ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


নানাকে নিয়ে স্থৃতিচারণা ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রাব্বানী

নানাকে দেখেই বঙ্গবন্ধু হাসিমুখে আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলেন:গোলাম রাব্বানী


২১ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৩

আপডেট:
২১ অক্টোবর ২০১৮ ২০:০৭

নানাকে দেখেই বঙ্গবন্ধু হাসিমুখে আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলেন:গোলাম রাব্বানী

গোলাম রাব্বানী,

“জাতির জনকের জন্য হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা ও আমার রাজনীতির হাতেখড়ি”আমার আশেপাশের কিছু তথাকথিত সুশীল, অরাজনৈতিক, ভিন্ন মতাদর্শীরা যখন অজ্ঞতাবশত বা স্রেফ হুজুগে ছাত্রলীগ নিয়ে বিরুপ ধারণা পোষণকারী আমাকে ‘আমি ছাত্রলীগ কেন করি’ টাইপ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, আমি এই জাতীয় প্রশ্নে কোনরূপ ত্যানা না প্যাঁচিয়ে, আমার আদর্শিক অবস্থানের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্কের দোকান খুলে না বসে, স্রেফ “আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসি, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন, ছাত্রলীগ করতে আমার আর কোন যুক্তি বা কারণের প্রয়োজন নেই” বলে এক কথায় উপক্রমণিকা টেনে দেই!

আর বঙ্গবন্ধুকে কেন ভালবাসি এই প্রসঙ্গে আমার বলার মত একান্ত নিজস্ব কিছু কথা আছে! আমার মস্তিষ্কের হার্ডডিস্কে অতি যত্নে রাখা কিছু কথা ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছে বহুদিনের, তাই কীবোর্ড চাপা শুরু করলাম…

আমার অন্তর্যামীর শপথ! আমার যৌবনের ভালবাসা,আবেগ-উচ্ছ্বাস আর পরম নির্ভরতার ঠিকানা,প্রাণের প্রতিষ্ঠান,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ”এর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসেই!

আমরা নতুন প্রজন্মের যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে লালন করে পিতার অসমাপ্ত কাজ, সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখি, আমাদের সৌভাগ্য হয়নি সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ বাঙালীকে নিজ চোখে দেখার! তাই বঙ্গবন্ধুকে জানার মাধ্যম হিসেবে আমরা পেয়েছি কিছু ইতিহাসের বই, সমকালীন সংবাদপত্র, কিছু দুর্লভ ভিডিও চিত্র, আর স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির কিছু প্রবীণ মুজিবসেনাকে। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে আরও নিবিড়ভাবে জানার আকুতি খানিকটা নিবৃত করতে জননেত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল “বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী”, আর “কারাগারের রোজনামচা” আমরা আশীর্বাদস্বরূপ হাতে পেয়েছি!
আর অল্পকিছু মানুষের সুযোগ হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে যারা একদম কাছ থেকে দেখেছেন, তার স্নেহের পরশ পেয়েছেন এমন কারও মুখে পিতার অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর বিচক্ষণতা আর মাহাত্ম্যের গল্প শোনার!

গর্ব করে বলি, আমি সেই স্বল্পসংখ্যক সৌভাগ্যবানদের একজন !

আর যে মহান ব্যক্তিটির সৌজন্যে আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু লেখার দুঃসাহস করছি, তিনি আমার পরম শ্রদ্ধেয় মাতামহ মাদারীপুর জেলার অন্তর্গত রাজৈর উপজেলা আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি (১৯৬৪-৭৪), চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মরহুমঃ আলহাজ্ব শামসুদ্দিন আহম্মেদ। একজন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা হয়েও সৎ, নির্লোভ, নির্ভীক, ত্যাগী, ব্যক্তিত্ববান এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর সুনজরে এসেছিলেন, এবং নেতার প্রতি গভীর আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে একজন স্নেহধন্য কর্মী হিসেবে জাতির পিতার ভালবাসায় সিক্ত হওয়ার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছিলেন!

