ঢাকা মঙ্গলবার, ২০শে মে ২০২৫, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের জন্য কতটা জরুরি


২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২১

আপডেট:
২০ মে ২০২৫ ০৮:২৫

বাংলাদেশের মত একটি দেশকে এক মিলিয়ন অধিক জনসংখ্যার রোহিঙ্গা নামক একটি গোষ্ঠীকে জনবহুল সীমিত সীমার আয়তনের দেশের জাতিগোষ্ঠী হিসেবে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভূমিতে বসবাসরত অবস্থায় জীবনযাপনে এমন কিছু নীতি ও বিষয় তাদের উপর আরোপ করা হয়েছে যার জন্য রোহিঙ্গা গোষ্ঠী তাদের রাষ্ট্র হতে পলায়ন না বিতাড়িত সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে পাশাপাশি তাদের দাবীগুলো নিয়ে যেমন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে মিয়ানমার ও তাদের গণতান্ত্রিক শাসকরা যতটা না তাদের পক্ষে কাজ করেছে তথাপি প্রায় অনেক দশক অতিবাহিত হয়ে গেছে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন,শোষণ,নিপীড়ন,গণহত্যার মাধ্যমে জাতিসত্তাকে নির্মূল করতে যত ধরণের অপকর্ম দরকার তা করেই যাচ্ছে মিয়ানমার জান্তা সরকার।

আশ্রিত জনগোষ্ঠীকে শরনার্থী হিসেবে সকল ধরণের সুবিধা প্রদান করা বর্তমান বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভবপর নয়। মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন সবর্দা থাকবে কারণ বিশ্বের এমন একটি দেশ- বাংলাদেশ, যে দেশের জনসংখ্যা ও আয়তন বিবেচনায় নিজেদের জনসংখ্যাকে নিজেরাই মৌলিক চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে স্বাভাবিক স্থিতিশীল শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে পথ চলা মসৃণতায়  ক্ষীণ টান ধরেছে। তার উপর শরনার্থী হিসেবে যে দেশের জনসংখ্যা ও আয়তন বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটা বেশি, সেই দেশে ১৩৫ ধরণের  ভিন্ন ভিন্ন জাতি সত্তা রয়েছে, সেখানে রোহিঙ্গার মত একটি জাতিসত্তা- যাদের আরাকানে রয়েছে প্রায় নবম ও দশম শতাব্দী হতে বসবাসের নজির এবং নিজস্ব ভাষা, কালচার যা পুরোটাই ইউনিক ও আরাকানের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে বসবাস তাদের ভার বহন করা অস্বাভাবিক। রোহিঙ্গারা জাতিগতভাবে প্রধানত মুসলিম হলে তাদের মধ্যে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের নগন্য সংখ্যক লোকও রয়েছে। যেহেতু মিয়ানমারে ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার দেশ হিসেবে বহুল পরিচিত সেই হিসেবে এমন দেশে রোহিঙ্গা জাতিসত্তাকে মূল্যায়ন করা কেন হবেনা। ঐতিহ্যগতভাবে দীর্ঘদিন যাবত এ ধরণের জাতিসত্তা নিয়ে মিয়ানমার বা বার্মা রাষ্ট্রটি ভিন্ন ভিন্ন নীতি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তাই কিছু অভ্যন্তরীণ বর্ণবাদ, ধর্মভিত্তিক দর্শন নিয়ে তাদের দেশে এ শ্রেণীর মানুষকে জাতিগতভাবে নির্মূল বেহাত জুলুম ও শোষণ।

বাংলাদেশ বিশ্বে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে শান্তির দূত হিসেবে সেই দেশের পাশেই এমন জাতিগত বিভেদ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মেনে নিতে পারছে না। তাই বাংলাদেশ শান্তির পায়রা হয়ে নিপীড়িত শ্রেনীর মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কিছুটা নাজুক থাকার পরেও শান্তির স্বপক্ষে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিপক্ষে শূণ্য সূচক নীতির রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রাধান্য পাচ্ছে। কোন দেশে হত্যা, নির্যাতন ও বৈষম্য বাংলাদেশ মেনে নিতে পারেনা।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবত আশ্রিত হওয়ায় তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণসহ অন্যান্য চাহিদা- মানবিক সহায়তা গ্রহন ছাড়া পূরণ করা একেবারেই অসম্ভব কিন্তু এদেশ তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছে শরনার্থীদের আর্ন্তজাতিক আইন নিয়ম মেনে কিভাবে এই নিজস্ব ভূমি হারা মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়।

যখন কোন গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব দেশের অভ্যন্তরীণ  ভিন্ন নীতির ফলে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকে তখন তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত উপলদ্ধি করে বেঁচে থাকার তাগিদে অপরাধের দিকে ধাবিত হওয়ায় প্রবনতা দিন দিন বৃদ্ধি পায়। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বে ছোট একটি শহরের মংডু সীমান্তের পাশে কুতুপালং, উখিয়ায় জীবন মানে সংশ্রয় নিয়ে নিজের দেশে বাস্তুচ্যূত মানুষগুলো নিজের অস্থিত্ববাদকে জানান দিতে প্রাণপন চেষ্টা করে যায়।

এমন অবস্থায় নিরীহ জনগোষ্ঠী হাতে অস্ত্র তুলে নিতে কুন্ঠাবোধ করে না। বিদ্রোহী বিভিন্ন সংগঠন সৃষ্টি হয়। সেই সংগঠনের রসদ জোগাতে তারা অনৈতিক বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে কুতুপালং ও উখিয়া শরনার্থী শিবিরে। তাদের ভীতি শঙ্কা রূপ নিয়েছে টিকে থাকার বাস্তবিক ও আত্মিক চেতনায়। জীবন যুদ্ধে নিজেদের সংগ্রামী মনোভাব তৈরি  যা আশ্রয়দাতা রাষ্ট্রের জন নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু তাদের জাতীয়তাবোধ নিজস্ব সত্তা ও বিবেক জাগ্রত করে ফলে তাদের বিপ্লবিক চেতনা ও মনোভাব প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও সংযুক্ত সীমান্তে অস্থিরতা চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়। এমন অবস্থায় আশ্রয়দাতা রাষ্ট্র ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে বিভেদ ও পারস্পারিক সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। পাশাপাশি সমালোচক গোষ্ঠীর ঘি ঢেলে দেওয়া যেন দুই দেশের দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ককে নাজুক করে তুলে। এমন অবস্থায় সম্পর্ক উন্নয়নে বাঁধাকে পাশ না কাটিয়ে যদি বাঁধার বাঁধ ভেঙ্গে দেওয়া যায় তাহলে সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।

রাষ্ট্রের নীতি ও দর্শনে কখনও কোন পরিবর্তন ঘটলে তখন হয়তো রাষ্ট্রের সাময়িক কিছু পরিবর্তন সাধিত হতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে যাওয়াটা সময়ের ব্যাপার। এমন অবস্থায় রাষ্ট্রের সঠিক নীতি হল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। যা করতে প্রয়োজন জাতিগত বিভেদ ‍নিরসন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে যদি রোহিঙ্গা গোষ্ঠী বিপত্তি হয়ে দাঁড়ায় তাহলে বিপত্তিকে নিষ্পত্তি করা অত্যন্ত জরুরি।