উঠে দাঁড়াল শয্যাশায়ী শেয়ারবাজার

অবশেষে ঘুরে দাঁড়াল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচকটির রোববার ইতিহাসের সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে। এদিন ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৩২ পয়েন্ট। যা সূচকটি চালু হওয়ার সাত বছরের মধ্যে একদিনের ব্যবধানে সর্বোচ্চ উত্থান। অনলাইন নিউজ পোর্টাল
"বিজনেস ট্রিবিউন" এর এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ডিএসইতে ডিএসইএক্স সূচকটি ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ৪০৫৬ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এরপরে বিগত সাত বছরের মধ্যে সূচকটির আজ সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে। এই সূচকটির একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান হয় ১৫৫ পয়েন্ট।
যা ২০১৫ সালের ১০ মে হয়েছিল। অন্যদিকে উভয় শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে।
প্রায় এক বছর ধরে শেয়ারবাজার মন্দাবস্থায় ছিল।
এতে বিনিয়োগকারীদের নাভিশ^াস উঠে যায়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ১৬ জানুয়ারি উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং কয়েকটি নির্দেশনা দেন।
যা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইয়াসির আজমানকে নিয়োগ ও তারল্য সঙ্কট নিরসনে সরকারি চার ব্যাংকের বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ভূমিকা ফেলে। এসব খবরে রোববার ডিএসইএক্স সূচকটির রেকর্ড উত্থান হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণে শেয়ারবাজারের গতি ফিরে পেয়েছে মন্তব্য করে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, শেয়ারবাজারে সূচক এমনিতেই নিচে নেমে গেছে সুতরাং ওঠাটা স্বাভাবিক। তবে শেয়ারবাজার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো শেয়াবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যেসব বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এবং সরকারের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে নিয়ে আসা, ব্যাংকগুলোকে সহায়তা প্রদান, আইসিবি নতুন করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত এসব নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার খবরে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, যাদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে তারা ঠিকমতো কাজ করে না। সুতরাং শেয়ারবাজার এখন থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। তবে সরকারের ভালো কোম্পানিগুলো এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আসবে না ততক্ষণ পর্যন্ত শেয়ারবাজার স্থায়ীভাবে গতি ফিরে পাবে না।
রোববার ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৫৭, ডিএসই-৩০ সূচক ৮১ এবং নতুন চালু হওয়া সিডিএসইটি সূচক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৯৮, ১৪৮৭ ও ৮৯২ পয়েন্টে। ডিএসইতে রোববার টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৪১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ১৪৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৬৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার।
ডিএসইতে রোববার ৩৫৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪৬টির বা ৯৭ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ছয়টির বা ২ শতাংশের এবং চারটি বা ১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মার শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা সিঙ্গারের ১৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার এবং ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে লাফার্জহোলসিম। ডিএসইর টপটেন লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে : খুলনা পাওয়ার, এসএস স্টিল, গ্রামীণফোন, এডিএন টেলিকম, এনসিসি ব্যাংক, রিং শাইন এবং ব্যাংক এশিয়া।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৬৭৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২৭৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাতবদল হওয়া ২৫৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৩১টির, কমেছে ১৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির দর। রোববার সিএসইতে ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।