ঢাকা শনিবার, ১২ই এপ্রিল ২০২৫, ৩০শে চৈত্র ১৪৩১

মায়ের ভাষায় প্রথম বুলি


২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:০৬

আপডেট:
১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:১৩

জন্মের পর শিশু প্রথম বুলি শেখে তার মায়ের কাছে। দেশভেদে ভাষা ভিন্ন হলেও প্রত্যেক শিশুর মধ্যে তার মায়ের কাছে শেখা প্রথম ভাষাই হলো মাতৃভাষা।

আর সেটিই সে আয়ত্ত করে নেয় নিজের মতো করে। শিশুর মাতৃভাষা শেখা এবং তার গুরুত্ব সম্পর্কে বিশিষ্টজনের মতামত নিয়ে লিখেছেন এমি জান্নাত শিশুমন হয় নরম-কোমল।

শুরু থেকে তাকে যা শেখানো হবে, সে প্রথমে সেটিই আয়ত্ত করে নেবে। মাতৃভাষা শেখার মধ্য দিয়ে নিজ দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে তার পরিচিতি ঘটে। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলার ছেলেরা মাতৃভাষা রক্ষায় আন্দোলন করে শহীদ হন।

সেদিনের শহীদদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই বাংলা ভাষা আর মায়ের কাছে শেখা শিশুর মুখের প্রথম বুলি।

পরিবারের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়। বাংলা, ইংরেজি ও ইংরেজি ভার্সন এ তিনটি মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা দিয়ে থাকে।

অনেক মা-বাবাই শিশুকে ইংরেজি শিক্ষায় পারদর্শী করতে বাংলা ভাষার ওপর কম গুরুত্ব আরোপ করেন।

এতে বাংলা ভাষায় তারা দুর্বল হতে পারে এবং মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধেও কমতি দেখা দিতে পারে। এটা পরে শিশুর নৈতিক শিক্ষার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

এ বিষয়ে ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ের অধ্যক্ষ টিআইএম নুরন্নবী বলেন, বাংলা ভাষা আমাদের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে। মাতৃভাষা প্রথম শেখার মধ্য দিয়ে ওই ইতিহাস, ঐতিহ্যের সঙ্গে শিশু একাত্ম হতে পারে।

তাই বাঙালি শিশুদের প্রথম পাঠ হওয়া উচিত বাংলায়। ঠিক সেভাবেই প্রত্যেক শিশুর প্রথম পাঠ হওয়া উচিত তার মাতৃভাষায়।

অনেক অভিভাবকই মনে করে থাকেন, ইংরেজি ভাষাটা কঠিন আর সেটিই প্রথমে শেখাতে হবে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা।

ভাষা তো শুধু ভাষা নয়, এর মধ্যে থাকে শব্দ, ভাবাবেগ, দ্যোতনা ও মনের ভাব প্রকাশের নানা উপায়। আর সেগুলোর মধ্য দিয়ে একজন মানুষ আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

বিদেশি ভাষায় দীক্ষিত করতে চাওয়াটা অবশ্যই দোষের নয়। তবে বাংলা ভাষায় শিক্ষা নেওয়ার পর যে কোনো ভাষায় পারদর্শী হতে পারে।

বাংলা ভাষায় লেখালেখি করেন আঁখি আলম। তিনি বলেন, মায়ের মুখনিঃসৃত ভাষাই হলো প্রত্যেক মানবশিশুর প্রথম পাঠ।

মানুষের সব অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে যেমন মা, ঠিক তেমনই মিশে আছে মায়ের কাছে শেখা মায়ের মুখের মধুর ভাষা মাতৃভাষা।

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভ করা প্রত্যেক শিশুর জন্মগত অধিকার।

মাতৃভাষার মতো সহজসাধ্য ভাষাও নেই। তাই যা সহজসাধ্য, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সেটিকে গ্রহণ করাই নিঃসন্দেহে শ্রেয়।

মাতৃভাষার মাধ্যমে মনের ভাব যত সহজ ও অনায়াসে প্রকাশ করা যায়, অন্য ভাষায় মাধ্যমে কখনো তা সম্ভব নয়। বিদেশি ভাষা শিখতে অনেক শ্রম ও সময় ব্যয় হয়, পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয় মাতৃভাষা।

আমরা অনেকেই নিজের শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে ইংরেজি ভাষা শিখতে বা ইংরেজি ভাষায় লেখাপড়া করতে উৎসাহিত করি।

এ ব্যাপারে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কথা না বললেই নয়। তিনি বলেছিলেন, ‘আগে চাই মাতৃভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি ভাষার পত্তন।

’ একটা দেশের উন্নতি তখনই সম্ভব, যখন অধিকাংশ লোক শিক্ষিত হবে।

আর সাধারণ মানুষের পক্ষে বিদেশি ভাষায় শিক্ষালাভ করা সহজসাধ্য নয়। তাই আমাদের ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ মাতৃভাষা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থাৎ শিশুদের জানানো আমাদের দায়িত্ব।

মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলার জন্য পৃথিবীর কোনো দেশের মানুষকে আমাদের মতো এভাবে বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিতে হয়নি।

আমাদেরই শেখাতে হবে কীভাবে মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে হয়। আমরা আমাদের শিশুদের শেখাব বাংলায় বলতে, লিখতে ও পড়তে।

বাংলাই হোক আমাদের চিন্তা-চেতনা, দুঃখ-বেদনা, আনন্দ-উল্লাস প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম। ভাষার সঙ্গে যেহেতু নিজ দেশের সংস্কৃতির সংমিশ্রণ থাকে, সেহেতু আমরা আমাদের মাতৃভাষা প্রথমে শিখব।

যদি প্রথমেই ইংরেজি বা অন্য ভাষার পাঠ নেয়া হয়, তা হলে নিজ ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে ওঠে না। কারণ সেটির সংস্কৃতি আলাদা। তাই ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষাকেই প্রথম ও প্রধান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।