ঢাকা বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৯শে ফাল্গুন ১৪৩১

মায়াজাল: গল্পের মোড়কে জীবন-সমাজচিত্র


১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৪

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১০:৩৫

যাপিত জীবনে মানুষকে নানারঙের সময় রাঙায়। হলুদ, সাদা, নীল অথবা কালো। কখনো তার মন ভীষণ ফুরফুরে থাকে, সাদা পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের মতো উড়ে উড়ে খেলে হাসি-আনন্দ। কখনো তার মানসপটে নামে বিষাদের ছায়া, যেন অঝোরে কাঁদার একটামাত্র উপলক্ষ চায়। মনোভাবের এ অদল-বদলে মানুষ তখন ঠিক তার মতো করে হাসতে চায়, গাইতে চায়, বলতে চায়, ভুলতে চায়। চায় নিশ্চুপ হয়ে নিজের সঙ্গে হিসাব কষতে, মেঘলা সন্ধ্যেবেলা নিজের মতো করে খানিকটা কাঁদতে। যেন তার ওপর চেপে বসা পাহাড়টার ভার কমে। সেজন্য প্রায়ই বন্ধুমহলে মন ভালো করা, মন হালকা করা কিংবা খানিকটা কাঁদা যায় -এমন সিনেমা, নাটক বা বইয়ের নাম খুঁজতে দেখা যায়।

দুই. মনুষ্যজীবনকে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়। শৈশব, তারুণ্য, বার্ধক্য। মায়ের স্নেহ-আদরে বাবার সাহস-চাদরে শৈশবটা পুরোপুরি স্বপ্নের মতো কাটে। এ জনপদে তারুণ্য জীবন সাজানোর, গোছানোর এবং দায়িত্ব নেওয়ার। আর বার্ধক্য, দুনিয়ার যে কোনো প্রান্তে 'বিদায়লগ্ন'। ষাট পেরোলে, বিশেষ করে বেকার প্রৌঢ়রা শুধুই অপেক্ষা করেন বিদায়ের। ঠিক গ্রামীণ হাঁটের মতো-জমার সময় পণ্যের ভালো দাম মিললেও ভাঙার সময় সেসব কোনোভাবে কাউকে গছাতে পারলে যেন বিক্রেতার নিস্তার। ষাট পেরোনো অনেকে সংসারে এমনই হাঁটভাঙা বোঝা হয়ে পড়েন। নিজের গোটা তারুণ্যকে সংসার সাজাতে বিলিয়ে দিলেও পরে সাজানো সংসারেই সেই অতীত সবার মানসপট থেকে যেন বিলীন হয়ে যায়। না তারা নিজেদের আকাঙ্ক্ষার

কথা বলতে পারেন, না প্রকাশ করতে পারেন ভালো-মন্দ, মান-অভিমান। যা মেলে তাতেই চলে, চালাতে হয়। শৈশবে যে সন্তানের খানিক জ্বরে দুশ্চিন্তায় তাদেরই দরদর করে ঘাম ঝরতো, সেই সন্তানেরই চোখে পড়ে না বার্ধক্যের ছায়ায় ঢাকা পড়া মা-বাবার নিঃসীম বেদনা।

তিন,

এ জনপদের সামাজিক অস্থিরতা যেন ভাগ্যসঙ্গী। বিশেষ করে সাম্প্রতিক দেড় দশকে নাটকীয় নানা কায়দায় ভীষণভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল প্রাণবিক অধিকার। কিন্তু সমাজকে যেন কিছু না বলার, না দেখার বোবায় ধরেছিল। যাদের বলার কথা ছিল, তারা যেন মুখে ঠুকে রেখেছিলেন পেরেক। পরিণতিতে অস্থির সময় ডেকে ডেকে আনছে শঙ্কার মেঘ।

চার.

