ঢাকা শনিবার, ২৮শে জুন ২০২৫, ১৫ই আষাঢ় ১৪৩২


‘চোরাই গম’ কেনা বাংলাদেশি কোম্পানির শাস্তি চায় ইউক্রেইন


২৮ জুন ২০২৫ ১৩:৫৮

আপডেট:
২৮ জুন ২০২৫ ২০:৫৩

ছবি: রয়টার্স

‘চোরাই গম’ আমদানি করার অভিযোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অনুরোধ জানাবে ইউক্রেইন। দেশটির এক কূটনীতিকের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইউক্রেইনে রাশিয়ার দখলকৃত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো এসব ‘চোরাই গম’ আমদানি করছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় দায়িত্ব পালন করা ওই কূটনীতিক বলছেন, এ বিষয়ে সতর্ক করার পরও বাংলাদেশ সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

২০২২ সালে যুদ্ধ বাধার আগ থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের শস্য চুরি করার অভিযোগ করে আসছে কিয়েভ। কারণ ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তৃত কৃষিভূমি ২০১৪ সাল থেকেই রুশ বাহিনীর দখলে রয়েছে।

রুশ কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, এখানে শস্য চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, যেসব অঞ্চল আগে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো, সেগুলো এখন রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত এবং চিরকাল তেমনটাই থাকবে।

ঘটনার বিষয়ে অবগত একাধিক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন, নয়াদিল্লির ইউক্রেইন দূতাবাস এ বছর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছে।

এসব চিঠিতে ইউক্রেইন অনুরোধ করেছে, রাশিয়ার ক্যাভকাজ বন্দর থেকে পাঠানো প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টনের শস্যের চালান যেন ঢাকা গ্রহণ না করে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, এসব গম চুরি করা হয়েছে।

ভারতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলেকসান্দার পোলিশচুক বলছেন, কিয়েভের তরফে যোগাযোগ করা হলেও ঢাকা কোনো সাড়া দেয়নি। ফলে বিষয়টি তারা আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবেন।

ইউক্রেইনের গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে তিনি বলেন, রাশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চল থেকে গম সংগ্রহ করছে। এরপর রাশিয়ার গমের সঙ্গে মিশিয়ে সেগুলো রপ্তানি করছে তারা। এটা একটা অপরাধ। আমরা নিজেদের তদন্তের বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহকর্মীদের সামনে তুলে ধরব এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাব।

ইউক্রেইনের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক টানাপড়েন আগে কখনো সামনে আসেনি। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া চেয়ে অনুরোধ জানানো হলেও বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো জবাব দেয়নি। তবে বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া থেকে আসা কোনো গম যদি অধিকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চলের হয়, তাহলে ঢাকা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। বাংলাদেশ কোনো ‘চোরাই গম’ আমদানি করে না বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।

ইউক্রেইনের কৃষিখাত তাদের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। দেশটি বিভিন্ন দেশে গম, ভেজিটেবল অয়েল ও তেলবীজ সরবরাহ করে। চলতি বছরের এপ্রিলে নিজেদের জলসীমায় একটি বিদেশি জাহাজ আটক করে ইউক্রেইন। তাদের অভিযোগ, জাহাজটি চুরি হওয়া গমের বাণিজ্যে জড়িত। আগের বছরও ইউক্রেইন একই সন্দেহে একটি বিদেশি কার্গো জাহাজ আটক করে।

ইইউ এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ৩৪২টি জাহাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এসব জাহাজ তেল, অস্ত্র ও গম পরিবহনের মাধ্যমে রাশিয়াকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করছে।

ইউক্রেইনের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তাদের আইন অনুযায়ী, দেশটির উৎপাদককারী, বিশেষ করে রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলের গম চাষিদের সঙ্গে রুশ কোম্পানির বাণিজ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রয়টার্স বলছে, নয়া দিল্লির ইউক্রেন দূতাবাস থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো চারটি চিঠি তারা পর্যালোচনা করে দেখেছে।

যেসব জাহাজ ‘চোরাই গম’ পরিবহনে জড়িত, তাদের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর এসব চিঠিতে দেওয়া আছে। চিঠিগুলোতে যে দিনক্ষণ দেওয়া আছে, তাতে ‘চোরাই গম’ সরবরাহের ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে।