গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা
এক মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এক মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মি ইদান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হবে। রবিবার (১১ মে) হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২১ বছর বয়সী এই সেনা সদস্য গাজা ভূখণ্ডে আটক থাকা শেষ জীবিত মার্কিন নাগরিক। একে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ফেরার একটি উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে প্রধান মধ্যস্থতাকারী দেশ- কাতার ও মিসর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
তবে ওই হামাস কর্মকর্তা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এই সদস্যের মুক্তির নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি।
এই ঘোষণা এমন সময় এসেছে যখন কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় নিয়োজিত হামাস।
ওই কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন ধরে আলোচনা চলছে। আলোচনার মূল বিষয় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা ও মানবিক সহায়তা প্রবেশে সহায়তা করা।
আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, হামাসের এই ঘোষণা একটি সদিচ্ছার বার্তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কারণ মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে আসছেন।
তিনি বলেন, ইদানের মুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে সোমবার ভোরে হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আরেকটি বৈঠক নির্ধারিত হয়েছে। তাকে মুক্তির জন্য ইসরায়েলি সামরিক কার্যক্রমে অস্থায়ী বিরতি ও হস্তান্তরের সময় বিমান অভিযান স্থগিত রাখা প্রয়োজন।
ইদান আলেকজান্ডার তেল আবিবে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু নিউ জার্সিতে বড় হয়েছেন। তিনি গাজা সীমান্তে একটি বিশেষ পদাতিক ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় তাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
হামাসের ২০২৩ সালের হামলায় যে ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, তাদের মধ্যে ৫৯ জন এখনো গাজায় রয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। গাজায় আটক জিম্মির মধ্যে পাঁচজন মার্কিন নাগরিক বলে বিশ্বাস করা হয় এবং ইদান একমাত্র জীবিত।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, এই মুক্তি একটি যুদ্ধবিরতি অর্জন ও গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য সরবরাহ প্রবেশের প্রচেষ্টার অংশ। অঞ্চলটি গত ৭০ দিন ধরে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ অবরোধের মধ্যে রয়েছে। হামাস বলেছে, তারা যুদ্ধ শেষ করতে চূড়ান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে তারা ইদানের মুক্তির পরিকল্পনার বিষয়টি জানতে পেরেছে, যা আমেরিকানদের প্রতি একটি সদিচ্ছার ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত। এই পদক্ষেপ আরও জিম্মিদের বিষয়ে আলোচনার পথ খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হামাস এর আগে বলেছে যে, তারা কেবল সেই চুক্তিতেই রাজি হবে যার মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কিন্তু তা বারবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হামাস ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনাগুলো এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বিভিন্ন প্রতিবেদনে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে নেতানিয়াহুর অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ বেড়ে চলার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। নেতানিয়াহু নিজ দেশেও চাপের মুখে রয়েছেন। অনেকে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ করছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যে আসছেন এবং ইসরায়েল বলেছে, যদি তার সফরের মধ্যে কোনও চুক্তি না হয়, তবে তারা হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও প্রসারিত করবে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্প্রসারিত অভিযানের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে পুরো ভূখণ্ড দখলে নেওয়া, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক দক্ষিণে সরিয়ে দেওয়া এবং জাতিসংঘ ও এর মানবিক অংশীদারদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ পরিচালনা করা।