ঢাকা সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২


‘মইরা যাওনের আগে শেখের বেটিরে ভোটটা দিয়া যাই’


৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৯

আপডেট:
১২ মে ২০২৫ ০৬:৩২

‘মইরা যাওনের আগে শেখের বেটিরে ভোটটা দিয়া যাই’

ঢাকা: বয়স হইছে, যেকোনো সময় মইরা যামু, কিন্তু তার আগে শেখের বেটি হাসিনারে ভোটটা দিয়া যাইতে চাই—বলছিলেন রূপজান বিবি। তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবরে ভোট দিয়া নেতা বানাইছিলাম, কিন্তু তারে সবসহ মাইরা ফেলাইলো। যে মাইয়াডা বাঁইচা রইলো তারে যদি ভোট না দেই, তাইলে ক্যামনে হবো’—হাঁটতে হাঁটতে বলে চলেন রূপজান বিবি।

ঢাকা আসন-১৫ আসনের ৪ নম্বার ওয়ার্ডের আলী হাসান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কথা হয় রূপজান বিবির সঙ্গে। বয়সের ভারে ন্যূব্জ। চেহারায় স্পষ্ট মলিনতা, গায়ে ময়লা পুরনো একটি শাড়ির ওপর কালো বোরখা পরা। তার ওপরে নীল-সবুজ চাঁদর ও হলুদ সুতি কাপড়ের ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা। পায়ে জুতো-মোজা।‘মইরা যাওনের আগে শেখের বেটিরে ভোটটা দিয়া যাই’

হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল, খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছিলেন, হোঁচট খাচ্ছিলেন বারবার। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আফারোজা বেগম তাকে ধরে ধরে ভোটকক্ষে নিয়ে আসেন, অসুস্থ অবস্থা দেখে কেন্দ্র থেকে আরও কয়েকজন নারী এসে তাকে ধরে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যান এবং লাইন ছাড়াই তাকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেন দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা।

ভোটকেন্দ্র থেকে বের হবার পর এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রূপজান বিবির। বাম হাতে আফরোজা বেগমকে ধরে হাঁটছিলেন, তারপরও হোঁচট খাচ্ছিলেন বারবার। হাত বাড়াতেই এ প্রতিবেদকের হাত ধরেন তিনি। হাঁটতে হাঁটতে এসব কথা বলছিলেন তিনি।

রূপজান বিবি বলেন, গণ্ডগোলের সময় অনেক কষ্ট করেছি, শেখ মুজিবরে ভোট দিয়া নেতা বানাইছি তাই তার মাইয়ারেও ভোটটা দিমু।

বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জন্মই এই জায়গায়। পুরা ১৩ নম্বর বলতে গেলে আমার বাপ-দাদার। কিন্তু একটা পয়সার কিছু পাই নাই, সব বিহারীরা দখল কইরা নিয়া গেছে, আমরা কিছু পাই নাই’— বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন রূপজান বিবি।

বয়স কতো বলতে পারবেন কি-না প্রশ্নে বলেন, ‘লেহাপড়া করি নাই, বয়স কইতে পারুম না। তবে যুদ্ধের সময় বিয়া হইছে, পোলাপাইনও হইছে দুইটা’।

তাহলে এ অবস্থায় একা একা কেন ভোট দিতে এলেন—জানতে চাইলে বলেন, বাবা-মা জন্মের পরই মইরা গেছে, ভাই-বোন নাই। বড় হইছেন কার কাছে জানতে চাইলে ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আল্লায় বড় করছে। আর কিছু কইতে পারুম না, কতা কইলে কী ট্যাকা–পয়সা দিবেন কিছু, পাল্টা প্রশ্ন তার। এর সঙ্গে রূপজান বিবি যোগ করেন, কত দেখামু, কতো পয়সা পামু—এত পয়সা কই পামু। গরু-বাছুর পাইলা ছেলে-মেয়ে মানুষ করছি। কিন্তু ছেলে-মেয়েরা…….কথা আর শেষ করলেন না তিনি।


তবে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তিনি বলেন, হাঁটতে পারি না, পায়ে ব্যথা, চোখে দেখি না, টাকার জন্য হাসপাতালে যাইতে পারি না।

এ অবস্থায় কেনো ভোট দিতে এলেন জানতে চাইলে রূপজান বিবি বলেন, ‘শেখ মুজিবের সময়ও বাড়িতন থেকে বাইরা গেছি, বিহারীরা বাড়ি-ঘর সব ভাইঙ্গা-চুইরা ফালাইছে, সব শেষ করছে। তারপর দেশ স্বাধীন হইছে আবার আইছি। কিন্তু ভাগ্য বদলায় নাই, সেই ভাইঙ্গাচুরা রইয়া গেছে। তবুও আইছি, গণ্ডগোলের সময় শেখ মুজিবের জন্য করছি, আর কয়দিন পরতো মইরা যামু, মইরা যাওনের আগে শেখের বেটি হাসিনারে ভোটটা দিয়া গেলাম’—বলেন রূপজান বিবি।

একই অবস্থা বাতাসী বেগমের। মীরপুর ১৩ নাম্বারের ভেতরেই থাকেন। ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য রিকশা পাননি, হেঁটে হেঁটে এসেছেন ভোট দিতে। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মী তাকে ধরে ধরে বাইরে থেকে এনে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে ঢোকেন। এর আগেও ভোট দিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগেও নৌকাতে ভোট দিছি, এবারও নৌকাতেই ভোট দিমু।

ঢাকা-১৫ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। এই আসনে মোট ভোটার ৮৮ হাজার, কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৩টি। এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি শফিকুর রহমান। কিন্তু পুরো ১৫ আসন ঘুরে কোথাও অন্য কোনো প্রার্থীর সমর্থকদের দেখা যায়নি।

কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কেবল নৌকা প্রতীকের কর্মীরা প্রায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সামনে অবস্থান করছেন। এ সময় সেনাবাহিনীকে টহল দিতেও দেখা যায়, ছিল বিজিবি এবং পুলিশ সদস্যরাও।