ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রডের পরিবর্তে বাঁশ

ডিজিটাল আইনের মামলায় কুষ্টিয়ার দুই সাংবাদিক কারাগারে


২ জুলাই ২০২১ ১৮:১৮

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১১:৩৪

কুষ্টিয়ায় যুবলীগ নেতার করা তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনের মামলায় মুন্সী শাহীন আহমেদ জুয়েল এবং অঞ্জন কুমার শীল শুভ নামে দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত বুধবার ভোরে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।

ওইদিন বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনে মামলা নথিভুক্ত করে সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত ওই দুই সাংবাদিকের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

গ্রেপ্তার দুই সাংবাদিকের মধ্যে মুন্সী শাহীন আহমেদ জুয়েল (৪২) স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ভয়েজ অব কুষ্টিয়া’র প্রকাশক ও সম্পাদক। আর অঞ্জন কুমার শীল শুভ (২৮) নিউজ পোর্টালটির বার্তা সম্পাদক। এ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী কুষ্টিয়া সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজু।

সম্প্রতি কুষ্টিয়া শহরে এক নারীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় হওয়া মামলায় আসামি হন যুবলীগ নেতা মিজু। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ‘ভয়েজ অব কুষ্টিয়া’য় প্রকাশ হওয়ায় তার ‘প্রতিশোধ’ নিতে যুবলীগ নেতা মিজু মিথ্যা অভিযোগে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে দাবি সাংবাদিক শুভর স্ত্রী স্মৃতি রানী শীলের।

যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজুর করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৮ জুন ‘ভয়েস অব কুষ্টিয়া’ নামে সরকারের অনুমোদনহীন একটি নিউজ পোর্টাল সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত ও ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার হীন উদ্দেশ্যে ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। ওই মিথ্যা খবরের শেষাংশে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে একটি ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহারের কথা উঠে আসে। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে গ্রেপ্তার সাংবাদিক অঞ্জন কুমার শীল শুভর স্ত্রী স্মৃতি রানী শীলের অভিযোগ, তার স্বামীকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ১১ জুন গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরে এক নারীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২১ জুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে মামলা করেন আহত ওই নারীর মা। ওই মামলার এজাহারে মিজানুর রহমান মিজুর (যুবলীগ নেতা) নাম ছিল। এ ঘটনায় নিউজ প্রকাশ হয়েছিল ভয়েস অব কুষ্টিয়ায়। ওই সংবাদের প্রতিশোধ নিতেই আমার স্বামীর বিরুদ্ধে এ বানোয়াট অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করে হয়রানি করছে।’

গ্রেপ্তার আরেক সাংবাদিক শাহীন আহমেদ জুয়েলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, ‘ভোররাতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাদের থানাপাড়ার বাসা থেকে জুয়েলকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ আমাকে বলে, জুয়েলের সঙ্গে আমরা একটু কথা বলতে চাই। কিছু তথ্য জানা দরকার সেজন্য নিয়ে যাচ্ছি। বিকেলে শুনি জুয়েলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেখুন, কুষ্টিয়া মেডিকেলের অনিয়মের বিষয়ে সারা কুষ্টিয়াবাসী জানে, আপনারাও জানেন। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তদন্তেও প্রমাণ পেয়েছে অনিয়মের কথা, সরকারের তদন্ত রিপোর্ট ধরেই ভয়েস অব কুষ্টিয়া অনলাইন পত্রিকায় নিউজ হয়েছে। মামলা যদি করতেই হয় সরকারের ওই তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে করুক। এটা হয়রানি করার জন্য মামলা করেছে।’

গ্রেপ্তার দুই সাংবাদিকের স্ত্রীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক সাব্বিরুল আলম  বলেন, ‘আগের কোনো সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে এই মামলার সম্পর্ক নেই। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে বলে একটি সংবাদ প্রকাশ করে তারা ফেইসবুকে ভাইরাল করেছে। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।’