ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


শম্ভুর ছেলের ডানহাত নয়ন, রিফাতের শক্তি জেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার!


২৯ জুন ২০১৯ ১১:৩০

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০৩:৫৬

 

খোঁজে জানা গেছে, বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত নয়ন বন্ড। এছাড়া বরগুনা পৌরসভার কাউন্সিলর রইসুল ইসলাম রিপনের ছেলে জনির ডান হাত হিসেবেও পরিচিত নয়ন। পাশাপাশি মাদক ব্যবসার বিপুল অর্থ তো আছেই। অন্যদিকে রিফাত ফারাজীর আপন খালু বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া রিফাতের চাচাতো দাদা মরহুম লতিফ ফারাজী ২০ বছর আগে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

সূত্রের তথ্য, ২০১৭ সালের ৫ মার্চ রাতে নয়নের বাসায় অভিযান চালায় বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় বিপুল পরিমাণ মাদক, দুইটি দেশীয় অস্ত্র ও এক সহযোগীসহ নয়নকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা মাদকের মধ্যে ছিল ৩০০ পিস ইয়াবা, ১২ বোতল ফেনসিডিল ও ১০০ গ্রাম হেরোইন। বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, নয়ন বন্ডের মাদক বাণিজ্যের কথা আমরা জানি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে নয়ন ও তার সহযোগীরা গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে; কিন্তু বারবারই তারা জামিনে বেরিয়ে যায়।

বরগুনা সরকারি কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিমে বরগুনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে নয়ন বন্ডের (২৫) বাসা। নয়নের বাবা মৃত ছিদ্দিকুর রহমান। দুই ভাইয়ের মধ্যে নয়ন ছোট। নয়নের বড় ভাই মিরাজ দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে শ্রমিকের কাজ করেন। মাকে নিয়েই ওই বাসায় বসবাস করছিল নয়ন।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানান, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে যুক্ত আরেক খুনী রিফাত ফরাজী। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে একটি আতঙ্কের নাম রিফাত ফরাজী, তাকে সবাই ছিচকে রিফাত হিসেবেই সবাই চিনে। রিফাতের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের ওপর হামলা, মারধর রিফাতের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব কারণে কয়েকবার গ্রেফতার হলেও অজ্ঞাত এক কারণে খুব স্বল্প সময়েই মুক্তি পান তিনি। ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলাম (২১) নামে এক প্রতিবেশীকে কুপিয়ে মারাত্মক যখম করেন রিফাত ফরাজী।

তরিকুল জানান, একদিন সামান্য কথা কাটাকাটি হয় রিফাত ফরাজীর সঙ্গে তার। তখন রিফাত ফরাজী তাকে কুপিয়ে যখম করার হুমকি দেন। রিফাত ফরাজীর ভয়ে তিনি দেড় মাস রিফাত ফরাজীর বাসার সামনে দিয়ে না গিয়ে আধা কিলোমিটার পথ ঘুরে তার বাসায় যাওয়া আসা করতেন। হুমকি দেয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন সন্ধ্যায় রিফাত ফরাজীর বাসার সামনে দিয়ে তরিকুল তার বাসায় যাওয়ার পথে রিফাত ফরাজী দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার মাথায় গুরুতর যখম করেন। এ ঘটনায় তরিকুলের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

একই বছর রিফাত বরগুনার হোমিও চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ডিকেপি রোডের বাসার ছাত্র মেসে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে বাসায় থাকা সব ছাত্রদের জিম্মি করে, তাদের ১৪টি মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে পুলিশ রিফাতের বাবা দুলাল ফরাজীকে আটক করে মোবাইলগুলো উদ্ধার করেন।

এ বিষয়ে ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ছেলে ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ‘ডিকেপি রোডের আমাদের ভাড়া দেয়া বরগুনা পলিট্যাকনিক ইনিস্টিটিউটের মেসে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে ১৪টি মোবাইল ছিনতাই করেন রিফাত ফরাজী। এ ঘটনা জানার পর আমি বরগুনা সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ করায় রিফাত ফরাজীর বাবা দুলাল ফরাজীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে তিনি রিফাতের কাছ থেকে ছিনতাই করা ১৪টি মোবাইলের মধ্যে ১১টি উদ্ধার করেন। আর বাকি তিনটি মোবাইল উদ্ধার করতে না পেরে নতুন মোবাইল কিনে দিয়ে থানা থেকে মুক্তি পান।’

বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা মারজানা মনি বলেন, ‘২০১৭ সালের রমজানে আমার একমাত্র ছোট ভাই হাফেজ মো. মেহেদী হাসান বরগুনার হোমিও চিকিৎসক আলাউদ্দিন ডাক্তারের বাসা সংলগ্ন মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ায়। তখন রিফাত ফরাজী একদিন মেহেদীর কাছ থেকে স্যামস্যাং গ্যালাক্সি কোর প্রাইম মডেলের বিদেশ থেকে আনা একটি ফোন ছিনিয়ে নেন। বিষয়টি রিফাত ফরাজীর মা-বাবাসহ স্থানীয় অনেককে জানানোর পরও আমার ভাইয়ের মোবাইলটি কেউ উদ্ধার করে দিতে পারেনি। পরে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করার পর সাড়ে সাত হাজার টাকার বিনিময়ে মোবাইলটি ফিরিয়ে দিয়ে হুমকি দেন রিফাত ফরাজী। পরে রিফাত ফরাজীর হুমকিতে ওই এলাকা ছেড়ে একপ্রকার পালিয়ে আসে আমার ভাই।’



এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, ‘রিফাত শরীফ নিহত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ অনেক অভিযোগ পেয়েছে। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।