ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


থামেনি সনদ জালিয়াতি

প্রাভা হেলথের ভয়ংকর প্রতারণা, স্যাম্পল নিলেই করোনা পজিটিভ!


১৪ জুলাই ২০২১ ০৭:২৩

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:২৩

‘স্যাম্পল নিলেই করোনা পজিটিভ’ ‘প্রাভা হেলথ’র বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দিনে দিনে জোরালো হচ্ছে। পরীক্ষা করে শুধু ভুল রিপোর্টই দিচ্ছে না স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত এ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি; সঙ্গে রোগীর ইমেইল ও ফোনে পাঠানো হচ্ছে চিকিৎসার চটকদার সব অফার। পাশাপাশি পরিবারের সবাইকে করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য একের পর এক অনুরোধও জানাতে থাকে। রোগীর কাছে বারবার মেইল ও এসএমএসে পাঠানো হয় বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজের অফার। সম্প্রতি প্রাভার এমন ভুল রিপোর্টের শিকার হয়েছে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের পরিবার। এমনকি রিপোর্টটি সঠিক কি না, তা যাচাই করতে বারবার অনুরোধ জানানোর পরও সাড়া দেয়নি তারা।

এভাবেই বিদেশগামী ও অস্ত্রোপচারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কোনো উপসর্গ নেই, তারপরও সবারই পজিটিভ আসে। কয়েক ঘণ্টা পর অন্য কোনো জায়গায় পরীক্ষা করালে প্রতিবেদন আসে নেগেটিভ। করোনা মহামারীতে বিশ্বজুড়েই ‘কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ’ এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দেশে সরকারিভাবে মাত্র ২০০ টাকায় পরীক্ষা করা গেলেও প্রবাসীরা সময় ও চাকরি বাঁচাতে এবং বিদেশগামী শিক্ষার্থীরা সময়মতো কোর্সে অংশ নিতে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা করিয়ে থাকেন। কিন্তু কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এর সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া প্রাভা হেলথের করোনা পরীক্ষার ‘ভুল প্রতিবেদন’ এবং ইমেইলে ও ফোনে পাঠানো চিকিৎসাসেবা নেওয়ার নানা অফারের নথিপত্র দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাভা হেলথের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এ ব্যাপারে অবগত। এগুলো সত্য না মিথ্যা এ নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করবেন না।

প্রাভা হেলথ সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘স্যাম্পল সংগ্রহ মানেই পজিটিভ’ এবং ‘একবার পজিটিভ মানে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা’ আর সেই সঙ্গে ‘চিকিৎসাসেবা নিতে ফোন ও নানা অফারের ছড়াছড়ি’। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। কেউ কেউ এরই মধ্যে তাদের আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। জাতীয় সংসদেও প্রাভার করোনা পরীক্ষাকে ভুয়া বলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। এছাড়া প্রাভার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র‌্যাব মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের ছেলে ভুক্তভোগী ডা. মাহফুজ শফিক।

ডা. মাহফুজ  বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ে জেইন শফিক ইংল্যান্ডে স্কলারশিপ পেয়েছে। তার ফ্লাইট ছিল গত শুক্রবার ভোরে। সঙ্গে আমার বড় মেয়ে ও স্ত্রী যাবে। গত বুধবার বিকেল ৫টায় বনানীর প্রাভা হেলথে গিয়ে জেইনসহ আমার স্ত্রী ডা. ফারজানা রহমান ও বড় মেয়ে বায়ান শফিক নমুনা দেয়। ওইদিনই রাত ১২টার দিকে মেইলে জানিয়ে দেওয়া হয় সবার পজিটিভ এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিমটম ছাড়া সবার পজিটিভ আসায় আমি প্রাভাতে ফোন করে অনুরোধ করি যেন আবার একটু পরীক্ষা করে। কিন্তু তারা সেই অনুরোধ না শুনে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের গুণগান করে। তারা জানায়, তাদের মেশিন ও মেডিসিন অত্যাধুনিক এবং কখনই ভুল রিপোর্ট আসার সুযোগ নেই।’

