আধিপত্যের দ্বন্দ্বে খুন আ.লীগ নেতা টিপু

মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, হামলাকারীর গুলিবর্ষণের ধরন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, ফুটপ্রিন্ট, আলামত এবং পারিপার্শিক তথ্যসংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে এমন ধারণায় পৌঁছেছেন। স্বজন, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতারাও মনে করছেন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং দলীয় কোন্দলের কারণেই টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টিপু হত্যার নেপথ্যে কেউ কলকাঠি নেড়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গতকাল শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
গতকাল তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা, নিহত টিপুর স্ত্রী ও স্বজন এবং আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মতিঝিল এলাকার একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে দেশ রূপান্তরের। তারা জানান, মতিঝিল এলাকার ঠিকাদারি, টেন্ডার বাণিজ্য ও ফুটপাতের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল আওয়ামী লীগ নেতা টিপুর। যার জেরে চার-পাঁচ দিন আগে মোবাইল ফোনে কল করে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এজিবি কলোনি থেকে মাইক্রোবাসে চড়ে বাসায় ফেরার পথে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকার ব্যস্ত সড়কে আওয়ামী লীগ নেতা টিপুর ওপর হামলা হয়। মাস্ক ও হেলমেট পরা এক অস্ত্রধারীর মুহুর্মুহু গুলিতে গাড়ির সিটেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অস্ত্রধারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে টিপুর মাইক্রোবাসের চালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পাশের রিকশা আরোহী সরকারি বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতিও একই অস্ত্রধারীর ছোড়া গুলিতে নিহত হন। এই জোড়া খুনের ঘটনায় পুলিশ, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তদন্ত শুরু করেছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশপাশের বিভিন্ন ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে খুনিকে শনাক্তের চেষ্টা করছেন তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ জানান, প্রাথমিক তদন্তে একজন অস্ত্রধারীর তথ্য পাওয়া গেছে, যিনি মোটরসাইকেলে চড়ে এসে হেলমেট পরা অবস্থায় টিপুকে লক্ষ্য করে অন্তত ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়েন, তার ৯ রাউন্ডই টিপুর শরীরে বিদ্ধ হয়েছে। বাকি গুলি টিপুর গাড়িচালক ও রিকশা আরোহী কলেজছাত্রী প্রীতির শরীর এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল আহাদ বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। কারা কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। আশা করছি শিগগিরই খুনি শনাক্ত ও খুনের কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।’
আধিপত্য বিস্তার ও দলীয় কোন্দলের জেরে খুন: আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মতিঝিল এলাকার একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপু দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকলেও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অনেকের সঙ্গেই বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এই বিরোধের অন্যতম দুটি কারণ ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো এবং ক্রীড়া ভবনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডারবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ। এ ছাড়া স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলির কাউন্সিলর পদের সূত্র ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। এতে অনেকের সঙ্গেই তার দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। অন্যদিকে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা ক্যাসিনোকাণ্ডে একাধিক প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নয়া মেরুকরণ হয়। নতুন প্রেক্ষাপটে জাহিদুল ইসলাম টিপু একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালান। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি কারাবন্দি যুবলীগ নেতারা।
ক্রীড়া ভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ নেন টিপু। এতে অনেকেই তার ওপর নাখোশ ছিলেন। এ ছাড়া কারাবন্দি এক যুবলীগ নেতার সঙ্গে টিপুর দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিল। প্রায় এক দশক আগে ২০১৩ সালে গুলশানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহারে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক টিপুর নাম ছিল। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন তিনি। যদিও আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) তার নাম আসেনি। টিপু খুনের নেপথ্যে এসব সমীকরণ কাজ করতে পারে বলে স্থানীয় নেতারা ধারণা করছেন।
নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর। স্বামী খুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্বামী ভালো মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে কারও কোনো বিবাদ ছিল না। কারা, কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে স্বামী হত্যার ঘটনায় গতকাল সকালে শাহজাহানপুর থানায় করা মামলার এজাহারে টিপুর দলীয় কোন্দলের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন ফারহানা ইসলাম ডলি। এজাহারে তিনি লিখেছেন, ‘আমার স্বামী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। ১০ বছর ধরে বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দলীয় কোন্দল ছিল। চার-পাঁচ দিন আগে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী আমার স্বামীকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেয়।’ ডলির ধারণা এই ফোন কলের হুমকির সঙ্গে টিপু হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র আছে।
শাহজাহানপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. জাফর বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলির হত্যা মামলার তদন্তে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। হত্যার নেপথ্যে থাকা সম্ভাব্য সব কারণ সামনে রেখে খুনি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