এবারের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে লেখক, গবেষক ও বিশ্লেষক সরোজ মেহেদীর প্রথম গল্পগ্রন্থ 'মায়াজাল'। এই বইয়ের গল্পগুলো যাপিত জীবন, শৈশব স্মৃতি আর বার্ধক্যের সংগ্রামকে চিত্রিত করেছে। ইতিহাসের ট্রেনে তুলে দিয়েছে চলমান সময়ের সমাজচিত্রকে।

ইচ্ছেরা উড়ে গেছে: যাপিত জীবনের অভিঘাত ভিন্ন ধাচের বইমেলা দেখতে চান তরুণরা

বইয়ের 'নুনু' ও 'ফগার মেশিন' যেমন পাঠককে প্রাণখুলে হাসাবে; তেমনি 'ছালু', 'বিবশ', 'চকোর' ও শিরোনাম গল্প 'মায়াজাল' ভোবাবে ভীষণ বিষাদে। বইয়ের 'বুড়ি ও পরী' গল্প যেন এক বেদনাগাথা। বার্ধক্যে পৌঁছানো কেউ কীভাবে নিজেকে সংসারে বোঝা বুঝতে পেরে প্রতিটা মুহূর্ত তটস্থ থাকেন এবং একদা গলে যান মোমের মতো, তা এ গল্প পড়ার কালে ভেসে উঠবে পাঠকের মানসপটে।

করোনা মহামারিকালে ভারত ভ্রমণ, বসবাস ও বন্দীজীবন নিয়ে গত বছরের বইমেলায় প্রকাশিত ভাবনা-দর্শনমূলক 'চেনা নগরে অচিন সময়ে' বইয়ে সরোজ মেহেদীর লেখার স্বকীয়তা দেখেছেন পাঠকরা।

'মায়াজাল' বইয়ের গল্পগুলোও সেই সরোজ-ধারার। প্রচলিত প্রেম-ভালোবাসার গৎবাঁধা ফ্রেমের বাইরে গিয়ে শব্দবুননে মেদহীন ঝরঝরে বাক্যের হাত ধরে সরোজ কখনো পাঠককে নিয়ে যাবেন নব্বই দশকের রঙিন শৈশবের মাঠে, দেবেন পিঠাপুলি স্বাদ; কখনো পাঠককে বন্যায় ভেসে যাওয়া গোমতীর পাড়ে নিয়ে ফেলে দেবেন স্নায়ুচাপে; কখনো ঢাকার কল্যাণপুরের রাস্তায় স্মৃতিকাতর কেউ একজনের জন্য কাঁদাবেন। কখনো ভরা সন্ধ্যায় নিয়ে যাবেন কোনো এক গোরস্থানে, যেখানে চোখ মেলে দেখতে না পারা কন্যার সঙ্গে গল্প করছেন পিতা। আবার কখনো সরোজ ভবিষ্যতের অনিবার্য বেদনাকে নিয়ে আসবেন বর্তমানে, যা পাঠকহৃদয়ে করবে তোলপাড়। মোটাদাগে, এ বইয়ের গল্পের সঙ্গে অন্য গল্পের পার্থক্য হলো-এ গল্প পাঠককে চিরায়ত আনন্দের সঙ্গে ইতিহাসেরও পাঠ দেয়। 'মায়াজাল' বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন দেওয়ান আতিকুর রহমান। তার সৃজনশীল প্রচ্ছদে ফুটে উঠেছে এক নানন্দিক মায়া। বাহুবন্ধনে আগলে

রাখার এ চিত্র ভাবুক পাঠকের নজর কাড়বে। মোড়কের ভেতরকার হর্ষ-বিষাদের মর্মবোধ পৌঁছে দেবে তার হৃদয়ে, যা তাকে বইটি হাতে তুলে নিতে আগ্রহী করবে।

সৃজন থেকে প্রকাশিত বইটি বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ২৮৫ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। ১৭০ টাকায় বইটি কিনতে পারবেন পাঠকরা। এ ছাড়া রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বইটি পাওয়া যাবে।