এ পরিস্থিতিতে তারা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন জানিয়ে ড. মাহফুজ বলেন, ‘কিন্তু প্রাভা থেকে অফার আসতে থাকে মেইলে ও এসএমএসের মাধ্যমে। বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করে তারা। দুবার তারা ফোন করেও অফারের কথা বলে। তাদের এ অফার দেওয়া থেকে আমার সন্দেহ হয়, তারা এত প্যাকেজ দিচ্ছে কেন? আমি যেহেতু স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গেই থাকি তাই নিজের পরীক্ষারও তাগিদ অনুভব করি। রাত দেড়টার দিকে আমি গ্রিনলাইফ হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিই। পরদিন সকালে রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। আমার ৮৫ বছর বয়সী বাবা ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও ৭৬ বছরের মা অধ্যাপক মাহফুজা খানমকে নিয়ে উদ্বেগ কাজ করে। যেহেতু আমরা সবাই এক বাসাতেই থাকি। এবার আর বেসরকারি হাসপাতালে না গিয়ে বৃহস্পতিবার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) বাবা-মাসহ পরিবারের ২০ সদস্যের নমুনা দিই। পরদিন শুক্রবার রিপোর্টে সবারই নেগেটিভ আসে।’

ডা. মাহফুজ বলেন, ‘প্রাভা হেলথ কেয়ারের কারণে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা তিন দিন উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। আমার স্ত্রী-সন্তানদের ফ্লাইট বাতিল হলো। পাশাপাশি আমরা হয়রানির শিকার হলাম। এর দায় কে নেবে? আমরা মনে করি, ব্যবসায়িক কারণে তারা ইচ্ছে করে ভুল রিপোর্ট দিয়েছে। কারণ তিনজনের রিপোর্টই একসঙ্গে ভুল হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী যেখানে কভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, সেখানে তারা ব্যবসা করার জন্য এটা করছে বলে মনে হয় না। তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।’

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তারা (প্রাভা) মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করছে, ব্যবসা করছে। তাদের কারণে হয়তো অনেক প্রবাসী শ্রমিক চাকরিহারা হচ্ছে। রিজেন্টের সাহেদ কিংবা জেকেজির মতো আরেক প্রতারকচক্র তৈরি হচ্ছে বলে আমি মনে করি।’ সব তথ্যপ্রমাণসহ প্রাভার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব, র‌্যাবের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি।

ডা. মাহফুজের মা শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মী অধ্যাপক মাহফুজা খানম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন সাহেদ, জেকেজির জন্ম হচ্ছে এই প্রতারকদের ধরতে হবে। এভাবে যদি বিদেশগামী একজন শ্রমিক ভুল রিপোর্টের শিকার হয় তাহলে তো তার জীবনের জন্যই বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করানো কতটা যুক্তিসংগত সেটা ভেবে দেখা দরকার।’

সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের অভিযোগ : সংসদে সম্প্রতি শেষ হওয়া বাজেট অধিবেশনে গত ৩ জুলাই প্রাভার বিরুদ্ধে করোনা পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ তোলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে চুটিয়ে ব্যবসা করা প্রাভা হেলথ জালিয়াতি করছে। আমাকে ভুয়া পজিটিভ রিপোর্ট দিয়ে আতঙ্কিত করে তোলা হয়।’ সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানটির মুখোশ উন্মোচন করবেন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির এ নেতা গতকাল সোমবার  বলেন, ‘প্রাভার কারণেই আমি করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। জ¦র অনুভব করলে গত ২ জুলাই রাতে (৯টায়) প্রাভা হেলথে করোনা টেস্ট করাই। পরদিন ভোরে পজিটিভ বলে রেজাল্ট দেয়। ওই রেজাল্ট পাওয়ার পর সংসদের ক্লিনিকে সকাল ১০টায় আবার স্যাম্পল দিই। সেখানে টেস্টে রেজাল্ট নেগেটিভ আসে।’

