ঢাকা শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


ঢাবিতে বিক্ষোভ-মহড়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘন ৪ প্যানেলের!


১১ মার্চ ২০১৯ ১০:৫৮

আপডেট:
১০ মে ২০২৪ ২৩:১৫

ঢাবিতে বিক্ষোভ-মহড়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘন ৪ প্যানেলের!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন ধরনের অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে ‌বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে বিক্ষোভের মাধ্যমে চার প্যানেলের সহসভাপতি (ভি‌পি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থীরা নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের প্রচারণার নির্ধারিত সময়ের পর ক্যাম্পাসে ‘শোডাউন’ দিয়ে এমন বিক্ষোভ আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। যদিও বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা বলছেন, তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি, অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মাত্র।

রোববার (১০ মার্চ) বিকেলে সাত দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করেন চারটি প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থীরা। ঢাবি টিএসসি এলাকা থেকে সমর্থকদের নিয়ে উপাচার্য কার্যালয়ে হাজির হন প্রার্থীরা। সেখানে কলাপসিবল গেটে তাদের আটকে দেওয়া হয়। পরে প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজনকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। তারা ভেতরে গিয়ে উপাচার্য বরাবর সাত দফা স্মারকলিপি জমা দেন।

ডাকসু নির্বাচনের ঠিক আগের দিন এই বিক্ষোভে অংশ নেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাম জোট, স্বতন্ত্র জোট ও স্বাধিকার জোটের প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন বাম জোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুরু, স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণী সেমন্তী খান, স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান ও ছাত্র ফেডারেশনের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীরসহ অন্যরা।


এর আগে, শনিবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হয় ডাকসু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, এরপর নির্বাচনি এলাকায় কোনো ধরনের শোডাউন বা মিছিল করা যাবে না। কিন্তু রোববার উল্লিখিত প্যানেলের প্রার্থীরা সমর্থকদের নিয়ে যেভাবে ক্যাম্পাস ঘুরে উপাচার্য কার্যালয়ে যান এবং সেখানে গিয়ে স্লোগান দেন, তা আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও এ বিষয়ে বামজোট থেকে ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ‘আমরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি। আগামীকাল (সোমবার) ভোটকে কেন্দ্র করে যে অনিয়ম হচ্ছে, তার প্রতিবাদ করেছি।’

বিক্ষোভে উপস্থিত বাংলাদেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল ভোটের দিন ব্যালট বক্স ও ব্যালট পেপার যাবে। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিনই সেগুলো কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের আগেই থেকে শঙ্কা ছিল। কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে। আমরা সেসব দাবি নিয়ে কথা বলতে গেছি।’

নুরুল হক আরও বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সে বিষয়ে বলব, কর্তৃপক্ষ নামমাত্র একটি আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে। সবাই কমবেশি আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে। কর্তৃপক্ষ শক্ত থাকলে আচরণবিধি কেউ ভঙ্গ করতে পারত না।


অন্যদিকে, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন, তফসিল অনুযায়ী ৯ মার্চ ছিল প্রচারণার শেষ দিন। কিন্তু আমাদের অনেক প্রার্থী আজ সম্মিলিতভাবে উপাচার্য স্যার বরাবর স্মারকলিপি দিতে গিয়েছেন। এসময়ে তারা নিজেদের প্যানেলের সমর্থকদের নিয়ে উপাচার্য স্যারের কাছে যান ও স্লোগান দেন। আমরা এটাকে আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করি। এর আগেও তারা বিভিন্ন সময় আইন লঙ্ঘন করেছে, যার প্রতিবাদ আমরা জানিয়েছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব, এর বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

গোলাম রাব্বানী আরও বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশে বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে, বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে কেউ কেউ ক্যাম্পাসের পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে ও একইসঙ্গে নির্বাচনি আইন অবমাননা করছে। তারা আসলে ভোটগ্রহণের সুষ্ঠু পরিবেশকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে তারা গুজব ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী  বলেন, আমরা তাদের সতর্ক করে দিয়েছি, আবারও সতর্ক করছি। তবে তাদের কাছেই জিজ্ঞাসা করতে হবে, কেন তারা নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না।

উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান। তফসিল অনুযায়ী, সোমবার (১১ মার্চ) ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।