আমাদের বাড়ি থেকে নানাবাড়ি মাত্র মাইল পাঁচেকের দূরত্ব। ছোটবেলার অনেকটা সময় আমার ওখানেই কেটেছে। যখন থেকে কিছুটা বুঝতে শিখেছি, নানা প্রায়দিনই সন্ধ্যায় আমাকে কোলে-কাঁধে নিয়ে বাড়ির উঠোনে হাঁটে বেড়াতেন, মজার সব ছড়া বলার ফাঁকে বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনাতেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন দিনগুলোর গল্প করতেন। নানার সব গল্পই খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতাম, অনেক ছড়া এখন আর পুরোটা মনে করতে পারি না, কিন্তু বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধের শিহরণ জাগানিয়া গল্পগুলি স্মৃতির পাতায় চির অমলিন!

নানার মুখ থেকেই শুনেছি, বঙ্গবন্ধু কিভাবে তার আশ্চর্য জাদুকরী ক্ষমতায় মুহূর্তেই সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন, নেতা-কর্মীদের একদম ঘরের মানুষের মত অধিকার নিয়ে “তুই” বলে সম্বোধন করতেন, একবার শুনেই কিভাবে শত-সহস্র নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষের নাম মনে রাখতে পারতেন, কারও সাথে প্রথম পরিচয়ের পর যতদিন পরই দেখা হোক, তিনি একদম নির্ভুল ভাবে তার নাম ধরে ডাকতেন, দ্বিতীয়বারের জন্য কাউকে নাম বলতে হতো না!

নানা ছাত্র হিসেবে খুব মেধাবী ছিলেন, ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম শ্রেণী। জমিদার বাবার একমাত্র ছেলে, শখ করে ঢাকা গেলেন কাস্টমস এর চাকুরী নিয়ে, বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলেন মিষ্টি নিয়ে দোয়া চাইতে। বঙ্গবন্ধু মিষ্টি খেলেন, দোয়াও করলেন, যাবার সময় কেবল আফসোসের স্বরে বললেন, “শামসু, তোর মতো স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে যদি ঢাকায় এসে চাকরি করে, তাহলে মাদারীপুরে আমার রাজনীতি কে করবে!
ব্যস, তৎক্ষণাৎ নানা বঙ্গবন্ধুকে সালাম করে বললেন, “শেখ সাব আমি চাকরি করবো না, আপনার আদর্শে রাজনীতি করতে চাই।” বঙ্গবন্ধু নানাকে জড়িয়ে ধরে প্রাণভরে দোয়া করে হাসিমুখে বিদায় দিলেন।

১৯৬৮, আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু ভারতের আগরতলায় কারাবন্দী। নানা ব্যক্তিগতভাবে বর্ডার পেরিয়ে জীবনের ঝুঁকে নিয়ে তাঁর প্রিয় নেতাকে দেখতে তিনবার আগরতলায় গিয়েছিলেন,আর কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধু যখন টুঙ্গীপাড়ায় এলেন, হেলিকপ্টার থেকে নেমে দুইদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো সব সিনিয়র নেতাদের সাথে করমর্দন করতে করতে এগুচ্ছেন। সদ্য চল্লিশ পেরোনো নানা লাইনের মাঝামাঝি,

 
নানাকে দেখেই বঙ্গবন্ধু হাসিমুখে নিগূড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলেন, লাইন থেকে বের করে নানার কাঁধে হাত দিয়ে এগুতে লাগলেন। স্বভাবতই উপস্থিত সবার কানাঘুষা আর কৌতূহলোদ্দীপক দৃষ্টির প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু পরে তার বক্তৃতার সময় নানাকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে কারণটা ব্যাখ্যা করলেন,
“আমি জানি তোমরা সবাই আমাকে ভালোবাসো। দেশে আন্দোলন করেছো, প্রতিবাদের ঝড় তুলেছো, কিন্তু কেউ কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে আমাকে দেখতে যাও নাই, এই শামসু আমাকে তিন তিনবার দেখতে গেছে, জীবনের ঝঁকি নিয়ে।”
 
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
৭ই মার্চ, ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের জন্য বঙ্গবন্ধু নানাকে ডেকে মনোনয়ন দেয়ার ইংগিত দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বললেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো বৃহত্তর ফরিদপুর এর ২৫ জন আওয়ামীলীগ নেতার সমর্থনও আদায় করলেন। তখন কংগ্রেস থেকে সদ্য আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছেন রাজৈর উপজেলার প্রবীণ নেতা ফণীভূষণ মজুমদার। বন্ধুরাষ্ট্র ভারত থেকে ইন্দিরা গান্ধী ফণীভূষণ এর জন্য ফোন করলেন বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধু ভারী চিন্তায় পড়লেন, একদিকে স্নেহের কর্মীকে দেয়া কথা আর অন্যদিকে ইন্দিরাগান্ধীর অনুরোধ। নানাকে ডেকে সব খুলে বলে জিজ্ঞেস করলেন, “কি করি বলতো শামসু!
” নানা হাসিমুখে বললেন, “শেখ সাব, দাদাকে নমিনেশন দেন। তিনি প্রবীণ আর এই এলাকায় ৭০ ভাগ হিন্দু অধ্যুষিত, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তাদের সমর্থন জরুরী।”
বঙ্গবন্ধুর বুক থেকে যেন পাথর সরে গেলো, “আমি জানতাম, আমার শামসু এমন কিছুই বলবে, পরেরবার তুই-ই পাবি। এবার বল, তুই আমার কাছে কি চাস? তোকে কয়েকটা লাইসেন্স করে দেই, ব্যবসাবাণিজ্য কর, বাড়ি থেকে টাকা এনে আর কত করবি দলের জন্য!” “শেখ সাব, আপনি তো আছেন, আমার কিছুই লাগবে না, আপনার স্নেহ-ভালোবাসা থাকলেই চলবে, হাসিমুখে উত্তর দিলেন নানা।” সে নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসন পেলো আওয়ামীলীগ, ফণীভূষণ মজুমদারকে পরে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীসভায় যোগ দিলেন, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি কেবল নানাকেই সাথে নিয়ে যান।
 
১৯৭৩, ধানমন্ডি-৩২ এ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের এক সভায় নানা তার বক্তৃতা শেষে বঙ্গবন্ধুর অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরে গিয়ে বলেছিলেন, শেখ সাহেব, আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট,একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আপনার যে নিরাপত্তা আবশ্যক তাতে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে, আমি গেট দিয়ে ঢোকার আগে বাইরে এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম,দেখলাম নিরাপত্তারক্ষীরা ঠিকমতো চেক করছে না, আমিও পরিচয় গোপন করে ঢুকেছি। আপনি অনুগ্রহপূর্বক আপনার নিরাপত্তা আরও জোরদারের ব্যবস্থা করুন!” প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধু তাচ্ছিল্যের সুরে নানাকে মৃদু ধমকের সুরে বসিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “তুই এইসবের কি বুঝস! আমি কি কারনে, কার জন্য, কিসের আশংকায় নিরাপত্তা বাড়াবো! আমার বাঙালি কোনদিন আমার ক্ষতি করতে পারে না!” প্রতিটা বাঙ্গালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল এমন অবিচল ও অগাধ আস্থা, বাঙালি জাতিকে তিনি ঠিক এতটাই বিশ্বাস করতেন! তিনি কখনও দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি যে একদিন কোন বাঙালি নরাধমের বুলেট তার প্রাণ কেড়ে নেবে! আম্মুর মুখে প্রায়শই শুনি, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট, ঘাতকের বুলেট বঙ্গবন্ধুর প্রাণ কেড়ে নেয়ার কথা শুনে নানা উঠোনে গড়াগড়ি দিয়ে চিৎকার করে কেঁদেছেন, বারবার মূর্ছা গিয়েছেন! খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, ৮-১০ দিন কারো সাথে কথাও বলেননি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা এমন আরও অনেক স্মৃতিচারণা আছে, যার কোনটাই আমৃত্যু ভোলার নয়! এভাবেই সেই বাল্যকাল থেকে নানার আদর্শিক গুরু “শেখ সাহেব” এর কথা শুনেছি, তার বিশালতা আর মাহাত্মের যৎসামান্য ধারণা পেয়েছি, এক একটি গল্প শুনতাম আর হৃদয়-মন জুড়ে মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে পড়ত! শৈশব থেকে তাই বঙ্গবন্ধুকে অবচেতন মনেই ভালবাসার যে স্থানটিতে বসিয়েছি, যত বড় হয়েছি, যত বেশি বুঝতে শিখেছি সে স্থানটি তত বেশি দৃঢ় ও পোক্ত হয়েছে! কিছুদিন আগে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে আমার এলাকার এমপি, নৌমন্ত্রী জনাব শাহজাহান খান এর সাথে দেখা। সালাম দিয়ে বললাম, “আমি গোলাম রাব্বানী, রাজৈর এর শামসুদ্দিন আহমেদ এর নাতী।” শাহজাহান খান শুনে খুব খুশী হলেন, জানালেন, তার বাবা মরহুম আসমত আলী খান (জেলা আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি) এর সবচেয়ে কাছের লোক ছিলেন নানা। সাথে এও বললেন, বঙ্গবন্ধু আব্বার চেয়ে তোমার নানাকে বেশি ভালোবাসতো। স্মৃতিচারণ করলেন, “একবার আমি আব্বা আর শামসু ভাই ধানমন্ডী ৩২ এ বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলাম। আমরা ড্রইংরুমে বসে অপেক্ষা করছি। বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে আমাদের দেখে শামসু ভাই এর নাম ধরে ডাকলেন, কিরে শামসু কেমন আছস? এরপর নিচে নেমে আমার আর আব্বার সাথে করমর্দন করে বসতে বলে শামসু ভাই এর গলা জড়িয়ে তাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন! আব্বা হেসে বললেন,
শেখ সাব শামসুরে একটু বেশি আদর করে।” ওই মুহূর্তে কথাগুলো শুনে যে কতটা ভালো লাগছিলো তা বলে বোঝাতে পারবো না! নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছিলো, এমন একজন এর সান্নিধ্যে আমার শৈশব কেটেছে যিনি সত্যিকার অর্থেই জাতির জনকের অকৃত্রিম স্নেহ-ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন। আমার নানা ২০০৬ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন, আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে ঘটনাটি আমার মনে একদম স্থায়ী দাগ কেটে গেছে, আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে, তা নানার মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে। নানা জীবনসায়াহ্নে এসে মস্তিষ্কের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, মেডিকেল টার্মে যাকে বলা হয়,
“ব্রেণ হ্যামারেজ”! কাউকেই ঠিকমত চিনতে পারতেন না, আমি, আম্মু আর বড় মামাকে দেখলে শুধু নাম ধরে ডাকতেন। একদিন আম্মু নানার বিছানার পাশে বসে তাদের ছয় ভাইবোনের সবার ছোট পলাশ মামাকে দেখিয়ে বললেন,আব্বা এই যে কে বলেনতো? নানু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার নাম ধরে মামাকে ডাকল!
মামা একদম কেঁদেই ফেললো, দৌড়ে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। কিছুক্ষণ পর, আম্মু দেয়ালে টাঙানো বঙ্গবন্ধুর তর্জনী উঁচু করা ছবিটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, উনি কে আব্বা? নানা খুব স্বাভাবিক ভাবে মানুষের মত ছবির দিকে তাকিয়ে হেসে আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি ওনাকে চেনো না মা? উনি তো আমাদের “শেখ সাব!” আমি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে নানার শেখ সাহেবের ছবির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম! একবার ভেবে দেখুন, একজন মানুষকে ঠিক কতটা ভা্লবাসলে, একজন নেতার আদর্শকে কতটা গভীর ভাবে অন্তরের অন্তঃস্থলে ধারণ করলে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে চিনতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুকে চিনতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি! পরিবারের অতি আপনজনের স্মৃতিও মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে গেছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি এতটুকু প্রবঞ্চনা করে নি! কারণ ওটা যে মস্তিষ্কে নয়, হৃদয়ে গ্রোথিত ছিল!
 

সেদিনের পর থেকে বঙ্গবন্ধুকে আজীবন ভালবেসে যেতে, সত্যিকার মুজিবসেনা হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকের গহীনে ধারণ করে পথ চলার অঙ্গীকার করতে আমার আর কোন প্রেরণা, আর কোন কারণের প্রয়োজন হয় নি!আমার সাফ কথা, যতদিন সুযোগ পাবো, পাওয়া না পাওয়ার হিসেব না মিলিয়ে, সকল ব্যক্তিস্বার্থকে তুচ্ছজ্ঞান করে, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ” এর একজন কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধু তনয়া, জননেত্রী শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ রাখতে সকল আন্দোলন-লড়াই-সংগ্রামে রাজপথ থাকবো! আর যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে “বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ” এর জন্য আমার স্বীয় অবস্থান থেকে কাজ করে যাব! কারণ একটাই, ওটা বঙ্গবন্ধুর দল!

যতদিন রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরী-মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান!

 
লেখক: সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।