কানাডা থেকে এ ডিভাইস আনা হয়েছে,
সত্যমিথ্যা যাচাই যন্ত্র কিনেছে পিবিআই

পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত বিভাগ ‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’-এ যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পলিগ্রাফি ডিভাইস (সত্যমিথ্যা যাচাই যন্ত্র)।
প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকায় দুটি ও চার জেলাতে এই ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে। যেকোনো মামলার তদন্তে আসামি, বাদী ও সন্দেহভাজন মিথ্যা বললে বোঝা যাবে এ যন্ত্রের মাধ্যমে।
ফলে বিভিন্ন ক্লুলেস (সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া) মামলার তদন্তে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অপরাধী শনাক্তে তদন্তের ক্ষেত্রে পলিগ্রাফি ডিভাইসের ব্যবহার থাকলেও বাংলাদেশে নেই। ডিভাইসটি ব্যবহারের জন্য পিবিআইয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আজ থেকে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের অফিসে এ প্রশিক্ষণ হবে। পিবিআই সদর দপ্তরের নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা পলিগ্রাফি ডিভাইস স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পিবিআইপ্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কোনো কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম পলিগ্রাফি ডিভাইস স্থাপন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে চারটি ডিভাইস জেলা পর্যায়ে ও দুটি রাজধানীতে স্থাপন করা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই উত্তরের অফিসে একটি এবং বনশ্রীতে পিবিআই দক্ষিণের অফিসে একটি ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে। তবে কার্যক্রম শুরু হয়নি। পলিগ্রাফি ডিভাইস ব্যবহারের জন্য দক্ষ জনবল লাগবে। এজন্য কাল (মঙ্গলবার) থেকে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘পিবিআই ইতিমধ্যে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করে দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এ ডিভাইসের মাধ্যমে তদন্ত আরও বেগবান হবে বলে আশা করছি। যেকোনো মামলার রহস্য উদঘাটনে এ ডিভাইস সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।’
পিবিআই কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও ডিভাইসটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, কানাডা থেকে এ ডিভাইস আনা হয়েছে। যেকোনো মামলা তদন্তে আসামি, বাদী ও সন্দেহভাজন ব্যক্তির হাতের আঙুল অথবা কপালের দুই পাশে এ ডিভাইসের সংযোগ স্থাপন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে আনা এ ডিভাইসটি কপালের দুই পাশে সংযোগ স্থাপন করা হবে। তদন্ত কর্মকর্তা যখন প্রশ্ন করেন, সেই প্রশ্নের উত্তর সত্য না মিথ্যা তার পারসেন্টেজ জানিয়ে দেবে এ পলিগ্রাফি ডিভাইস।
সম্প্রতি বিভিন্ন ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটনের কারণে প্রশংসিত হয়েছে পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত বিভাগ পিবিআই। প্রায় ৩০ বছর পর গত ১৪ নভেম্বর নাটকীয়ভাবে তারা উন্মোচিত করেছে সগিরা মোর্শেদ সালাম নামে এক নারীর হত্যারহস্য। ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকেলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় বলা হয়, সেদিন রিকশায় করে যাওয়ার পথে সেই মহিলার স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় বাধা পেয়ে তাকে গুলি করে দুজন লোক। কিন্তু আসলে সেটা ছিনতাই ছিল না, ছিল এক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডÑ যার পেছনে ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব। পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার ষড়যন্ত্র উদঘাটন করেও প্রশংসিত হয় পিবিআই। গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাদে রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেলে মারা যান তিনি। মামলাটি নিয়ে স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ ওঠার পর ৯ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের ভার দেওয়া হয় পিবিআইকে। ১৩ এপ্রিল ঢাকায় পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদার সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। প্রধান আসামিরা ধরা পড়েছে। জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর বিষয়টি হত্যাকাণ্ড কি না সে বিষয়েও তদন্ত করছে পিবিআই। এছাড়া বিভিন্ন জটিল মামলা নিয়ে কাজ করছে পুলিশের বিশেষায়িত এই তদন্ত বিভাগ।