নিহত টিপুর স্বজনরা জানান, টিপু দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। শান্তিনগরের অফিস, শাহজাহানপুর বাগিচার বাসা ও এজিবি কলোনি ছাড়া অন্য কোথাও তিনি যেতেন না। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতেও গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না মাইক্রোবাস নিয়ে টিপুর নিজের রেস্তোরাঁ গ্র্যান্ড সুলতানে যাওয়ার জন্য রওনা হন। মতিঝিল এজিবি কলোনিতে গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্টে কাজ শেষ করে শাহজাহানপুর বাগিচার বাসায় যাওয়ার পথে রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর আমতলার মানামা ভবনে বাটার দোকানের সামনে হামলার শিকার হন টিপু।
টিপু হত্যাকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য র্যাবের কাছে : গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অনাকাক্সিক্ষত এ ধরনের গুলির ঘটনায় ইতোপূর্বেও র্যাব গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুত সময়ে তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। টিপু হত্যার ঘটনায়ও হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, টিপু খুনের ঘটনায় আমরা বেশ কিছু ফুটপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছি। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। বেশ কিছু মোটিভও আমরা হাতে পেয়েছি। সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। ঘটনায় শুটারদের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে শনাক্তের চেষ্টা করছি। র্যাব ছাড়াও সিআইডি, থানা পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম কাজ করছে। আমি মনে করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার মোটিভ উন্মোচন ও শুটারদের শনাক্ত করে আইনের হাতে সোপর্দ করা সম্ভব হবে।
টিপুর শরীরে ৯ গুলি : মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, টিপুর গলার ডান পাশে, বুকের বাম পাশে, বুকের বাম পাশের বগলের কাছাকাছি, পেটের মধ্যে নাভির নিচে, বাম কাঁধের ওপরে, পিঠের বাম পাশের মাঝামাঝি স্থানে, পিঠের বাম পাশের কোমর বরাবর, পিঠের ডান পাশের কোমরের ওপরসহ অন্তত ৯ জায়গায় গুলি বিদ্ধ হয়। নিহত টিপুর স্বজন মেরাজউদ্দিন মেরাজ বলেন, ‘আমার ভাইসহ চারজন একটি গাড়িতে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় পৌঁছামাত্র দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় গাড়ির ভেতরে থাকা চালকসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হন। একজন রিকশা আরোহীও গুলিবিদ্ধ হন।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাত ১০টা ২২ মিনিটে টিপু একটি সাদা রঙের নোয়াহ মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা মসজিদের সামনে থেকে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের দিকে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি সাউথইস্ট ব্যাংকের সামনে জ্যামে আটকা পড়ে। ওদিকে বিপরীত দিকের রাস্তায় দুই যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। টিপুর গাড়িটি জ্যামে আটকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হেলমেটধারী দুই যুবকের একজন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে টিপুর গাড়ির দিকে ছুটে আসেন। এরপর গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এতে গাড়ির ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হন টিপু। এ সময় চালকের হাতে গুলি লাগলে তিনি গাড়ির গতি বাড়িয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওদিকে শুরুর দিকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতি। ঘটনার পরপরই আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, গাড়িতে টিপুসহ মোট চারজন ছিলেন। গাড়িচালক মুন্নার পাশের সিটে বসা ছিলেন টিপু। আর পেছনের সিটে ছিলেন মিরাজ ও কালাম নামে দুই ব্যক্তি। তবে তারা দুজন অক্ষত আছেন। স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে ঢামেকে আনলে চিকিৎসক রাত ১১টার দিকে টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।
৯০ সেকেন্ডে ১২ রাউন্ড গুলি করে পালায় খুনি : ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মাত্র ৯০ সেকেন্ডের মধ্যেই মাস্ক ও হেলমেট পরিহিত হামলাকারী মোটরসাইকেল থেকে নেমে টিপুকে বহনকারী গাড়ির কাছাকাছি এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। অন্তত ১২ রাউন্ড গুলি করে ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে শাহজাহানপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ঠাকুর দাশ বলেন, খুবই অল্প সময়ে অস্ত্রধারী গুলি করে পালিয়ে যায়।
গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে উপস্থিত টিপুর বন্ধু মো. মিজানুর রহমান মিরাজ সাংবাদিকদের জানান, তিনি ঘটনার সময় টিপুর গাড়িতে ছিলেন। তার কাছে মনে হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যেই হত্যাকারী এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। তারপর রাস্তা থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘এজিবি কলোনি থেকে রওনা হয়ে শাহজাহানপুর আমতলীর ঘটনাস্থলে আসতে ৮-১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। ওই সময় জাহিদুল ইসলাম টিপু চালকের পাশে সামনের সিটে বসে একটি সিগারেট ধরিয়েছিলেন। যানজটের কারণে গাড়ি থেমে গেলে হামলাকারী হেঁটে গাড়ির কাছে এসে গুলি করতে থাকে। গুলি লাগার পর টিপু কোনো কথা বলেননি। গুলি লাগার পর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি গাড়ির সিটে লুটিয়ে পড়েন। টিপু ভাই চালকের পাশে বসা ছিলেন, আমরা পেছনে ছিলাম দুইজন। শুধু বৃষ্টির মতো গুলি আসছিল, আমরা কিছু বুঝতে পারেনি, কাউকে চিনতেও পারেনি। গুলি গ্লাস ভেদ করে জাহিদুলকে বিদ্ধ করে। এ সময় গাড়ির চালক মুন্নার হাতেও গুলি লাগে। তখন মুন্না এক হাতে গাড়ি চালিয়ে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে যায়, পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসি।’
গতকাল জুমার নামাজের পর মতিঝিল এজিবি কলোনি মাঠে জানাজা শেষে টিপুর মরদেহ ফেনীর ফতেপুর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। টিপুর দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
টিপু খুনের নেপথ্যে কেউ কলকাঠি নেড়ে থাকলে ব্যবস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং খুনিদের দ্রুত ধরা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘টিপু খুনের ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। একই ঘটনায় গুলিতে কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতরা যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ঘটনায় নেপথ্যে থেকে যদি কেউ কলকাঠি নেড়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জড়িতদের গ্রেপ্তার ও হত্যার রহস্য উন্মোচনে র্যাব ও ডিবি পুলিশসহ কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’