নওহাটা পৌরসভা
রাস্তা নির্মাণে চরম অচলাবস্থা, ক্ষুব্ধ পৌরবাসী

রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার কাজে দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা। কাজ ফেলে রেখে ঠিকাদার রয়েছেন ঘুমে। ফলে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তিন দফায় সময় বাড়িয়ে দেওয়ার পরও শেষ হয়নি কাজ। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই সাড়ে ১৪ কোটি টাকার বেশি বিল পরিশোধ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। এতে ক্ষোভে ফুসছে পৌরবাসী।
পাশাপাশি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উঠেছে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগও। ইতোমধ্যে পৌর এলাকার দুয়ারি থেকে পাকুড়িয়া স্কুল পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তার একটি অংশে নির্মিত সুরক্ষা দেয়ালের ৩০ মিটার পুকুরে ধসে গেছে। এতে চলাচলে বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই পথ দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
পৌরসভা সূত্র জানায়, নওহাটার রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারের দায়িত্ব পায় জুয়েল ইলেকট্রনিক্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর সত্ত্বাধিকারি রাজশাহীর ভুগরইল এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিমুল হক। ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। মেয়াদ ছিল এক বছর। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ গত ২৭ মে এক মাস সময় দেওয়া হয়। তবে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
অথচ তিন দফায় ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩৭ টাকা বিল পরিশোধ করেছে পৌরসভা।
পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ গত মে মাসে এক মাসের সময়সীমা দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও নানা অযুহাতে কাজগুলো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কার্যসম্পাদন জামানত বাজেয়াপ্তসহ নতুন ঠিকাদার নিয়োগের চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে পৌর এলাকার দুয়ারি থেকে পাকুড়িয়া স্কুল পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তার একাংশে সুরক্ষা দেয়ালের প্রায় ৩০ মিটার ধসে পড়েছে। দেয়ালটির অর্ধেকের বেশি অংশ পুকুরে নেমে যাওয়ায় ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী কয়েক হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পরে ইউএনওর হস্তক্ষেপে বালু ও মাটি ফেলে রাস্তাটি সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করা হয়। অথচ ওই প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ৮ হাজার ৯১৭ টাকা।
স্থানীয় পাকুড়িয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয়েছে। প্রতিবাদ করায় গ্রামবাসীকে চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। এরপর কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগধানি এলাকায় ৫০০ মিটার রাস্তার সংস্কার কাজ এক বছর আগে শুরু হলেও অর্ধেকের বেশি এখনো শেষ হয়নি। পুরনো রাস্তার ওপরের অংশ তুলে ফেলায় বৃষ্টিতে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় মাস ধরে বৃষ্টির কারণে হালকা বৃষ্টিতেই রাস্তাটি ডুবে যাচ্ছে। মানুষজন হাঁটতেও পারছে না। হালকা যানবাহনও চলাচল করতে চায় না।’
পৌরসভার আলাই বিদিরপুর থেকে নদীর বাঁধ পর্যন্ত সাড়ে সাতশ মিটার রাস্তার কাজেও রয়েছে বিশৃঙ্খলা। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে কেবলমাত্র খোয়া ফেলে রোলিং করা হলেও ভারি বৃষ্টিতে খোয়া উঠে গেছে। পিল্লাপাড়া, পুঠিয়াপাড়া, বসন্তপুর, চৌবাড়িয়া, বায়াহাট, বারুইপাড়া–এমন একাধিক এলাকার রাস্তাতেও কাজের অগ্রগতি নেই। এসব রাস্তায় বরাদ্দ থাকলেও কোথাও সড়কবাতির পোল স্থাপন করা হয়নি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বাবু লাল বলেন, ‘কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সময়মতো কাজ করতে পারছি না। সময় বাড়ানোর আবেদন জানাবো।’
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমি বলেন, ‘আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। বিল পরিশোধের বিষয়টি পুরোপুরি জানি না। তবে অতিরিক্ত বিল দেওয়া হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঠিকাদারকে তিন দফা সময় দিয়েও কাজ শেষ না করায় পৌরবাসীর মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রয়োজনে জামানত বাজেয়াপ্ত করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জুয়েল ইলেকট্রনিক্সের সত্ত্বাধিকারি ওয়াসিমুল হক বলেন, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ এবং অগ্রিম বৃষ্টিপাতের কারণে সমস্যা হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আরও সময় চেয়েছি। সময় পেলে দ্রুত কাজ শেষ করব।’