শতবর্ষী মাকে স্টেশনে ফেলে গেল সন্তানরা
এমন কী করে সম্ভব!

মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম/পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না/এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো... গানের এ কথাগুলো মানবজীবনের অন্যতম সত্য হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই সন্তানগুলোর কাছে তা যেন অরণ্যে রোদন।
তাই তো তারা রেলস্টেশনে হাড় কাঁপানো শীতে শতবর্ষী মাকে ফেলে যেতে পেরেছেন! ঘটনাটি ঘটেছে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরে।
কনকনে ঠা-ায় টানা ১৫ দিন অবর্ণনীয় কষ্টে কাটানোর পর গত রবিবার রাতে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় ওই বৃদ্ধাকে। হাসপাতালে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তার অস্পষ্ট কথা এবং ইশারায় ফুটে উঠেছে সন্তানদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ।
রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকার দোকানদার সিরাজুল ইসলাম জানান, দিন ১৫ আগে বৃষ্টিস্নাত এক সন্ধ্যায় ভ্যানগাড়িতে করে এক নারী ও এক পুরুষ এসে অজ্ঞাত এই বৃদ্ধাকে স্টেশনের পরিত্যক্ত প্লাটফরমে রেখে যান। যারা রেখে যান তাদের আচরণ দেখে মনে হয়েছিল তারা বৃদ্ধার স্বজন। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো কথা না বলে ভ্যান নিয়ে দ্রুত চলে যান।
পরে জোরে বৃষ্টি শুরু হলে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধাকে প্লাটফরমের একটি ছাউনির নিচে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন সিরাজুল। সেখানে কিছু খড় ও পুরনো কম্বল দিয়ে বিছানা তৈরি করে তার থাকার ব্যবস্থা করেন। এ কয়দিন তিনিই দেখভাল করেছেন বৃদ্ধার। খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসাসহ যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন তাকে সুস্থ করে তুলতে। এ কয়দিনে আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের কেউ এ বৃদ্ধার খোঁজখবর নেয়নি। বৃদ্ধার নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বৃদ্ধা তেমন কোনো কথা বলতে পারছেন না।
রবিবার প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়লে রেলস্টেশনে পড়ে থাকা ওই বৃদ্ধার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন রাতেই তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর তদন্ত ফাঁড়ির সহকারী পুলিশ পরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম জানান, বৃদ্ধার নাম-পরিচয় জানতে আমরা পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসনসহ সোশ্যাল সাইটে প্রচার চালাচ্ছি।
গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সালাউদ্দিন আহম্মেদ জানান, ‘বৃদ্ধাকে যখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়, তখন সাড়া না মিললেও গত সোমবার সকাল থেকেই তিনি সাড়া দিচ্ছেন। অস্পষ্টভাবে কথাও বলছেন। তবে কিছুটা সুস্থ হলেও ওই বৃদ্ধা শঙ্কামুক্ত নন।
অমানবিক এ ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন, রহনপুর পৌরসভাও ওই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে ওই বৃদ্ধার চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন রহনপুর পৌরসভার মেয়র তারেক আহমেদ। তিনি জানান, ‘ঘটনাটি খুবই অমানবিক। চিকিৎসার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক বৃদ্ধার সেবা-শুশ্রূষার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে মালতি নামে একজনকে নিয়োজিত করা হয়েছে।’
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। শতবর্ষী ওই বৃদ্ধার প্রতি এমন নির্মম আচরণের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। নিষ্ঠুর ওই পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান অনেকেই। পাশাপাশি অসহায় ওই নারীর সার্বিক সহায়তায় সরকারের সুদৃষ্টিরও আবেদন তাদের।