মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
কোটা অষ্টম গ্রেডেও থাকবে না
-2020-01-17-14-59-37.jpg)
সরকারি চাকরিতে অষ্টম থেকে তার ওপরে অর্থাৎ প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা থাকবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ‘আকাশ পথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন, ২০২০ ’, ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এর খসড়াসহ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার-সংক্রান্ত প্রতিবেদনও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই অনুমোদনের ফলে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণিতে সরাসরি নিয়োগে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের মতো প্রথম থেকে অষ্টম গ্রেডের চাকরির নিয়োগেও কোনো কোটা থাকবে না।
৯ম থেকে যত ওপরের গ্রেডেই যাক, সরাসরি নিয়োগে কোনো কোটাপদ্ধতি থাকবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, পিএসসি গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি অষ্টম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে নাকি আগের কোটাপদ্ধতি অনুসরণ করা হবে, তা স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়েছিল।
কোটা বাতিলের পরিপত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগে কোটা না রাখার বিষয়টির উল্লেখ থাকলেও ৮ম-১ম গ্রেডে নিয়োগে কোটার বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। ‘জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫’ এ শ্রেণির পরিবর্তে গ্রেড উল্লেখ করা হয়েছে এবং আগের ১ম শ্রেণির পদ বলতে ৯ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদকে বোঝানো হয়েছে।
আকাশপথে দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ বাড়ছে আকাশপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু, আঘাতপ্রাপ্ত যাত্রী, মালপত্র নষ্ট বা হারানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে একটি আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ আইন কার্যকর হলে আকাশপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, আঘাত ও মালপত্র হারিয়ে গলে যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়বে।
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলে বর্তমানে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। নতুন খসড়ায় বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ১ কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়েছে।
আকাশপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং মালপত্র নষ্ট বা হারানোর ক্ষেত্রে ওয়ারশ কনভেনশন-১৯২৯-এর আলোকে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত দ্য ক্যারেজ বাই এয়ার অ্যাক্ট, ১৯৩৪, দ্য ক্যারেজ বাই এয়ার (ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন) অ্যাক্ট, ১৯৬৬ এবং দ্য ক্যারেজ বাই এয়ার (সাপ্লিমেন্টারি কনভেনশন) অ্যাক্ট ১৯৬৮ আইন আছে।
এই তিনটি আইনে প্রাণহানি, আঘাত ও মালপত্র হারানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কম ছিল। এসব ক্ষেত্রে এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি সময় সাপেক্ষও ছিল। এ কারণে ২০১৭ সালে নেপাল প্লেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা নামমাত্র ক্ষতিপূরণ পান।
এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৯৯ সালে মন্ট্রিল কনভেনশন গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ওই কনভেনশনে ১৯৯৯ সালেই স্বাক্ষর করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ফ্লাইট বিলম্বের কারণে পরিবহনকারীর দায় ২০ ডলারের পরিবর্তে ৫ হাজার ৭৩৪ ডলার, মালপত্র নষ্ট বা হারানোর জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলারের পরিবর্তে ১ হাজার ৩৮১ ডলার, আর কার্গো নষ্ট বা হারানোর জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলারের পরিবর্তে ২৪ ডলার।
যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার সম্পত্তির বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের মধ্যে এ আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের অর্থ ভাগ করা যাবে। জরিমানা দিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি নবায়নের সুযোগ নির্ধারিত সময়ের পর জরিমানা দিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি নবায়নের সুযোগ ও শাখা খোলার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০২০’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়। প্রণীত আইনটিতে কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় ট্রাভেল এজেন্সির সেবা প্রদানে ক্ষেত্রবিশেষে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদ নবায়নের আবেদন করতে না পারলে ওই এজেন্সির নবায়নের আর সুযোগ থাকে না। মালিকানা হস্তান্তরের বিধান নেই। নিবন্ধন কর্র্তৃপক্ষের অর্থদন্ড-প্রদানের ক্ষমতা না থাকায় সামান্য অপরাধের জন্য এজেন্সির নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাভেল এজেন্সির শাখা খোলার বিধান নেই।
এ কারণে বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করাসহ আইনটির কতিপয় ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন আবেদন করা না হলে বিধি দ্বারা নির্ধারিত জরিমানা দিয়ে নবায়নের আবেদন করার বিধান রাখা হয়েছে।
ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সনদ হস্তান্তর এবং শাখা কার্যালয় স্থাপনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিবন্ধন কর্র্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইন সংশোধন করে শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ‘কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে। আইন সংশোধন হলে নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে মালিকানা হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলো অনুমোদন সাপেক্ষে শাখা অফিস খুলতে পারবে। ট্রাভেল এজেন্সি থেকে কাক্সিক্ষত সেবা প্রাপ্তি সহজ হবে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৫.২৬ শতাংশ ২০১৯ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ছিল ৭৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৯৭টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৭৩টির। ২৪টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বৈঠকে আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন ২০২০-এর খসড়া, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ আইন ২০১৯-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া ৬ এপ্রিল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবসের পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া দিবস উদযাপনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।