প্রথম টেস্টের পরেই আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি সংসদে অভিযোগ করার পরও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ প্রাভার এমন ভুল রিপোর্টের কারণে অনেক প্রবাসীকে সময় এবং বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। আবার তাদের ভুল রিপোর্টের কারণে অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো বিদেশ যেতে পারছে না। এই দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। গত বছর রিজেন্ট ও জেকেজির কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে, এ বিষয়টি দেখতে হবে।’

প্রাভার ভুল রিপোর্টের কারণে মৃত্যুমুখে পড়ার অভিযোগ আইনজীবীর : করোনা পরীক্ষার মনগড়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার। অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনার মাধ্যমে পাঠনো এ নোটিসে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। ‘লকডাউনের’ পর প্রাভার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগ দন্ডবিধির ৪২০ ও ৩০৪-এ ৫১১ ধারায় মামলা করবেন তিনি।

আবদুস সাত্তার  প্রাভার মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘প্রাভার ভুল রিপোর্টের কারণে আমার মৃত্যু হতে পারত। ঢাকার বনানীর প্রাভা হেলথ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিনিয়র ডিরেক্টর ডা. জাভেদ হোসাইন এবং জুনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার রেজোয়ান আল রিমনকে নোটিস পাঠানো হয়েছে।’

হৃদরোগে আক্রান্ত আবদুস সাত্তার গত ১৯ মার্চ ঢাকায় এনজিওগ্রাম করাতে আসেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে কভিড পরীক্ষার সনদ প্রয়োজন হয়। সেজন্য পরদিন বিকেল ৪টায় প্রাভা হেলথ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মিরপুর কেন্দ্রে নমুনা দেন। পরদিন বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তাকে ‘কভিড পজিটিভ’ রিপোর্ট দেওয়া হয়।

আবদুস সাত্তার বলেন, ‘রিপোর্ট পাওয়ার পর পরিবারের সবাই ভেঙে পড়ে। আবার চিন্তা করি আমার শরীরে কভিডের কোনো লক্ষণই নেই। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আমার ছেলের বউ ডাক্তার। তাকে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখালে সে সন্দেহ করে। প্রাভার রিপোর্টে দেখা যায়, নমুনা সংগ্রহের সময় উল্লেখ করা হয়েছে ২০ মার্চ রাত ৯টা ৩১ মিনিট। অথচ আমার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বিকেল ৪টায়। নমুনা গ্রহণের সময় দেখানো হয়েছে পরদিন দুপুর দেড়টায়। এতে সন্দেহ হয়।’

এ আইনজীবী বলেন, ‘আমি আবার ঢাকার এএমজেড হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করাই। সেখানে ২১ মার্চ স্যাম্পল দিয়ে ওইদিনই ফলাফল পাই। নেগেটিভ আসে।’

কভিড নেগেটিভ আসার পর আবদুস সাত্তার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে হৃদরোগের চিকিৎসা নেন এবং দুটি রিং প্রতিস্থাপন করেন বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়। ‘প্রাভা হেলথ থেকে যে রিপোর্ট সেটি ভুল ও মনগড়া। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি আমি যদি হৃদরোগের চিকিৎসা না করাতাম তাহলে মৃত্যুর সম্ভবনা ছিল’ বলেন তিনি।

আবদুস সাত্তার বলেন, ‘করোনা পজিটিভ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফোন, এসএমএস ও ইমেইলে চিকিৎসা সুবিধার নানা অফার আসে। ভর্তি হলে কত দ্রুত এবং সুচিকিৎসার মাধ্যমে করোনা সারিয়ে তোলা হবে এসব কথাও বলা হয়। আমি তাদের বলেছি, আপনাদের রিপোর্ট ভুল হয়েছে। তাতেও তারা থামেনি। এক সপ্তাহ পর আবার আমাকে ফোন করে নমুনা দেওয়ার কথা বলে।’

আইনি নোটিসের বিষয়ে বলা পর প্রাভার এক কর্মী স্যাম্পল সংগ্রহের সময়ের বিষয়ে ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন জানিয়ে আবদুস সাত্তার বলেন, ‘সবকিছুই আমার কাছে রেকর্ড আছে। এ ধরনের প্রতারণাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। অনেক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় জড়িত রয়েছে এতে।’

প্রাভা হেলথ নিয়ে আরও অভিযোগ রয়েছে পজিটিভ হওয়া ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের। তারা বলেন, একবার করোনা পরীক্ষায় জনপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পজিটিভ আসে। আর পরিবারের একজনের পজিটিভ হলে সাধারণত সবাই করোনা পরীক্ষা করান। ফলে পাঁচ সদেস্যের একটি পরিবারের একজনের যদি পজিটিভ আসে তাহলে বাকি চারজনের পরীক্ষা তো আছেই। প্রথম ধাক্কাতেই সাড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নানা ভোগান্তির সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রচার চালিয়ে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে প্রাভা হেলথসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত ৬৫টি ল্যাবের অনেকগুলো। আছে নাম-পরিচয়হীন গ্রাহক শিকারিরাও। গ্রাহক সেজে কল দিলে প্রত্যেকেই নির্ভরযোগ্যতার দাবি করেন।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘মনিটরিং-সুপারভিশন না থাকার ফলে এরকম একটা দুর্বৃত্তায়ন ঘটছে। কাদের করোনা পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং তারা ঠিকমতো সেবা দিচ্ছে কি না, সেটি মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরকে খেয়াল রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা টেস্ট কোনোভাবেই বেসরকারি খাতে দেওয়া হোক এটা আমরা চাইনি। এগুলো হলো প্রতিষ্ঠানগুলোর লালসার ফসল। এ ধরনের অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রথমেই অভিযান চালিয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের জেলে পাঠাতে হবে। সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ওপর রাখতে হবে এসব প্রতিষ্ঠানকে। স্বাস্থ্য খাতের লোকবল সংকট হলে সেটাও দেখতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান মনিটরিং করে ত্রুটি ধরা পড়লে বড় অঙ্কের জরিমানা করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দ্রুত প্রাভা হেলথের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার আহ্বান জানাই। পুরো বিষয়টি রিভিউ করে মানসম্মত প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়াই এখন কাজ।’

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাভা হেলথের জনসংযোগ কর্মকর্তা কুতুবউদ্দিন কামাল গতকাল রাতেবলেন, ‘এসব অভিযোগের ব্যাপারে আমরা জানি। আমি এগুলো সত্যি না মিথ্যে তার কোনোটাই বলব না। আমরা কীভাবে কাজ করি সেটা আমাদের ফেইসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে, কাইন্ডলি সেগুলো একটু দেখে নিন।’

পরে তাদের ফেইসবুক পেজে গিয়ে দেখা যায় সেখানে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্যে বলেছে, ‘সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কভিড টেস্টিং প্রক্রিয়ার ওপর তদন্ত শুরু করেছি। একই সাথে কভিড টেস্টিং সার্ভিস এর ফলাফল থেকে যাদের জটিলতার সম্মুখিন হতে হয়েছে, তাদের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে সহানুভূতিশীল। এ মুহূর্তে আমরা কোন মুখোমুখি বা অনলাইন ইন্টারভিউ গ্রহণ করছি না, আমাদের রোগীদের সেবায় যাতে কোন বিঘœ না হয় সেদিকে সর্বাত্মক নিয়োজিত রয়েছি। এই বিষয় সম্পর্কিত নতুন কোন তথ্য পাওয়া মাত্রই আমরা সবাইকে জানিয়ে ঘোষণা দিব।’