অন্যের বাড়িতে আশ্রিত সাংবাদিক পরিবার; অর্থাভাবে শেষ হচ্ছেনা প্রবাসীর দানে প্রাপ্ত বাড়িতে ঘর নির্মানের কাজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু সাংবাদিক, সাহিত্যিক,কলামিষ্ট গবেষকসহ নানামুখি প্রতিভায় সমন্নিত ও পরিচ্ছন্ন ব্যাক্তিত্ব আবেদুর আর শাহীন । মহাসড়ক সম্প্রসারনের কারনে উচ্ছেদ হয়ে গেছে মাথা গোঁজার আশ্রয় টিন শেড ঘরটি। এক প্রবাসী দান করেছেন ২৫ লক্ষ টাকা মুল্যের আড়াই শতক জায়গা,সংসদ সদস্যসহ এলাকাবাসীর সহায়তায় ঘরতৈরীর কাজ শুরু হলেও তাদের উদ্যেমে ভাটা পড়ায় অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ঘরের কাজ।বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত জীবন পার করছেন প্রথিতযশা্ পঙ্গু এই কলম সৈনিক।
দৈনিক ইত্তেফাকের খ্যাতিমান সাংবাদিক প্রয়াত পীরজাদা আফজালুর রহমানের ছেলে সাংবাদিক আবেদুর আর শাহীন।তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক মানবজমিন,দৈনিক ভোরের ডাক. দৈনিক ইনকিলাব,দৈনিক যায়যায় দিন ,দৈনিক জনকন্ঠ ,দৈনিক জনতাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদক ,সাব এডিটর, প্রতিনিধি ইত্যদি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সুনামের সাথে। তাঁর কলাম পড়ে বিমোহিত হয়েছেন কোটি পাঠক,নড়েচড়ে বসেছেন রাষ্টের কর্তাব্যাক্তিরা। ২০০২ সালে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার উপ সম্পাদকীয় কলামে ”পুলিশ কবে মানুষ হবে” শিরোনামে লেখাটি সাড়া ফেলেছিল দেশজুড়ে,যা আজও সযত্নে সংরক্ষন করা আছে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে । ম্যাগাজিন অনুষ্টান ইত্যাদির গবেষনা টিমের সদস্য আবেদুর আর শাহীন।সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন ব্যাক্তি প্রতিষ্টান তাঁকে সন্মানীত করেছেন একাধিকবার।দেশজুড়ে খ্যাতি আছে এই সাংবাদিক পরিবারের কিন্তু বাবা-ছেলে দুজনেই চরম উদাসীন ছিলেন নিজ পরিবারের সুখ সাচ্ছন্দ ও নিরাপত্তার প্রশ্নে। ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার বাড়িউড়া নামক গ্রামে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশ্ববর্তী সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় টিনশেড ঘর তুলে থাকতেন তারা। কয়েক বছর আগে মহাসড়ক সম্প্রসারনের কাজ শুরু হলে বাড়ি ছেড়ে দিতে হয় তাদের শুরু হয় আশ্রিত ও ভাসমান জীবন ।
২০২০ সালের ২৭ মে পেশাগত প্রয়োজনে যাতায়াতের সময় সড়ক দৃর্ঘটায় আহত হয়ে বাম পায়ের ৩টি হাড় ভেঙ্গে পঙ্গু হয়ে যান শাহীন।জীবনে শুরু হয় দু:খ-দুর্দশার নতুন অধ্যায়।উপার্জনহীন পরিবারের সামনে এসে দাড়ায় আহত শাহীন, বৃদ্ধ পিতার বিশাল চিকৎসা খরচ ও পরিবারের ভরন-পোষনের দায়িত্ব।প্রিন্ট, ইলেকট্রিনিক ও বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ার ছড়িযে পড়ে সাংবাদিক পরিবারের অবর্ণনীয় দুর্দশার কাহিনী। সহকর্মী সাংবাদিক,প্রবাসী,জনপ্রতিনিধি ও এলাকার সচেতন লোকজন এগিযে আসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক লন্ডন প্রবাসী২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে সরাইল সদরের আলী নগরে কিনে দেন ২.৫ শতাংশ বাড়ির জায়গা।
ব্রাহ্মনবাড়িয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা স্থানীয় সুধীজনদের ডেকে বলেন,” পরিচ্ছন্ন,সৎ ও শিক্ষিত সাংবাদিক আবেদুর আর শাহীনকে জনৈক প্রবাসী মাথাগুঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। এখন আমরা সবাই মিলে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জীবনের বাকী সময় অতিক্রান্ত করতে একটা ঘর নির্মান করে দিতে চাই।” এমপি মহোদয়ের এই ঘোষনার পরএগিয়ে আসেন অনেকেই, শুরু হয় ঘর তৈরীর কাজ কিন্তু ঘরের দেয়াল নির্মানের পর ছাদ করার আগেই ভাটা পড়ে যায় তাদের উৎসাহে, টাকার যোগান না থাকায় ৩ বছর যাবত বন্ধ হয়ে আছে ঘরের কাজ । অবসান হচ্ছেনা সাংবাদিক পরিবারটির যাযাবর জীবনের, এখনো তাদের রাত কাটে এ বাড়ির পরিত্যাক্ত ঘর আর ও বাড়ির অব্যবহৃত বারান্ধায়। এক ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানের জনক আবেদুর আর শাহীন অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে ” দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা’কে বলেন ”আমার মা ১৯৮১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তার সর্বকনিষ্ট সন্তান প্রসব করে যেদিন মৃত্যোর কোলে ঢলে পড়েন, তার আগের দিন… পেশাগত কাজে আমার বাবা ঢাকাস্থ দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে থাকায় মুত্যের সময়ে কাছে থাকতে না পেরে তিনি লিখছিলেন ” আমি এক ব্যর্থ সাংবাদিক“ ।
কিন্তু জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়ে মানবিক মনের মানুষদের ভালোবাসায় যেভাবে সিক্ত হয়েছি, তাতে সানন্দে সাগ্রহে বলতেই পারি, আমি এক সফল সাংবাদিক। ” এলাকার সচেতন ও সুধী সমাজ মনে করেন, গৃহহীন এই সাংবাদিক পরিবারটির অসমাপ্ত ঘরের কাজ সমাপ্ত করনের জন্য সরকারের সংস্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দেশের বিত্তবানদের মানবিক ও অর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন ।