ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে জবি সাংবাদিক সমিতিতে মারামারি


১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:৫৯

আপডেট:
১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪:০৬

লতিফুল ইসলাম,আহসান জোবায়ের,হুমায়ুন কবির হিমু

চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মারামারি করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জবিসাস) বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি। বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ ঘটনা ঘটে। জবিসাসের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে তার ওপর আক্রমণ করেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আহসান জোবায়ের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলাম ও তাদের সহযোগীরা।

এরপর কয়েকজন মিলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিয়ে হিমুর মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। তখন হিমু দৌড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে প্রবেশ করেন। এরপর প্রক্টর জোবায়েরকে অফিসে নিয়ে আসতে এক সহকারী প্রক্টরকে পাঠালেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরক্ষণেই প্রক্টর অফিসে প্রবেশ করেন জোবায়েরের সহযোগী হিসেবে পরিচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলাম ও অন্যান্য সহযোগীরা।

প্রক্টর দুপক্ষের অভিযোগ জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির হিমু জানান, অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর হঠাৎ এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আহসান জোবায়ের ও তার সহযোগীরা। এরপর লতিফ ও জোবায়ের তাকে মারধর করে তার মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে নেয়।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলাম জানান, আমরা তার ওপর কোনো আক্রমণ বা আঘাত করিনি। বরং তিনিই জোবায়েরকে মারধর করে রক্তাক্ত করেছেন এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হুমায়ুন সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালে স্মরণিকা প্রকাশের জন্য মানামি এবং বিভিন্ন স্বর্ণের দোকান থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা সাংবাদিক সমিতির নাম করে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু স্মরণিকাও প্রকাশ করেননি, হিসাবও দেননি। মানামি এবং অন্যান্য বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে ফোন দিয়ে টাকা ফেরত চায়। অথচ তৎকালীন সময়ে আমি সাধারণ সম্পাদক থাকলেও টাকার ব্যাপারে আমাকে এবং অর্থ সম্পাদকসহ কমিটির অন্য কাউকে জানানো হয়নি। আমরা ওই টাকার হিসাব চাইলে তিনি জোবায়েরকে ধাক্কা দেন। আমার গায়েও হাত তোলেন। পরে জোবায়েরকে মারধর করেন।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইলাল হয়েছে,সেখানে দেখা যায়, বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে জবিসাসের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে তার ওপর আক্রমণ করেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আহসান জোবায়ের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলাম ও তাদের সহযোগীরা এবং তার মোবাইল মানিব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে।

পরক্ষণেই হিমু প্রতিবাদ করে বলে ওঠেন, লতিফ মিথ্যাচার করছে। আমি কোনো হামলা বা মারধর করিনি। বরং সবাই মিলে আমাকে মেরেছে। আর টাকার ব্যাপারে সবাই অবগত আছে এবং ওই টাকা দিয়ে ট্যুর করে এসেছে। বরং লতিফ সদরঘাটসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সমিতির নাম ভাঙিয়ে অনেক টাকার চাঁদাবাজি করেছে, যেগুলোর হিসাব এখনও দেয়নি। আর কিছুদিন আগে সাবেক নেতা সোহেল ভাইকেও টিএসসিতে মেরেছে জোবায়ের।

পরে বর্তমান সভাপতি রবিউল আলম প্রক্টর অফিসে প্রবেশ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য নিজেরাই ঘরোয়াভাবে সমিতির অফিসে বসে সমাধানের প্রস্তাব দেন। হুমায়ুন বারবার সমিতির অফিসে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও প্রক্টরের নির্দেশে সেখানে যান। তবে আগে কেড়ে নেয়া মোবাইল ও মানিব্যাগ ফেরত চান। মানিব্যাগে ২০ হাজার টাকা আছে বলেও তিনি জানান।

এ সময় এক সহকারী প্রক্টর বলেন, সাংবাদিক সমিতির ইতিহাস তো ভালো নয়। তারা কিছুদিন পরপরই সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের মারধর করে এবং গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। দেখা যাবে বর্তমান সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সাবেক হয়ে গেলে তাদেরও জুনিয়ররা পেটাবে। যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যায় তাদের কোনোভাবেই কোনো সংগঠনের অফিসে প্রবেশে করতে দেয়া যাবে না। প্রক্টর অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে।

এ সময় আরেক সহকারী প্রক্টর বলেন, সাংবাদিকতা করবে নম্র, ভদ্র, বিবেকবান ও মেধাবী মানুষ। এমন উগ্র ও উচ্ছৃঙ্খল মানুষ সাংবাদিকতা করে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানি করে। এদের কোনোভাবেই সুযোগ দেয়া উচিত নয়।

জোবায়েরকে মেরে রক্তাক্ত করার অভিযোগ করলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং সেখানে যায়নি বলেও জানান সহকারী প্রক্টর গৌতম কুমার সাহা।

এছাড়াও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আহসান জোবায়ের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলাম ও তাদের সহযোগীরদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের আশে পাশে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, যেহেতু তারা সাবেক শিক্ষার্থী। হুমায়ুন ও লতিফ কারোরই ছাত্রত্ব নেই, তাই আমরা চাইলেই তার সমাধান করতে পারি না। এটা থানা পুলিশের ব্যাপার। আর বিবৃতির মধ্যে উঠে এসেছে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার কথা। যেটাও থানা-পুলিশের দেখার বিষয়। তারা নিজেরাই আলোচনা করে সমাধান করবে বলে আমার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে। তাই বিষয়টি তাদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছি এবং তদারকির জন্য চারজন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব দিয়েছি। এরপরও সমাধান না হলে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।