যাপিত জীবনে মানুষকে নানারঙের সময় রাঙায়। হলুদ, সাদা, নীল অথবা কালো। কখনো তার মন ভীষণ ফুরফুরে থাকে, সাদা পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের মতো উড়ে উড়ে খেলে হাসি-আনন্দ। কখনো তার মানসপটে নামে বিষাদের ছায়া, যেন অঝোরে কাঁদার একটামাত্র উপলক্ষ চায়। মনোভাবের এ অদল-বদলে মানুষ তখন ঠিক তার মতো করে হাসতে চায়, গাইতে চায়, বলতে চায়, ভুলতে চায়। চায় নিশ্চুপ হয়ে নিজের সঙ্গে হিসাব কষতে, মেঘলা সন্ধ্যেবেলা নিজের মতো করে খানিকটা কাঁদতে। যেন তার ওপর চেপে বসা পাহাড়টার ভার কমে। সেজন্য প্রায়ই বন্ধুমহলে মন ভালো করা, মন হালকা করা কিংবা খানিকটা কাঁদা যায় -এমন সিনেমা, নাটক বা বইয়ের নাম খুঁজতে দেখা যায়।

দুই. মনুষ্যজীবনকে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়। শৈশব, তারুণ্য, বার্ধক্য। মায়ের স্নেহ-আদরে বাবার সাহস-চাদরে শৈশবটা পুরোপুরি স্বপ্নের মতো কাটে। এ জনপদে তারুণ্য জীবন সাজানোর, গোছানোর এবং দায়িত্ব নেওয়ার। আর বার্ধক্য, দুনিয়ার যে কোনো প্রান্তে 'বিদায়লগ্ন'। ষাট পেরোলে, বিশেষ করে বেকার প্রৌঢ়রা শুধুই অপেক্ষা করেন বিদায়ের। ঠিক গ্রামীণ হাঁটের মতো-জমার সময় পণ্যের ভালো দাম মিললেও ভাঙার সময় সেসব কোনোভাবে কাউকে গছাতে পারলে যেন বিক্রেতার নিস্তার। ষাট পেরোনো অনেকে সংসারে এমনই হাঁটভাঙা বোঝা হয়ে পড়েন। নিজের গোটা তারুণ্যকে সংসার সাজাতে বিলিয়ে দিলেও পরে সাজানো সংসারেই সেই অতীত সবার মানসপট থেকে যেন বিলীন হয়ে যায়। না তারা নিজেদের আকাঙ্ক্ষার

কথা বলতে পারেন, না প্রকাশ করতে পারেন ভালো-মন্দ, মান-অভিমান। যা মেলে তাতেই চলে, চালাতে হয়। শৈশবে যে সন্তানের খানিক জ্বরে দুশ্চিন্তায় তাদেরই দরদর করে ঘাম ঝরতো, সেই সন্তানেরই চোখে পড়ে না বার্ধক্যের ছায়ায় ঢাকা পড়া মা-বাবার নিঃসীম বেদনা।

তিন,

এ জনপদের সামাজিক অস্থিরতা যেন ভাগ্যসঙ্গী। বিশেষ করে সাম্প্রতিক দেড় দশকে নাটকীয় নানা কায়দায় ভীষণভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল প্রাণবিক অধিকার। কিন্তু সমাজকে যেন কিছু না বলার, না দেখার বোবায় ধরেছিল। যাদের বলার কথা ছিল, তারা যেন মুখে ঠুকে রেখেছিলেন পেরেক। পরিণতিতে অস্থির সময় ডেকে ডেকে আনছে শঙ্কার মেঘ।

চার.

