বেগমগঞ্জের সেই নারীকে আগে দুইবার ধর্ষণ করে দেলোয়ার

বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার আগেও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে সেই নারীকে (৩৫) স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন দুইবার ধর্ষণ করেছিল। নির্যাতনের শিকার ওই নারী গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (জামাক) তদন্তদলের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন।
পরে বিকেলে জামাকের তদন্ত দলের প্রধান মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফয়জুল কবীর নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মিলনায়তনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এরপর সন্ধ্যায় নির্যাতনের শিকার ওই নারীর দেওয়া বিবরণ উল্লেখ করে বেগমগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের একটি মামলা নথিবদ্ধ করা হয়।
এদিকে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ আরও দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলার পাঁচ নম্বর আসামি সাজুকে ঢাকার শাহবাগ থেকে এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগকে একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে আলোচিত এ ঘটনায় মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়জন।
মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল-মাহমুদ ফয়জুল কবীর নোয়াখালীতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, নির্যাতিত নারীর অভিযোগ অনুযায়ী দেলোয়ার প্রায় সময় তাকে অশোভন প্রস্তাব দিত। প্রস্তাবে সাড়া দিতে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হতো। বছরখানেক আগে দেলোয়ার তার ঘরে ঢুকে তাকে প্রথমবার ধর্ষণ করে।
এরপর গেল রমজানের কিছুদিন আগে দেলোয়ার তার সহযোগী কালামের মাধ্যমে ওই নারীকে একটি নৌকায় ডেকে পাঠায়। সেখানে দেলোয়ার ও কালাম দুজনেই তাকে ধর্ষণ করতে চায়। এ সময় তিনি দেলোয়ারের কাছে অনুনয়-বিনয় করলে কালামকে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেয় দেলোয়ার। এরপর নৌকায় দ্বিতীয়বার তাকে ধর্ষণ করে দেলোয়ার।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর বরাতে আল-মাহমুদ ফয়জুল কবীর বলেন, ‘ওই নারী আমাদের কাছে দেলোয়ার কর্তৃক দুইবার ধর্ষিত হওয়ার বিবরণ দিয়েছেন। তার বিবরণ উল্লেখ করে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।’
জামাকের তদন্তদল নোয়াখালীতে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফয়জুল কবীর আরও বলেন, নারীর অভিযোগ শোনার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন। চেয়ারম্যানের পরামর্শ মতে তারা ওই নারীকে দেলোয়ার ও কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে পৃথক একটি মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে থানায় মামলা করা হয়।
কমিশনের প্যানেল আইনজীবীরা নতুন করা মামলায় আদালতে লড়বেন বলেও জানান জামাক পরিচালক।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ওই নারী এখন যেসব নতুন অভিযোগ করেছেন, সেগুলোও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ইউপি সদস্যসহ আরও দুজন গ্রেপ্তার : বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ আরও দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে মামলার ৫নং আসামি সাজুকে (২১) ঢাকার শাহবাগ থেকে এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগকে (৪৮) একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে আলোচিত এ ঘটনায় মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বেগমগঞ্জ থানার ওসি মো. হারুন উর রশীদ দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানান।
ওসি বলেন, ‘আদালতে দেওয়া ভিকটিমের জবানবন্দি অনুসারে ইউপি সদস্যকে ২২ ধারায় আটক করা হয়।’
এর আগে গত সোমবার রাতে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে নির্যাতিত গৃহবধূ বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
ইউপি সদস্যসহ দুই আসামি রিমান্ডে : নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি বাদল ও ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বেগমগঞ্জ আদালত) মাশফিকুল হকের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) গুলজার আহমেদ জুয়েল জানান, প্রধান আসামি বাদলকে আদালত নারী নির্যাতন মামলায় ৪ দিন এবং পর্নোগ্রাফি মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। অন্যদিকে বাদীর জবানবন্দির ভিত্তিতে গ্রেপ্তার ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগকে নারী নির্যাতন মামলায় ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
তিনি আরও জানান, মামলার বাদীর স্বামী প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
ধর্ষণচেষ্টা মামলার প্রধান আসামিকে বেগমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর : নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার প্রধান আসামি বাদলকে বেগমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব। গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় তাকে বেগমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী। এর আগে গত সোমবার ভোরে বাদলকে র্যাব ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে একদল যুবক ও কিশোর। ছেলের বয়সী ওইসব কিশোর-যুবকের পায়ে ধরেও রেহাই পাননি ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী। ভয়ে ৩২ দিন আগের ঘটনাটি কাউকে জানাতেও পারেননি নির্যাতিতা কিংবা তার স্বজনরা। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনার একটি ভিডিওচিত্র গত রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা জানাজানি হয়। গতকাল পর্যন্ত ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা হেফাজতে।