ঢাকা রবিবার, ২৯শে জুন ২০২৫, ১৬ই আষাঢ় ১৪৩২


প্রধান উপদেষ্টা-সিইসি বৈঠক

সবার নজর ইসিতে


২৯ জুন ২০২৫ ১০:৪১

আপডেট:
২৯ জুন ২০২৫ ১৬:১৬

ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের ‘একান্ত বৈঠকের’ পর এখন জাতীয় নির্বাচনের পথনকশার ঘোষণা কখন সেই আলোচনা সামনে এসেছে।

সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তা জানতে রোববার সবার নজর থাকবে নির্বাচন কমিশনে।

নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটির কাছ থেকে ভোটের সময় নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণাকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছেন একজন বিশ্লেষক।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৃহস্পতিবার সিইসির বৈঠকের পর এখন ভোটের সময় নিয়ে ইসির পথনকশা এলে ‘জনমনে স্বস্তি’ আসবে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে এখন একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা এবং এটার সময়ভিত্তিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি। সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে একটা রোডম্যাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোডম্যাপ দিলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি আসবে। যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে মানুষের মধ্যে তা আর থাকবে না।”

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নতুন গঠিত এ নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই নিজেদের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। সরকারের ঘোষণার পর প্রথম দিকে আগামী ডিসেম্বর-জুনের সময়কে বিবেচনায় নিয়ে কর্মপরিকল্পনা এগোচ্ছিল।

পরে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা আসে। এর এক সপ্তাহের মাথায় সব প্রস্তুতি সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের সম্ভাবনা তৈরি হয় লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যৌথ বিবৃতিতে।

ওই বৈঠকের পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান যৌথ বিবৃতি তুলে ধরে বলেন, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছিলেন, ”নির্বাচন কমিশন আশা করি শিগগির একটা তারিখ ঘোষণা করবে।”

এরপর ১৫ জুন সিইসি নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তা না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেছিলেন, ”আমরা প্রস্তুতি নিয়ে ভাবছি, যখনই হয় যেন নির্বাচনটা ডেলিভার করতে পারি।”

কাজের ফর্দ তুলে ধরে তিনি বলেন, ”আমরা প্রস্তুতির জন্য কী কী করতে হবে নোট করে নিয়েছি। প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। যখন সরকারের সাথে কথা বলব, তখন একটা ভাব বুঝতে পারব। তখন একটা তারিখ তখন সেটা করব।

”তারিখ নিয়ে অমুক দিন ইলেকশন হবে, সেটা এখন ঘোষণা করতে পারবেন না।”

এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন সিইসি। পাঁচ সদস্যের ইসির মধ্যে সিইসি একই সাক্ষাৎ করেন। ওই একান্ত বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তও জানা যায়নি। এ নিয়ে সিইসি কথাও বলেননি। রোববার নির্বাচন কমিশনে পাঁচ সদস্যের মধ্যে আলোচনার পর এ নিয়ে কথা বলতে পারেন বলে আভাস মিলেছে।

শুক্রবার এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন “এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। সৌজন্য সাক্ষাতে, যেহেতু নির্বাচন বিষয় এখন জড়িত, কাজেই নির্বাচনের ব্যাপারে তো আলাপ হতেই পারে। আমার মনে হয়, আমাদের সার্বিক অগ্রগতি কী এই ব্যাপারে হয়তো আলাপ হয়েছে।”

ইসির সামনে এখন যত কাজ

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক কাজের মধ্যে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ ও চূড়ান্ত, দল নিবন্ধনের আবেদনের যাচাই বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা অন্যতম। পাশাপাশি সীমানা নির্ধারণের আবেদন এবং দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি করা, আইন-বিধি সংস্কার ও আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আমলে নেওয়া, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত, প্রবাসীদের ভোটাধিকারের পদ্ধতি চূড়ান্ত ও প্রয়োগের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।

নতুন দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে শাপলা প্রতীক নিয়েও আলোচনা হচ্ছে- যা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এটির বরাদ্দ চাওয়ায তা নিয়ে কৌতুহলও রয়েছে সবার।

এছাড়া সংস্কার হওয়া আইন-বিধি অনুযায়ী নির্বাচনি কাগজপত্র মুদ্রণ, ম্যানুয়াল তৈরি, বাজেট বরাদ্দ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নিবাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা ও উপযোগী করা, আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা, নির্বাচনের জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ একগুচ্ছ রয়েছে।

তফসিল ঘোষণার আগে-পরে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপসহ সময়ভিত্তিক কাজের কর্মপরিকল্পনাও বরাবরই করে থাকে ইসি সচিবালয়।

নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ভোট প্রস্তুতির অগ্রগতির বিষয়ে বলেন, ইসি সচিবালয়ের প্রস্তুতি চলছে, প্রতিটি দিনই নির্বাচনি প্রস্তুতির দিন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেনাকাটার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রযেছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত পেলে সময়মত কাজ শেষ করার সব প্রস্তুতি রয়েছে।

সবার নজর এখন ইসির দিকে

নির্বাচন বিশ্লেষক ও বিগত নির্বাচনে দুর্নীতির অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, “অফিসিয়াল কোনো ঘোষণা তো পাওয়া যায়নি সরকার থেকে। লন্ডন মিটিংয়ে হয়েছে, কিন্তু অফিসিয়ালি কোনো কিছু বলা হয়নি। এমনও তো হতে পারে, সরকার চাইছে নির্বাচন কমিশন কাজটা (ভোটের সময়) করুক, যেহেতু ইসি করে। ইসি স্বাধীন, নির্বাচন কমিশন যে তারিখ মনে করে, সে তারিখে (ভোট) করবে।”

তার ভাষ্য, এ কারণে সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে এখন একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা এবং এটার বাস্তবায়ন অগ্রগতি। তা হলে সাধারণের মধ্যে আস্থাও বাড়বে আস্তে আস্তে।

“রোডম্যাপ থাকলে তো কাজ করতে সুবিধা হবে। ভোটের তারিখ ছাড়াও রোডম্যাপ হয়, যেমন ওই মাসের প্রথম সপ্তাহে বা দ্বিতীয়, তৃতীয় সপ্তাহেও হতে পারে।”