আওয়ামী লীগের সম্মেলন, আলোচনায় এক ঝাঁক তরুণ নেতা

ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরু দায়িত্ব পালন করা ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা, যারা আওয়ামী লীগের দুর্দিনে বুক চিতিয়ে লড়েছেন; এবার এমন একঝাঁক তরুণের ঠাঁই হতে চলেছে দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
৮১ সদস্যের বর্তমান কমিটি থেকে ছিটকে পড়বেন নিস্ক্রিয় ও অভিযুক্ত বড় একটি অংশ। সেই শূন্যস্থান পূরণ হবে এসব পরীক্ষিত মাঠকর্মী দিয়ে। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও সুযোগ না থাকায় এসব নেতাদের মূল দলে জায়গা দেয়া যায়নি।
তবে বিভিন্নভাবে দলের সঙ্গে থেকে কাজ করে গেছেন নিভৃতে। দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে কপাল খুলছে সেসব নিঃস্বার্থ কর্মীদের।
পদপ্রত্যাশী এসব ছাত্রনেতারা এবার নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন। আশা রাখছেন দলের শেষ আশ্রয়স্থল শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাবেক এসব ছাত্রনেতাদের পদচারণা বেড়েছে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, প্রতিটি সম্মেলনেই কিছু না কিছু চমক থাকে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার ক্যারিশমেটিক লিডারশিপে এমন অনেককে নেতৃত্বে পদ দেন যা পরবর্তী সময়ে প্রশংসিত হয়।
তিনি মূলত এসব বিষয় নিয়ে বছরব্যাপী হোমওয়ার্ক করেন। সেই হোমওয়ার্কেরই একটা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে সম্মেলনের নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় দেখা মেলে। ত্যাগ-তিতীক্ষার মূল্যায়ন নেত্রী বিগত সম্মেলনগুলোতেও দিয়েছেন। এবার আরো বেশি সতর্ক আছেন। কারণ, দলের মধ্যে তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘এই সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে গুণগত একটা পরিবর্তন আসবে।
ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে কিন্তু একটা বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তন এসেছে এবং বিভিন্ন জেলায় যে সমস্ত কমিটি হয়েছে সেখানেও পরিবর্তনের এই ঢেউ লেগেছে।
নেত্রী সবসময় ত্যাগী ও দুর্দিনের কর্মীদের উঠিয়ে এনেছেন। এবারো এর ব্যতিক্রম হবে না। বরং এ বিষয়টিকে তিনি আরো বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।’
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলটির ২১তম জাতীয় কাউন্সিল। দলীয় সূত্র বলছে, এই সম্মেলনে কমিটি থেকে বাদ পড়বেন অনেক ‘প্রভাবশালী ও হেভিওয়েট’ নেতা।
যার সংখ্যা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি হতে পারে। দলের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদে এবার ব্যাপক রদবদল আনা হবে।
কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি অংশ জায়গা পাচ্ছে। নতুন মুখ ও নতুন নেতৃত্বের যে প্রত্যাশা নেতাকর্মীরা করছেন, এর প্রতিফলন ঘটবে এতে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের ৮১ সদস্যের কমিটিতে প্রায় ২৫ জন তরুণকে নেতৃত্বে আনা হয়েছিল।
যারা বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসেবে সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে যারা দীর্ঘ দিন ধরে দলে কাজ করলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাননি, তারা এবারের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন।
সারাদেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারে বলে অনেকে মনে করছে, তাদের মধ্যে- ঢাকা অঞ্চলে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক ছাত্রনেতা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বাবু নির্মল গোস্বামী, সহ সভাপতি মঞ্জুরুল লাভলু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুন, সাবেক সহ সভাপতি ইশতিয়াক শিমুল, সাবেক ছাত্রনেতা মাকসুদুল আলম ডাবলু, কেন্দ্রীয় সদস্য কৃষিবিদ দীপক কুমার বনিক দীপু, সাবেক সহ সভাপতি শাহাব উদ্দিন ফরাজী, সাবেক স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লা আল মামুন, সাবেক সহ সভাপতি সুজাত রহমান, ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাত হোসেন, ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মেহেদী, সাবেক সহ সভাপতি রাশেদুল মাহমুদ রাসেল, সাবেক সদস্য তারেক সামস হিমু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম মোস্তাক-এর কথা ভাবা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে থাকতে পারেন- ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুদ্দিন হাছান চৌধুরী, সাবেক সহ সভাপতি মহিউদ্দিন হেলাল, আন্তর্জাতিক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কায়সার আহম্মেদের মেয়ে ওয়াসফিয়া খানম, ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সাইফুদ্দিন আহম্মেদ ভুঁইয়া নাসির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন নাসিম, সাবেক সহ সভাপতি প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সাবেক সহ সভাপতি লুৎফুন্নাহার মুন্নি, ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আনসারী, সহ-সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন, চাঁদপুরের এমপি রুহুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সাবেক সহ সভাপতি সাহাবুদ্দিন ফরায়েজী।
রংপুর অঞ্চলে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান ফিজা, আমেনা বেগম কোহিনুর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক পিএস ১ ও ঢাকা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সেলিমা খাতুন (ওয়াজেদ মিয়ার ভাগ্নি), আওয়ামী লীগের ট্রেজারার আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমান প্রমুখ।
রাজশাহী অঞ্চলে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুল ইসলাম পল, সাবেক সহ সভাপতি মাজহারুল ইসলাম মানিক, সাবেক প্রচার সম্পাদক আরিফুর রহমান উজ্জল।
খুলনা অঞ্চলের মধ্যে সাবেক সহ সভাপতি অসিত বরণ বিশ্বাস, সাবেক দপ্তর নাসিম আল মুমিন রুপক, সাবেক সদস্য সুভাস সিংহ রায়, সাবেক সদস্য রাশেদুল বাসার ডলার, সাবেক সহ সভাপতি তারেক আল মামুন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, সাবেক সহ সভাপতি জয়দেব নন্দী।
বরিশাল অঞ্চলে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সাবেক সহ সভাপতি আতাউর রহমান আতা, সাবেক সহ সভাপতি বলরাম পোদ্দার, সাবেক সহ সভাপতি সম্পাদক আনিসুর রহমান, সাবেক ধর্ম সম্পাদক হেমায়েত হোসেন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান, মৈত্রী হলের সাবেক সভাপতি রোজিনা রোজী, সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান মনির, সাবেক সদস্য রুবিনা মিরা, ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে আজিম, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা।
সিলেট অঞ্চলে সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী সারোয়ার হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, কেন্দ্রীয় উপকমিটির দুইবারের সহ-সম্পাদক মোঃ আরিফুল হাই রাজীব প্রমুখ।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে ডাকসুর সাবেক সম্পাদক মঞ্জুর কাদের কোরাইশী, সাবেক ছাত্রনেতা শফি আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোস্তফা আলমগীর, সাবেক অর্থ সম্পাদক মোরশেদুজ্জামান সেলিম, সাবেক সহ সম্পাদক আলমগীর হাসান, ভিপি লিটন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমনান টুটুল আলোচনায় রয়েছেন।
এছাড়া খালেদ মোশারফের মেয়ে মেহেজাবিন খালেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর, নারায়ণগঞ্জের মেয়র আইভি রহমান, সাবেক সহ সম্পাদক গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গির, ময়েজ উদ্দিনের মেয়ে সাংসদ মেহের আফরুজ চুমকী, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান মডেল ফয়সাল, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাঈম রাজ্জাক, ব্যারিস্টার ফারজানার নামও আলোচনায় রয়েছে।