ঢাকা সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১


হাবিপ্রবিতে ওরিয়েনটেশন মঞ্চ ভাঙচুর, প্রশাসনিক ভবনে ছাত্রলীগের তালা


২৮ জানুয়ারী ২০২০ ০১:৩৮

আপডেট:
১৩ মে ২০২৪ ০৬:৫১

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ২০২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিভিন্ন দাবি আদায় না হওয়ায় এমন কাণ্ড ঘটিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির।

এদিকে শত শত নবীন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ওরিয়েনটেশনের জন্য ক্যাম্পাসে আসলেও ফিরে যেতে হয়েছে।

গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ অনুষ্ঠানের জন্য মাঠে তৈরি করা মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ। ছাত্রলীগের বাধার মুখে ওরিয়েনটেশন বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর আগে ভর্তি নির্দেশিকায় নবীনবরণ অনুষ্ঠানের কথা গত ১৯ জানুয়ারি করার উল্লেখ থাকলেও তা পিছিয়ে ২৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়।

গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কাসেম ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. ফজলুল হক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ওরিয়েনটেশন পেছানো হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

তবে নির্ধারিত আসনসংখ্যা পূরণ না হওয়ায় ৮ দিন পেছানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপের মধ্যে একটি গ্রুপ ১৩ দফা এবং আরেকটি গ্রুপ ১১ দফা দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছে।

এই দাবি আদায় না হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেবে না মর্মে একটি বিক্ষোভ মিছিলও বের করে ছাত্রলীগের একাংশ।

অপরদিকে গত কয়েক দিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পর্যায়োন্নয়ন নীতিমালার বিষয়ে রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক গঠিত কমিটির সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে কলম বিরতিসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে কর্মকর্তারা।

নাটোর থেকে মেয়েকে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছেন মো. ইব্রাহিম খলিল। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনে মেয়েকে নিয়ে এসেছি নাটোর থেকে। সারা রাত কষ্ট করার পর সকালে যখন ক্যাম্পাসে এসে দেখি ওরিয়েনটেশন হচ্ছে না তখন অবাক হয়ে গেছি। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি কাম্য করিনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব দাবি কিংবা ওরিয়েনটেশন কোনো বিষয় না। মূল বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া। তবে গত রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের নোটিশে কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্রার্থীর তুলনায় খুবই অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেই এত আন্দোলন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের ছাত্রলীগ নেতা রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিয়োগের সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমরা ১৩ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমাদের দাবির বিষয়ে যে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম প্রশাসন সেই বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। এ জন্যই আমরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই আন্দোলনে নেমেছি।’

ছাত্রলীগের আরেকাংশের নেতা পল্পব হোসেন রাঙা বলেন, ‘আমরা আমাদের ১১ দফা দাবি আদায়ের জন্যই আন্দোলনে নেমেছি। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত কয়েক দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ভালো না। আজকে (সোমবার) শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছে। আমাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা এসব বাধার মুখে ওরিয়েনটেশন বাতিল ঘোষণা করেছি। তবে যৌথভাবে ওরিয়েনটেশন না হলেও বিভাগ অনুযায়ী ওরিয়েনটেশন হবে।

‘শিক্ষার্থীরা যে দাবি জানিয়েছে তাদের যেগুলো যৌক্তিক দাবি এবং অল্প সময়ে সমাধান করা যাবে সেগুলো সমাধান করা হবে’ বলেন তিনি।