া ১১১, শিশুতোষ ২০৩, জীবনী ১৪৯, রচনাবলি ৮, মুক্তিযুদ্ধ ১৫২, নাটক ৩৪, বিজ্ঞান ৮১, ভ্রমণ ৮৩, ইতিহাস ৯৬, রাজনীতি ১৩, চিকিৎসা-স্বাস্থ্য ৩৬, বঙ্গবন্ধু ১৪৪, রম্য ৪০, ধর্মীয় ২০, অনুবাদ ৫৬, অভিধান ১৪, সায়েন্স ফিকশন ৬৭, অন্যান্য ২৬৮টি।
গতকাল মেলার সমাপনী দিনে কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়াকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এর মধ্যে ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২০, শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত রচিত প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে, মঈনুস সুলতান রচিত জোহানেসবার্গের জার্নাল গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে এবং রফিকুন নবী রচিত স্মৃতির পথরেখা গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্সকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।
এ ছাড়া শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২০ এবং এবারের মেলায় নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযান (এক ইউনিট), কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড (২-৪ ইউনিট), বাংলা প্রকাশকে (প্যাভিলিয়ন) শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ দেওয়া হয়।
রাত ৮টায় সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন রূপা চক্রবর্তী ও হাসান আরিফ। সংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও খায়রুল আনাম শাকিল। সবশেষে ছিল লেজার শো।