আওয়ামীলীগের দুর্গ দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি, নিস্ক্রিয় জামায়াত

সংখ্যালঘু এলাকা হিসেবে নামে খ্যাত নাসিরনগর। এক সময়ে জাতীয় পার্টি, পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত ১৩ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নাসিরনগর উপজেলা। সংখ্যালঘুদের দিকে এবার সব দলের নজর। আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ সংসদীয় ২৪৩ নাসিরনগর আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি এন পি থেকে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা হলেন, জেলা বি এন পির সহ সভাপতি ও জেলা বারের দুই বারের নির্বাচিত সভাপতি এডঃ এ কে এম কামরুজ্জামান মামুন, জেলা বি এন পির সাংস্কৃতিক বিষয় সম্পাদক মোঃ সফিকুল ইসলাম (এল এল বি,) উপজেলা বি এন পির সভাপতি ও গোর্কণ ইউনিয়নের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এম এ হান্নান, সাধারণ সম্পাদক কে এম বশীর উদ্দিন তুহিন, উপজেলা বি এন পির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বারের অতিরিক্ত পিপি এডঃ আলী আজম চৌধুরী।সাবেক ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা অধ্যক্ষ, লেখক, সাংবাদিক মনোবিজ্ঞানী ও নাসিরনগর উপজেলার সাবেক সহ সভাপতি প্রিন্সিপাল এম এ মোনায়েম। জেলা বি,এন পির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ চৌধুরী সামসুল হক কিবরিয়া,যুক্তরাজ্য বি,এন,পি নেতা মোঃ মনিরুল ইসলাম টিটু।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ থেকে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা সাইফুলাহ বিন আনসারী।
জাতীয় নাগরিক কমিটি(এন,সি,পি) থেকে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন মোঃ আসাদুজ্জামান খোকন ও দলীয় নেতাকর্মীরা
অপরদিকে আলোচনা রয়েছেন বি,এন,পি থেকে বহিস্কৃত নেতা আলহাজ্ব সৈয়দ একরামুজ্জামান আবারো দলে ফিরতে পারেন।তিনি দলীয় মনোনয় না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হসেবে নির্বাচন করবে বলে গুঞ্জন রয়েছেন।
এবিষয়ে জেলা বি,এন,পির সহ সভাপতি এডঃ কামরুজ্জামান মামুন বলেন, দল থেকে বহিস্কৃত নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে দল দেউলিয়াপনা হয়ে যাবে এবং বি,এন,পির তৃণমুলের বি,এন পির নেতাকর্মীরা কেউ তাকে মেনে নিবে না।
সৈয়দ একরামুজ্জামান সম্পর্কে উপজেলা বি.এন.পির সাধারণ সম্পাদক কে.এম বশির উদ্দিন তুহিন বলেন আওয়ামীলীগের হাত ধরেই সৈয়দ একরামুজ্জামানের নাসিরনগর রাজনীতিতে আগমন। পরবর্তীতে তিনি যখন বি.এস.পির সভাপতি প্রয়াত মন্ত্রী ছায়েদুল হকের অবর্তমানে উপনির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টিকে সমর্থন করেন। ২০০৪ সালে নির্বাচনে বি.এন.পি থেকে বহিষ্কারের পর তিনি সতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে রাতের ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরেই তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। টঙ্গিপাড়া গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে পূষ্প মাল্য অপন করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভূমি দস্যু এমপি ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীরর হাত ধরে জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। দলের প্রতি তার কোন ভালবাসা নেই। তার ইচ্ছা এমপি নির্বাচিত হওয়া। বশির উদ্দিন তুহিন আরো বলেন বর্তমানে নাসিরনগর উপজেলা বি.এন.পি অনেক শক্তিশালী। বি.এন.পি বা দল থাকে মনোনয়ন দিবে না। সে যদি সতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে, তাহলে নাসিরনগরের জনগন থাকে বর্জন করবে।
উল্লেখিত নেতারা রমজান থেকেই বিভিন্ন স্থানে মিছিল মিটিং সভা সমাবেশ,ও নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। রমজানে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কর্মী সমাবেশ শেষে পরে সব ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলা সদরেও বিরাট এক সমাবেশ করেছেন সভাপতি এম এ হান্নানের নেত্রীত্বে। তবে তাদের প্রচার প্রচারনায় এম এ হান্নান ও কামরুজ্জামান মামুন এগিয়ে রয়েছেন বলে বি এন পির একাধিক নেতাকর্মী সুত্রে জানিয়েছেন। জানা গেছে পাঁচ প্রার্থীর মাঝে তিন জনই কারা নির্যাতিত নেতা। তারা আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমায় দীর্ঘদিন কারাভোগ ও করেছেন।
তবে নাসিরনগর বি এন পি দুই ভাগে বিভক্ত। একভাগে উপজেলা বি এন পির সভাপতি এম এ হান্নান ও সাংগঠনিক সম্পাদক এডঃ আলী আজম চৌধুরী। অপর দিকে রয়েছে জেলা বি এন পির সহ সভাপতি ও জেলা বারের সভাপতি এডঃ কামরুজ্জামান মামুন। দীর্ঘদিন ধরে তারা দুই গ্রুফ যার যার মত করে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বাধীনতার পর নাসিরনগর আসন থেকে বি, এন পির কোন প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি।
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ১৯৭০ সালে সরাইল নাসিরনগর আসনে আওয়ামী লীগ থেকে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এডঃ সায়েদুল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮৬ সালে মোজাম্মেল হক কাপ্তান মিয়া (ন্যাপ) থেকে পরে আবারো ১৯৮৮ সালে মোজাম্মেল হক কাপ্তান মিয়া(জাতীয় পার্টি) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯১ সালে সৈয়দ মোর্শে কামাল(জাতীয় পার্টি)ও ১৯৯৬ সালে সাফি মাহমুদ(স্বতন্ত্র)। থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে এড. ছায়েদুল হক(আওয়ামী লীগ),২০০১ সালে ছায়েদুল হক(আওয়ামী লীগ),২০০৮ সালে ছায়েদুল হক(আওয়ামী লীগ), ২০১৪ সালে ছায়েদুল হক(আওয়ামী লীগ), ২০১৮(উপ-নির্বাচন) ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম(আওয়ামী লীগ), ২০১৮সালে ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম(আওয়ামী লীগ), ২০২৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আলহাজ্ব এসল কে একরামুজ্জামান।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এন,সি,পি) থেকে এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। তবে তারা প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা বিভিন্ন হাটে বাজারে, রাস্তাঘাটে সভা সমাবেশ ও উঠান বৈটক চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ থেকে দলীয় ভাবে নাসিরনগর সরকারী কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, জামাতের সুরা সদস্য ও উপজেলা জামায়াতের আমীর এ কে এম আমিনুল ইসলামের নাম ঘোষনা করেছেন।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি থেকে মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক। নির্বাহী সভাপতি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। একমাত্র ইসলামী দল বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি যারা ২০২০ সন থেকে বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের শুরু থেকেই অংশগ্রহণ করেছে। এখনো বিএনপির সাথে জোটে রয়েছে দলটি। মাওলানা আশরাফুল হক মনে করেন, আগামী দিনে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। যারা শুধু ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের কথা বলে এটা সাম্রাজ্যবাদী বিদেশিদের একটি ষড়যন্ত্র। জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ইসলামী দলগুলোর লড়াই লাগিয়ে দেশকে তারা পিছিয়ে দিতে চায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।