ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


বিতর্কের মধ্যেও ঢামেকে কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নির্বাচন


৩ মার্চ ২০২২ ১১:২৮

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৩

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নির্বাচন বৃহস্পতিবার। এ নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। হাসপাতাল ছাড়িয়ে বিতর্ক গড়িয়েছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারী ইউনিয়নে। অভিযোগ উঠেছে, সংগঠনের নেতারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ৩৫০ জনের ভোটার তালিকায় আশিজনের মতো অবসরপ্রাপ্ত ও পিআরএলে যাওয়া কর্মচারীকে রেখেছেন। অথচ চাকরিতে বহাল না এমন কর্মচারীরা ভোটার হয়ে ভোট দিতে পারবেন না এমন নিয়মই দীর্ঘদিন ধরে চালু ছিল।

বিগত নির্বাচনগুলোতে তাদের ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু চলতি নির্বাচনকে ঘিরে নেতারা আচমকা সংগঠনের গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন এনে এমন কাজ করেছেন। তাই হাসপাতালটির সাধারণ ভোটার ও অন্যদের মধ্যে এখন নানা রকম প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনও এ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

২০২১ সালের ৩০শে অক্টোবর তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এসএম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান খান স্বাক্ষরিত সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার এক চিঠিতে বলা হয় অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের আজীবন সদস্য ও ভোটাধিকার প্রয়োগের আবেদনের প্রেক্ষিতে সর্বসম্মতিতে তাদের আজীবন ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২ হাজার টাকা ফি প্রদান করে অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ সদস্য আজীবন সদস্য হতে পারবেন। তবে সমিতির কার্য নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান খান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অবসর ও পিএলআরে গেছেন এমন ৮০ জনকে ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ভোটের মাধ্যমে গঠতন্ত্র পরিবর্তন করে তাদেরকে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্তদের সম্মান দিয়ে এটি করা হয়েছে। যারা অবসরে বা পিএলআরে গেছে তারা সবাই কাছের মানুষ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি এই সংগঠনে আছি। তাই একটি সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই।

হাসপাতালসূত্রগুলো বলছে, সিনিয়র নেতাদের এ ধরনের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোটাররা। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা সংগঠনটিতে অবসরপ্রাপ্ত ভোটারদের ভোট দেয়ার সুযোগ না থাকলেও এখন কেন এমনটি করা হয়েছে। এরকম প্রশ্ন এখন ভোটারদের মধ্যে। এছাড়া হাসপাতালের অন্যান্য সংগঠনের নেতারাও চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন এটি নজিরবিহীন ঘটনা। নিশ্চই এর পেছনে বড় উদ্দেশ্য আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনের একজন ভোটার বলেন, এবারই প্রথম অবসরপ্রাপ্তদের ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এর আগে কখনও এরকম ছিল না। অবসরপ্রাপ্তদের তালিকায় রাখার জন্য সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা হয়েছে। হঠাৎ করে কেন এরকম করা হলো সেটি আমি জানি না। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমালোচনা চলছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা বিষয়টি জানেন। তবে অজানা কারণে তারা মুখ বন্ধ করে আছেন। গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে তারা চুপ করে আছেন। সিনিয়র আরেক সদস্য বলেন, হয়তো কোনও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এতে জড়িত আছে। তা না হলে এতদিন ধরে এক নিয়মে চলেছে। এখন নতুন নিয়ম করা হলো কেন? আর তারা ভোট দিতে পারলে তাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিলে দোষ কি?

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি নির্বাচন-২০২১ এর নির্বাচন কমিশনার ডা. আশরাফুল আলম বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত ও পিআরএলে যাওয়া কর্মচারীকে ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে এমনটি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমি গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখি না। এছাড়া ভোটার তালিকা নিয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসে না। অভিযোগ নেয়ার জন্য আমি বসে আছি। অভিযোগ আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, সংক্ষুব্ধ সদস্য এ নিয়ে আবেদন করতে পারবে।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনটি প্যানেল। এর মধ্যে রয়েছে, এস এম আ: রব-আলমগীর- মনির পরিষদ, আরিফ-শহীদ-মহসিন পরিষদ ও সাইফুল-রফিক- আলী পরিষদ। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে যোগও করতে পারে আবার বাদ দিতে পারে। এই প্রথমই গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে অবসরপ্রাপ্তদের ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে।