ঢাকা সোমবার, ১৯শে মে ২০২৫, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


গাজায় খাবার ঢুকতে দিতে রাজি ইসরায়েল


১৯ মে ২০২৫ ১১:০৮

আপডেট:
১৯ মে ২০২৫ ১৪:৪৬

ঘরছাড়া ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়া একটি তাঁবু শিবিরে ইসরায়েলি হামলার পর ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, তারা অবরোধ শিথিল করছে এবং এর ফলে সীমিত পরিমাণ খাবার গাজায় ঢুকতে পারবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির উত্তর ও দক্ষিণের অংশে ‘বিস্তৃত স্থল অভিযান’ শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর রোববার নেতানিয়াহুর কার্যালয় গাজায় খাবার ঢুকতে দিতে রাজি হওয়ার কথা জানাল।

গাজায় ত্রাণ প্রবেশে মার্চে তেল আবিবের অবরোধ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ এবং ভূখণ্ডটিতে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যেই ইসরায়েল তার অভিযান জোরদার করেছে; তাদের হামলায় গত এক সপ্তাহে কয়েকশ মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে, এর মধ্যে কেবল এক রাতেই ১৩০ জনের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

“আইডিএফের (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) সুপারিশে, এবং হামাসকে পরাজিত করতে তীব্র লড়াই সম্প্রসারণের প্রয়োজনে জনসাধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খাবার ঢুকতে অনুমতি দেবে ইসরায়েল, যেন গাজা ভূখণ্ডে ক্ষুধাজনিত সঙ্কট সৃষ্টি না হয়,” বলেছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়।

জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচারের মুখপাত্র ইরি কানেকো জানিয়েছেন, ‘সীমিত ত্রাণ সরবরাহ পুনরায় শুরু’ করার বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

অবশ্য ‘মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি বিবেচনায়’ লজিস্টিকস সংক্রান্ত আলোচনা এখনও চলছে, বলেছেন তিনি।

তেল আবিবের এ নতুন ঘোষণার আগে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সূত্রগুলো জানিয়েছিল, কাতারে উভয় পক্ষের মধ্যে হওয়া নতুন দফার পরোক্ষ আলোচনায়ও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এই আলোচনায় যুদ্ধবিরতি, জিম্মি চুক্তির পাশাপাশি হামাস যোদ্ধাদের নির্বাসনের বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধ এবং ভূখণ্ডটির নিরস্ত্রীকরণ প্রস্তাব নিয়ে কথা হয়েছে। হামাস এর আগে তাদের অস্ত্র সমর্পণের শর্তে রাজি ছিল না।

দোহায় একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সহায়তা করতে গাজার অভিযানের তীব্রতা কমিয়ে আনা যেতে পারে বলে পরে এক বিবৃতিতে ইঙ্গিতও দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

তারা বলেছে, গাজার কিছু অংশের ‘নিয়ন্ত্রণ’ নিতে শুরু হওয়া নতুন স্থল অভিযান ‘গিদিয়নের রথের’ অংশ হিসেবে গত এক সপ্তাহে ৬৭০টিরও বেশি হামাস নিশানায় প্রারম্ভিক হামলা চালিয়েছে। তাতে কয়েক ডজন হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলেও দাবি তাদের।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় রোববার পর্যন্ত এক সপ্তাহে অন্তত ৪৬৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।

“ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নাগরিক নিবন্ধন তালিকায় থাকা অনেক পরিবারের সব সদস্য রাতারাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে,” ফোনে রয়টার্সকে বলেছেন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল আল-দেকরান।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর গাজার ২০ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাইকেই ঘরছাড়া হতে হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৫৩ হাজারের বেশি মানুষের, যাদের সিংহভাগই বেসামরিক।

জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে তেল আবিব মার্চের শুরুতে ভূখণ্ডটিতে ওষুধ, খাবার ও জ্বালানি সরবরাহে অবরোধ দেয়; সম্প্রতি তারা এমন সামরিক পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে যা তাদেরকে পুরো গাজা ভূখণ্ড দখল ও ত্রাণ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দেবে।

কাতারের পরোক্ষ আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হামাসের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, “ইসরায়েলের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, তারা যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছাড়াই সব জিম্মির মুক্তি চাইছে।”

ফিলিস্তিনি এ সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, ত্রাণ প্রবেশে অবরোধ প্রত্যাহার, যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

তবে তেল আবিব এখন আর এতটুকুতে সন্তুষ্ট নয়। তারা হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের জন্যও চাপ দিচ্ছে।

ঊর্ধ্বতন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, কাতারের আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই।