অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হলো ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের আলোচনা

কোনো অগ্রগতি ছাড়াই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সর্বশেষ পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা। স্থানীয় সময় রবিবার (৬ জুলাই) কাতারের দোহায় দুটি আলাদা ভবনে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, আলোচনা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে। কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দুপক্ষের মধ্যে বার্তা ও ব্যাখ্যা বিনিময় হয়, তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আলোচনার পরবর্তী ধাপ সোমবার (৭ জুলাই) আবার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুপক্ষের মধ্যকার বাধাগুলো দূর করে সমঝোতার পথ খুঁজতে মধ্যস্থতাকারীরা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার বক্তব্য জানিয়েছে বিবিসি। এতে বলা হয়, ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল ‘যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন’ ছিল না, কারণ তাদের কাছে ‘বাস্তবিক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা’ ছিল না।
এমন এক সময় এ আলোচনা চলছে, যখন ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বৈঠকটি যুদ্ধবিরতি ও গাজায় আটক অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অর্জনের জন্য তিনি তার আলোচকদের ‘পরিষ্কার নির্দেশনা’ দিয়েছেন, যা ইসরায়েলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য।
এদিকে, সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ দেখানোর দাবি করেছে হামাস। তবে এখনও দুপক্ষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যা দূর না হলে চুক্তি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য হামাসের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো—যেকোনো সমঝোতার শেষে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা। এ অবস্থানে তারা এখনও অনড়।
তবে নেতানিয়াহুর সরকার এর আগেও এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এখনও ইসরায়েলি অবস্থানে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হওয়ার আগে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি এখনো তিনটি লক্ষ্যেই অটল—‘সব জিম্মি, জীবিত ও মৃতদের মুক্তি ও প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা; হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করে গাজা থেকে উৎখাত করা; এবং গাজা যেন আর কখনোই ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়, তা নিশ্চিত করা।’
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের জন্য এই পরোক্ষ আলোচনা সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মার্চের আগের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে এ ধরনের নানা উদ্যোগ একই জায়গায় এসে আটকে গেছে।
সেই সময় থেকে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র সামরিক অভিযান শুরু করেছে। পাশাপাশি গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর ১১ সপ্তাহের অবরোধও আরোপ করে, যা কয়েক সপ্তাহ আগে আংশিকভাবে শিথিল করা হয়।
ইসরায়েলি সরকার বলছে, এসব পদক্ষেপ হামাসকে আরও দুর্বল করা এবং তাদেরকে আলোচনায় বসতে ও জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধ্য করতেই নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা হামাসের ১৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
তবে গাজায় বেসামরিক প্রাণহানির সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় রবিবার অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো— কাতারে চলমান এই আলোচনা কি সত্যিই দুপক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে? আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে রাজি করাতে পারবেন যে, এই যুদ্ধের ইতি টানতে হবে?
ইসরায়েলের অনেকেই মনে করছেন, অবশিষ্ট জিম্মিদের বাঁচাতে যুদ্ধ বন্ধের মূল্য দেওয়ার এখনই সময়।
শনিবার রাতেও তারা জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। এ সময় দ্রুত চুক্তি করে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানান তারা।