ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


‘গ্যাস সিলিন্ডারের নামে পারমাণবিক বোমা চাই না’


২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:০৭

আপডেট:
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:০৮

‘গ্যাস সিলিন্ডারের নামে পারমাণবিক বোমা চাই না’

ঢাকা: গ্যাস সিলিন্ডারের নামে বাসাবাড়িতে পারমণবিক বোমা রাখার পরিবর্তে পাইপলাইনে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন রাজধানীর চকবাজার চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। প্রয়োজনে গ্যাস সিলিন্ডারের সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে হলেও পাইপ লাইনে গ্যাস চান তারা।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে ৬৭জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহতের সংখ্যা ৪১। অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনার জন্য একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী পিকআপ ভ্যানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণকে দায়ী করছেন।

বুধবারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার হলো বাংলাদেশে একটা পারমাণবিক বোমা। যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময়ে রাতে-দিনে রাস্তায় এই বিস্ফোরকটি বহন করা হয়, যেখানে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় চলাচল করে। এটি প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথায় বিস্ফোরণ হচ্ছে। এটা রোধ করা সম্ভব নয়। এটি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বাসা বাড়ি, হোটেল রেস্টুরেন্ট ও কল কারখানায় সিলিন্ডারের পরিবর্তে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা। বিল যা আসে জনগণ দেবে।’

জনগণের নিরাপত্তার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন শফিকুল। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের বিল প্রয়োজনে আমরা ডাবল দেবো। সরকারকে অতিরিক্ত বিল দিয়ে সহায়তা করব। তবু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মরতে চাই না।’

এ দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও চুরিহাট্টা মোড়ের পাশে ১৬ নম্বর নন্দ কুমার দত্ত রোডের বাসিন্দা মো. মঈন উদ্দিন (৬৬)  বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা এখানে-ওখানে বোমা ফেলত। ওই বোমার যে ভয়াবহ শব্দ, মনে হলো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ শব্দ। সামনে তাকাতেই দেখি, জ্বলন্ত একটি পিকআপ তিন তলা বিল্ডিংয়ের সমান উঁচুতে উঠে প্রচণ্ড শব্দে আছড়ে পড়ল রাস্তায়। এরপরেই চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’


গাড়ির এই সিলিন্ডারটি বিস্ফোরণ না ঘটলে এতগুলো মানুষ মারা যেত না বলেও মনে করেন মঈন।

ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন নন্দ কুমার দত্ত রোডের ১৪ নম্বর বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা আশিক উদ্দিন সৈনিক। তিনি বলেন, ‘তখন সাড়ে ১০টার মতো বাজে। রাস্তাতেই ছিলাম। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখি, একটা পিকআপ দুই তলারও বেশি উঁচুতে উঠে গেছে। ধপাস করে সেটা মাটিতে পড়তেই আগুন পাশের হোটেলে রাখা সিলিন্ডারে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সিলিন্ডারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে।’

আশিক উদ্দিন বলেন, ‘আমরা যতদূর দেখেছি, আগুনের সূত্রপাত্র গাড়ি থেকেই। ওই গাড়ির আগুনই ছড়িয়ে পড়ে পাশের হোটেলে, সেখান থেকে ওয়াহেদ ম্যানসনে। ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় পারফিউমের বিশাল গোডাউন ছিল। ওখানে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় তলার দেয়ালটি ভেঙে পাশের বিল্ডিং ও রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে। ওই সময় রাস্তায় আরো একটি পিকআপ এবং দুইটি প্রাইভেট কারের সিলিন্ডারেও বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে আগুনের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। ফলে যারা রাস্তায় ছিলেন, সবাই স্পট ডেড হয়ে যান।’

আগুনের ঘটনা সমন্বয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম

এছাড়াও বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে এই ভয়াবহ ঘটনার সূত্রপাত্র। তাই এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানান তারা।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘটনাস্থল চকবাজারের চুড়িহাট্টা মসজিদ মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছয়টি ভবন ও চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদের বাইরের টাইলস আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এর মধ্য চার তলা ওয়াহেদ ম্যানসন ভবনটি দেয়ালসহ ভেঙে পড়েছে। কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। ভবন সংলগ্ন পূর্ব দিকের যে ভবনে হোটেলটি অবস্থিত, সেই ভবনটিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওয়াহেদ ম্যানসনের উত্তর পাশের চার তলা ভবনটিও পুরোটা পুড়ে গেছে আগুনে। ওই ভবনের নিচ তলার কয়েকটি দোকানও পুড়ে ছাই। এছাড়াও ওয়াহিদ ভবনের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের দুইটি ভবন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।