শেরপুরের নালিতাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত ভবন এখন মাদকের আখড়া; যেন দেখার কেউ নেই

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পৌরসভায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি পরিত্যক্ত ভবনে মাদকের আখড়া হিসেবে পরিনত হয়েছে। ৩ তলা বিশিষ্ট এ কোয়ার্টারটিতে একসময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরতরা থাকলেও বর্তমানে ভবনটি পরিত্যক্ত। প্রতি রাতেই মাদক, জুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চলে ভবনটিতে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। পরিত্যক্ত এই ভবন হাসপাতালের কোন কাজেই আসে না। এখানে প্রতিনিয়তই মাদক ও জুয়ার আসর বসে। রাত হলেই দলবল নিয়ে এখানে আসে মাদকসেবীরা। এছাড়াও ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন অসামাজিক যৌন কার্যকলাপ ঘটে এই ভবনের পরিত্যক্ত কক্ষে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির প্রত্যেকটি কক্ষে পড়ে আছে মাদকদ্রব্যের প্যাকেট। মদের বোতল, সিগারেটের প্যাকেট, ইয়াবা ট্যাবলেটের আলামত, দিয়াশলাইসহ মাদক কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম। শুধু মাদক সরঞ্জামই নয় মেয়েদের কাপড়সহ যৌন মিলনকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্য ও প্যাকেট পাওয়া যায় সেখানে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাত হলেই দলবেঁধে হাসপাতালের এই ভবনে প্রবেশ করে মাদকসেবীরা। কখনো পেছন দিয়ে আসলেও বেশিরভাগ সময় হাসপাতালের মূল গেইট দিয়েই তাদের প্রবেশ ঘটে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের ভূমিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন অনিয়ম চলছে। মাদক সেবনের জন্য পরিত্যক্ত এ ভবন যেন নিরাপদ স্থান। এসব দেখার কেউ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে কি করে?
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী রুহুল সিদ্দিকী রুমান বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে প্রচুর মাদক সেবনের সরঞ্জাম, মদের বোতল, সিগারেটের প্যাকেট, গর্ভনিরোধক ও মেয়েদের ব্যবহৃত পোশাক পড়ে আছে। এখানে এত গুরুতর অপকর্ম দীর্ঘদিন ধরে চললেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানায়নি বলে মনে হয়। আমরা চাই হাসপাতাল যেনো নিজেই রোগীতে পরিণত না হয়।
হাসপাতালের মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে মাদকের আখড়া বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন সমাজ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি করে মাদকসহ সবধরনের অসামাজিক ও অনিয়ম বন্ধের দাবি সকলের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমরা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে উত্থাপন করেছি এবং আমাদের পক্ষ থেকে এই স্থানে টহল দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, ইতিপূর্বে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই স্থান থেকে অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে ২ জনকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করা হয়েছিল। এছাড়াও ৩ জন মাদকসেবী আটক হয়েছিল। এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে থাকে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।
এবিষয়ে নালিতাবাড়ীর ইউএনও ফারজানা আক্তার ববি সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো সংরক্ষিত স্থানে মাদক কান্ডের বিষয়টি দুঃখজনক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়াও হাসপাতালের ভিতরে মাদক সেবন করা হচ্ছে এ ধরণের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।