ঢাকা সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫, ৩০শে আষাঢ় ১৪৩২


১০৯ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন: ফজলে করিমের বিরুদ্ধে মামলা


প্রকাশিত:
১৩ জুলাই ২০২৫ ১৬:৫২

সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী।

প্রায় ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং প্রায় ১০৯ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য উদঘাটন করে চট্টগ্রামের ‘ক্ষমতাধর’ আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১৩ জুলাই) দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে মামলাটি করেন প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন।

এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারতে পালানোর পথে ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধানে তার ২৪ কোটি ৮ লাখ ৩০ হাজার ২৩২ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১১ কোটি ৯৫ লাখ ২২ হাজার ৬০৭ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১২ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার ৬২৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ। এর বিপরীতে তার কোনো দায়-দেনার তথ্য দুদক পায়নি।

কিন্তু আয়কর নথি পর্যালোচনায় দুদক ফজলে করিমের ১৮ কোটি ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬০ টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে। আয়কর দেয়া বৈধ সম্পদের চেয়ে তার অর্জিত সম্পদ ৫ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার ৭৭২ টাকার বেশি পেয়েছে দুদক, যা তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্জন এবং ভোগদখল করছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১২টি ব্যাংক হিসাবে ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯০ টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৭২ টাকা জমা ও ৫৪ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৭১৮ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি ও ঘুষের’ মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশে ১২টি ব্যাংক হিসেবে এ অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

মামলায় আসামি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭(১) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও ৪(৩) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ১৯৯৬ সালের আগে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সেবছর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসন থেকে মনোনয়ন পান। কিন্তু জিততে পারেননি। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন তিনি। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের আমলের পুরো সময় তিনি বিরোধী মতের মানুষসহ পুরো রাউজানবাসীর কাছে ছিলেন ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’। ব্যাপক ক্ষমতাধর ফজলে করিমের গুম-খুন, বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নিজ দলের বিরুদ্ধ মতের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা, নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় রাজত্ব কায়েম করা, সরকারি জায়গা দখলসহ বিস্তর অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছে।