নড়াইলে নদী ভাঙন রোধের কাজে খুশি এলাকাবাসী, আরও বরাদ্দের দাবি

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে বিলীন হয় নড়াইল জেলার নদীপাড়ের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামের বসতবাড়ি, পাকারাস্তা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এ বছরও নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। তবে যথাসময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থা গ্রহণে রক্ষা পেয়েছে অনেক বসতভিটা, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
তবে বরাদ্দ না থাকায় অনেক এলাকায় এখনও নদী ভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়নি। জরুরি কাজের বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।
নড়াইল জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা, মধুমতী ও চিত্রা নদীর দুই পাড়ের বেশ কিছু এলাকা প্রতিবছর বর্ষা ও বর্ষা পরবর্তী সময়ে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। বিশেষ করে কালিয়া উপজেলার উথালী, চরমধুপুর, লোহাগড়া উপজেলার ইতনা, শালনগর, কোটাখোল, জয়পুর, মৌলভীধানাইড়, শিয়েরবর, রামকান্তপুর, সদর উপজেলার রতডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছর নদীগর্ভে বিলীন হয় ফসলী জমি, বসতভিটা, রাস্তা ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ বছরের বর্ষাকালে তার ব্যতিক্রম হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নদী ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে জেলার বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও আকস্মিক কোন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিলে ভাঙন রোধে নেয়া হয় জরুরি ব্যবস্থা। তবে নড়াইলে যে পরিমাণ এলাকায় নদী ভাঙন হয়, পযাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় সকল এলাকায় নদী ভাঙন রোধে কাজ হয় না।
গত ১৮ আগস্ট নড়াইলের কালিয়া উপজেলার উথালী এলাকা পরিদর্শন করে জানা যায়, কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে উথালী এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। সংবাদ জানতে পেরে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। জরুরীভাবে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কারনে ভাঙন বন্ধ হয়ে রক্ষা পায় বসতভিটাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
নবগঙ্গা নদীর ভাঙন কবলিত উথালী গ্রামের বাসিন্দা পান্নু শেখ বলেন, “নদী ভাঙন শুরুর সাথে সাথে বালুর বস্তা ফেলায় নদী ভাঙন বন্ধ হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী খুব খুশি।”
উথালী গ্রামের শিলা বেগম বলেন, “বস্তা ফেলানোর কারণে নদী ভাঙন বন্ধ হয়েছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে নবগঙ্গা নদীতে এখন যে স্রোত তাতে এখানে স্থায়ী বাঁধ দেয়ার জন্য জোর দাবি করছি।”
“আধা ঘন্টার মধ্যে নদী ভাঙ্গনে আমার বাড়ির দুইটা ঘর এই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পর দিন থেকে সরকার জরুরি ভিত্তিতে কাজ করায় এখন নদী ভাঙ্গন বন্ধ হয়েছে। তবে আমরা এখনো আতংকে আছি। আমরা ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বাধ চাই”- এ কথা বলেন নদী পাড়ে বাসিন্দা সাকিরুন নেছা।
ভাঙ্গন কবলিত রতডাঙ্গা গ্রামের মো. সাহাবুদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আমাদের এলাকায় চিত্রা নদীতে ভাঙন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে কাজ করে দিয়েছে। এর ফলে নদীর ভাঙন রোধ হয়েছে। আমার বাড়িসহ আশেপাশের বড় এলাকা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নড়াইল জেলা আইনজীবি সমিতি সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. তারিকুজ্জামান লিটু বলেন, নড়াইল জেলার উপর দিয়ে যে সকল নদী বয়ে গেছে বর্ষা মৌসুমে সেগুলোতে ভাঙন দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে সে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। অনেক সময় নদী ভাঙনের কথা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হলেও বরাদ্দ না থাকার ব্যবস্থা নিতে পারে না। এজন্য জরুরি কাজের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো জরিপ করে ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
তিনি বলেন, নড়াইল জেলার অনেক এলাকায় এখনো নদী তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেগুলোতে দ্রুত ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, প্রতি বছরই নদীর স্রোতে নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমাদের সীমিত ও বাজেটের মধ্য আমরা সব সময়ই সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করি। একই সাথে সাথে কাজের মান নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী টিম সব সময় বিষয়টি মনিটরিং করছে। মানের ক্ষেত্রে আমরা কোন আপোষ করি না।
তিনি আরো বলেন, স্থায়ী কাজের জন্য আমরা ভাঙন কবলিত স্থানের স্পেসিফিক ডিজাইন অনুযায়ী বরাদ্দের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।