এবারের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে লেখক, গবেষক ও বিশ্লেষক সরোজ মেহেদীর প্রথম গল্পগ্রন্থ 'মায়াজাল'। এই বইয়ের গল্পগুলো যাপিত জীবন, শৈশব স্মৃতি আর বার্ধক্যের সংগ্রামকে চিত্রিত করেছে। ইতিহাসের ট্রেনে তুলে দিয়েছে চলমান সময়ের সমাজচিত্রকে।


ইচ্ছেরা উড়ে গেছে: যাপিত জীবনের অভিঘাত ভিন্ন ধাচের বইমেলা দেখতে চান তরুণরা

বইয়ের 'নুনু' ও 'ফগার মেশিন' যেমন পাঠককে প্রাণখুলে হাসাবে; তেমনি 'ছালু', 'বিবশ', 'চকোর' ও শিরোনাম গল্প 'মায়াজাল' ভোবাবে ভীষণ বিষাদে। বইয়ের 'বুড়ি ও পরী' গল্প যেন এক বেদনাগাথা। বার্ধক্যে পৌঁছানো কেউ কীভাবে নিজেকে সংসারে বোঝা বুঝতে পেরে প্রতিটা মুহূর্ত তটস্থ থাকেন এবং একদা গলে যান মোমের মতো, তা এ গল্প পড়ার কালে ভেসে উঠবে পাঠকের মানসপটে।

করোনা মহামারিকালে ভারত ভ্রমণ, বসবাস ও বন্দীজীবন নিয়ে গত বছরের বইমেলায় প্রকাশিত ভাবনা-দর্শনমূলক 'চেনা নগরে অচিন সময়ে' বইয়ে সরোজ মেহেদীর লেখার স্বকীয়তা দেখেছেন পাঠকরা।

'মায়াজাল' বইয়ের গল্পগুলোও সেই সরোজ-ধারার। প্রচলিত প্রেম-ভালোবাসার গৎবাঁধা ফ্রেমের বাইরে গিয়ে শব্দবুননে মেদহীন ঝরঝরে বাক্যের হাত ধরে সরোজ কখনো পাঠককে নিয়ে যাবেন নব্বই দশকের রঙিন শৈশবের মাঠে, দেবেন পিঠাপুলি স্বাদ; কখনো পাঠককে বন্যায় ভেসে যাওয়া গোমতীর পাড়ে নিয়ে ফেলে দেবেন স্নায়ুচাপে; কখনো ঢাকার কল্যাণপুরের রাস্তায় স্মৃতিকাতর কেউ একজনের জন্য কাঁদাবেন। কখনো ভরা সন্ধ্যায় নিয়ে যাবেন কোনো এক গোরস্থানে, যেখানে চোখ মেলে দেখতে না পারা কন্যার সঙ্গে গল্প করছেন পিতা। আবার কখনো সরোজ ভবিষ্যতের অনিবার্য বেদনাকে নিয়ে আসবেন বর্তমানে, যা পাঠকহৃদয়ে করবে তোলপাড়। মোটাদাগে, এ বইয়ের গল্পের সঙ্গে অন্য গল্পের পার্থক্য হলো-এ গল্প পাঠককে চিরায়ত আনন্দের সঙ্গে ইতিহাসেরও পাঠ দেয়। 'মায়াজাল' বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন দেওয়ান আতিকুর রহমান। তার সৃজনশীল প্রচ্ছদে ফুটে উঠেছে এক নানন্দিক মায়া। বাহুবন্ধনে আগলে

রাখার এ চিত্র ভাবুক পাঠকের নজর কাড়বে। মোড়কের ভেতরকার হর্ষ-বিষাদের মর্মবোধ পৌঁছে দেবে তার হৃদয়ে, যা তাকে বইটি হাতে তুলে নিতে আগ্রহী করবে।

সৃজন থেকে প্রকাশিত বইটি বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ২৮৫ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। ১৭০ টাকায় বইটি কিনতে পারবেন পাঠকরা। এ ছাড়া রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বইটি পাওয়া যাবে।