ছাত্রদলের শীর্ষ পদে একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ!

বিএনপির ভ্যানগার্ড নামে পরিচিত ছাত্রদল। এক সময়ের প্রতাপশালী এই সংগঠনটির বর্তমানে ভঙ্গুর অবস্থা। কোথাও নেই তারা। বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’ খ্যাত সংগঠন ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভেঙে পড়েছে সংগঠনটির চেইন অব কমান্ড। সাংগঠনিক কার্যক্রমে এসেছে স্থবিরতা।
আগামী ১৪ই সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের আসন্ন ষষ্ঠ কাউন্সিলে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের কেউই নিজ ইউনিট কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া তৃণমূলে খুব বেশি পরিচিত নন। অথচ তাদের মধ্য থেকেই এবার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন ছাত্রদলের।
দীর্ঘ ২৭ বছর পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এ কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। অবশ্য পরিচিতি বাড়াতে পদপ্রত্যাশীরা তৃণমূলে নানাভাবে যোগাযোগ করছেন। এছাড়া নিজস্ব এলাকাতন্ত্র এবং লবিংয়েও জোর দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ১১০ প্রার্থী। এর মধ্যে জমা দিয়ছেন ৭৬ জন। এরমধ্যে অনেকেই বিবাহিত বলে অভিযোগ উঠেছে।
সভাপতি পদপ্রত্যাশী যাদের নামে বিয়ের অভিযোগ রয়েছে তারা হলেন: আল মেহেদী তালুকদার, আরাফাত বিল্লা খান, আসাদুল আলম, আব্বাস আলী, মাইনুল ইসলা্ম, বিশ্বজিৎ ভদ্র, নজরুল ইসলাম নাহি্দ, শিহাবুর রহমান, আরজ আলী।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী যাদের নামে বিয়ের অভিযোগ রয়েছে তারা হলেন: নাদিয়া পারভিন, সিরাজুল ইসলা্ম, মাহমুদুল আলম শাহীন, শাহ নেওয়াজ, সাজ্জাদ ইসলা্ম, সাজ্জাদ হোসেন রুবেল, বাবুল আক্তার, আব্দুল মান্নান, তাবিবুর রহমান, শেখ আবু তাহের, জুবায়ের আলম মাহমুদ রিজভী, জুলহাস উদ্দীন।
অভিযোগ নিয়ে মেহেদী বলেন, আমার জনপ্রিয়তা দেখে অনেকে ইর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তবে এ ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
এছাড়াও আরও অনেক পদপ্রার্থী নামে রয়েছে নানান অভিযোগ। সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে । তিনি কিছুদিন আগে মামলায় কারাগার থেকে বের হয়েছেন। সংস্কারপন্থী হিসেবে অভিযোগ রয়েছে আসাদুল আলম টিটু , সাইফ মাহমুদ জুয়েলে ও তানজিল হাসানের বিরুদ্ধে। আমিরুল ইসলাম সাগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কাছে তথ্য পাচার করতেন। ২০১৮ সালে তাকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এবার নতুন নিয়ম অনুযায়ী শীর্ষ দুটি পদে লড়তে হলে প্রার্থীদের অবিবাহিত হওয়াসহ যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে তাতে শঙ্কায় পড়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক অনেকেই। এছাড়া ২০০০ সালের আগে এসএসসি পাস করেছেন এমন কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না এমন শর্তের সাথে এসএসসির রেজিস্ট্রেশন ১৯৯৮ সালের আগে নয়, এমন শর্ত যোগ করেছেন কাউন্সিলের আয়োজকরা।
ফলে ছাত্রদলের কাণ্ডারি হতে ভোটযুদ্ধে শামিল হওয়ার আগে বড় ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে বাছাইপর্ব পার হওয়াও।
আপিল কমিটির প্রধান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান বলেছেন, ‘এবার দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একটি ছাত্রত্ব, অন্যটি অবিবাহিত। বাছাই কমিটি দুটি বিষয়ে কাগজপত্র চাইবে।’
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘আমি যতক্ষণ পর্যন্ত আছি, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, শেষ বিন্দু দিয়ে চেষ্টা করব, সেটা ঠিকমতো পালন করতে।’
‘নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। তবে দায়িত্ব পালনের সময় সেই পছন্দ, অপছন্দ এখানে প্রাধান্য পাবে না, এই গ্যারান্টি আমি দিতে পারি,’— বলেন খায়রুল কবির খোকন।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুন ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এই কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর।আর কমিটিতে মোট ৭৩৬ জনকে পদ দেওয়া হয়েছিল। এতে সভাপতি ছিলেন রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আকরামুল হাসান।