ঢাকা সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১


ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রলীগের কোন্দল প্রকাশ্যে


২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:৪৩

আপডেট:
১৩ মে ২০২৪ ০৯:৫৬

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রলীগের কোন্দল প্রকাশ্যে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ছাত্রলীগের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ছাত্রলীগের একটি পক্ষ স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।শনিবার মধুর ক্যানটিনে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলের  ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের কাছে তাদের কেন প্রার্থী করা হচ্ছে না এই বিষয়ে জানতে চান।

এই সময় ছাত্রলীগ সভাপতির কিছু অনুসারীর সঙ্গে নারী নেতৃদের কথাকাটাকাটি এবং ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সভাপতি লাঠি হাতে তার অনুসারীদের থামাতে যান।এ ছাড়া প্যানেল থেকে যারা বাদ পড়বে তাদের আলাদা প্যানেল দেওয়া হবে এমন ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। ছাত্রলীগের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী নেতা জানান, মেয়েদের হলগুলোতে যারা বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক তাদের ডাকসুতে না রাখলেও হলের ভিপি-জিএস পদে রাখা হবে কিনা তা জানতে দুপুর ১২টার কিছু আগে মধুর ক্যানটিনের পেছনে কিচেন রুমে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন এবং ঢাবি সম্পাদক সাদ্দামের কাছে যান।

  নারী নেতৃরা এসময় তাদের ডাকসু ও হল সংসদে তাদের প্রার্থী করার দাবি জানান।বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান, ছাত্রী হলের সভাপতি-সম্পাদকরা কথা বলার সময় বিভিন্নভাবে তাদের হেনস্তা করতে থাকে ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতার অনুসারীরা। স্যার এফ রহমান হলের সাবেক নেতা সাগর রহমান এবং সূর্যসেন হলের সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক সিয়াম রহমানসহ একাধিক নেতা সেখানে উপস্থিতি ছিলেন।তারা অভিযোগ করেন, সাগর রহমান এক হলের নেত্রীকে ধাক্কা দেয়। তখন ওই নেত্রী সাগরের জামার কলার ধরে টানাহেঁচড়া করতে থাকেন। এরপর অন্য মেয়েদের মধ্যেও ব্যাপক উত্তেজনাক বিরাজ করে।

এ সময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক পর্যায় ছাত্রলীগ সভাপতি  শোভন মধুর ক্যানটিনের গোল ঘরে নারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসেন । এ সময় ছাত্রী হলের নেত্রীরা এ ঘটনার বিচারের দাবিতে শোভন ও সাদ্দামকে গোল ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখেন। সেখানে হল সভাপতি ও সম্পাদকদের সঙ্গে শোভন এবং সাদ্দামের প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়।তারা আরো জানান, আলোচনা চলাকালে উভয় পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করে। ভেতরে উত্তেজনা বিরাজ করলে গোল ঘরের বাইরে এই দুই নেতার অনুসারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন মধুর ক্যানটিনের গোল ঘর থেকে লাঠি বের করে আনেন।পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন। তিনি বলেন, আমরা হলের সভাপতি-সম্পাদকদের ডেকেছি। হলের যারা প্রার্থী হবেন তারা কীভাবে কাজ করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে।যদিও এ মিটিংয়ের বিষয়ে অনেকেই জানেন না বলে জানান কয়েকটি হলের সভাপতি-সম্পাদক দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।

  জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, শুক্রবার রাতে আমরা যখন জানতে পারি হলে যারা সভাপতি-সম্পাদক, এদের  ডাকসুতে রাখা হচ্ছে না তখন আমরা শনিবার মধুতে আসি। আমরা হলের মধ্যে কারা ডাকসুর প্রার্থী হবেন সে বিষয়ে আলোচনা করি। কিন্তু শোভন ও সাদ্দামের অনুসারীরা আমাদের বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন তাদের মধ্যে আমাদের কথাকাটাকাটি হয়। এ সময় তাদের মধ্য থেকে একজন আমাদের এক নেত্রীকে ধাক্কা দেয়।

তখন উভয়ের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে শোভন লাঠি বের করে উভয়কে থামিয়ে দেয়।এদিকে পরে সেখানে উপস্থিত একটি ছাত্র হলের সাধারণ সম্পাদক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের আগে ডাকা হয়নি। ঝামেলা হয়েছে শুনে আমরা গিয়েছি। আমরা এত বছর রাজনীতি করেছি ছাত্রলীগের।

কিন্তু আমাদের রাজনীতি শেষ করে দেওয়ার জন্য আমাদের কোথাও প্রার্থী করা হচ্ছে না।উত্তেজনার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন সাংবাদিকদের বলেন, উত্তেজনাকর কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমরা হলের সভাপতি-সম্পাদকদের সঙ্গে মিটিং করেছি। তাদের মধ্যে ডাকসু নিয়ে কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।

লাঠি হাতে বের হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যখন সবাই ঝামেলা করছিল তখন আমি সবাইকে থামিয়ে দিই।বিভিন্ন হলের সভাপতি-সম্পাদকদের ডাকসুতে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা যোগ্য এবং পরিচিত তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের বিষয়টি দেখবেন মূল দলের হাইকমান্ড। তারা যে নির্দেশনা দেবেন তা নিয়ে আমরা কাজ করব।

এ ছাড়া, বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগ আছে তাদের রিপোর্টও নেওয়া হচ্ছে। তার ওপর ভিত্তি করেই প্যানেলে রাখা হবে। প্যানেলে টিএসসির বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যারা যোগ্য আর ভালো তাদের নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেসব বিষয় দেখবেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

ছাত্রলীগেই আলাদা প্যানেল: এদিকে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে যখন ছাত্রলীগের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে তখন বাদ পড়া ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে আলাদা প্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অপর একটি পক্ষ। তারা পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়ে নির্বাচন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে তারা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে তারা অন্যদের চেয়ে যোগ্য।জানতে চাইলে ছাত্রলীগের ২০১৮ সালের সম্মেলন প্রত্যাশী ও জহুরুল হক হলের সাবেক নেতা আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ছাত্রলীগের প্যানেল হচ্ছে। আমরা যারা ত্যাগী নেতা রয়েছি তারা বাদ যাচ্ছি। আমাদের যোগ্য মনে করা হচ্ছে না। আমরা যারা ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতা রয়েছি আমরা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেখিয়ে দিব যে আমরা যোগ্য, না অযোগ্য।