সিরাজগঞ্জে উল্লাপাড়ায় চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩৬৫০ টন মাছ বেশি উৎপাদন

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এখন বছরে চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার ৬৫০ টন মাছ বেশি উৎপাদন হচ্ছে। এক বছরে নানা জাতের ১৭ হাজার ৩৫৬ টন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে পুকুরে উৎপাদন হয় ৮ হাজার ৬৭০ টন।
উপজেলায় ব্যক্তিগত ও সরকারি মিলে মোট ৩ হাজার ৩৯৭টি পুকুর আছে। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে এর বিস্তারিত তথ্য জানা গেছে। এলাকার পুকুরগুলোয় ও খাল বিলে চাষ করা মাছ এলাকায় মাছের আড়তগুলোয় কেনাবেচা হচ্ছে। এসব আড়ত থেকে বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যাওয়া ও কেনাবেচা হয়।
উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে জানানো তথ্যে এক বছরে উপজেলায় মাছের চাহিদা ১৩ হাজার ৭০৫ টন। এখন বছরে নানা জাতের ১৭ হাজার ৩৫৬ টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে পুকুরে ৮ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন মাছ বছরে উৎপাদন হয়। আর বাকী ৮ হাজার ৬৮৬ মেট্রিক টন মাছ বিভিন্ন মুক্ত জলাশয় থেকে মেলে। এখন চাহিদার চেয়ে বেশী উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ৬৫০ টন।
জানা গেছে, কার্পজাতীয় (কাতলা, রুই , মৃগেল) মাছ বেশী চাষ করা হচ্ছে। গোটা উপজেলায় সরকারি ও ব্যক্তিগত মিলে ৩ হাজার ৩৯৭ টি পুকুর আছে। সরকারি পুকুর আছে মোট ২০৫ টি। এছাড়া মৎস্য অভয়াশ্রম কয়েকটি হলো- করতোয়া নদীতে ঘাটিনা , পালপাড়া , সোনতলা , সিমলা মোড়দহ ও দহকুলা। উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাথার প্রান্তরের তিনটিসহ মোট পাচটি ইউনিয়ন এলাকায় বর্ষা কালে আবাদী মাঠ প্রান্তর এবং খাল বিল জলা পানিতে তলিয়ে যায়। ইউনিয়নগুলো হলো- বড় পাঙ্গাসী, মোহনপুর, উধুনিয়া, দুর্গানগর ও বাঙ্গালা। এসব এলাকায় বর্ষার পানিতে বিপুল পরিমাণ নানা মাছ থাকে । বর্ষার পানি নেমে যেতেই জলাভূমি জমে , খাল বিল থেকে মাছ ধরা শুরু হয়। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ দেশীয় নানা মাছ বিভিন্ন এলাকার মাছ আড়তে বিক্রি হয়।
এদিকে পুকুরগুলোয় চাষ করা মাছ বিভিন্ন এলাকার আড়তে সারা বছরই কম বেশী পরিমাণ বিক্রি করা হয়ে থাকে। উল্লাপাড়ায় বিশ্বরোড এলাকায় মাছের আড়ত আছে। এখানে বড় ছোটো মিলে বেশ কিছু সংখ্যক আড়তে ভোর বেলা থেকে সকাল আটটা অবধি মাছ কেনাবেচা হয়। মোহনপুর রেল স্টেশনের কাছাকাছিতে বেশ কয়েকটি আড়ত ঘরে মাছের কেনাবেচা হয়। সলঙ্গার কুতুবেরচর এলাকায় বিশাল এলাকা জুড়ে মাছের আড়ত চলছে। প্রতিবেদককে আড়ত মালিক আল মামুন বলেন এখানে মোট ১০৪ জন আড়ত মালিক আছেন। উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাছ তো আছেই পাবনা, নাটোর , রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মণ মাছ এখানে এনে কেনাবেচা করা হয়। ঢাকা, বগুড়া ছাড়াও বিভিন্ন মোকাম বাজার এলাকায় এখানকার আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন শত শত মণ নিয়ে যাওয়া হয়। সেসব এলাকার ব্যবসায়ীগণ এখান থেকে ট্রাকে মাছ নিয়ে যান বলে জানা গেছে। প্রতিবেদককে কয়েক জন আড়ত মালিক বলেন ট্রাকে শ্যালোইঞ্জিন লাগিয়ে কায়দা করে পানি প্রবাহ ( ঢেউ তৈরী) রেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে আড়তে মাছ আনা আবার একই কায়দায় বিভিন্ন মোকামে মাছ নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে গত এক যুগ সময়ে উল্লাপাড়া উপজেলায় ব্যক্তিগত পুকুরের সংখ্যা বেড়েছে বলে খোজ নিয়ে জানা গেছে। এলাকায় মাছ চাষ ও মাছ চাষী বেড়েছে। গত বছর চারেক সময়কালে রামকৃষ্ণপুর ও বাঙ্গালা ইউনিয়ন এলাকায় ব্যক্তি মালিকানায় বড় ছোটো অনেকগুলো পুকুর খনন করা হয়েছে। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের দবিরগঞ্জ বাজারের কাছাকাছি বনপাড়া মহাসড়কের দুধারে অনেকগুলো পুকুরে নানা জাতের মাছ চাষ হচ্ছে। বাঙ্গালা ইউনিয়নের চেংটিয়া ব্রীজের কাছাকাছি , বিনায়েকপুর এলাকায় খনন করা বড় ছোটো কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান উল্লাপাড়ায় চাহিদার চেয়ে বেশী পরিমাণ মাছ উৎপাদন হচ্ছে। মাছ চাষীগণ সফল বলা চলে। এলাকার পুকুর ও খাল বিলে চাষ করা মাছ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আড়তে কেনাবেচা হয়। আবার পুকুর কিংবা খাল বিল থেকে মাছ ধরে আড়তে না নিয়ে এলাকার হাট বাজারগুলোয় কেনাবেচা করা হয়। অনেক সময় দুরের মোকামে মাছ নিতে নানা সমস্যায় কম দামে মাছ চাষীদেরকে বিক্রয় হয় বলে জানা গেছে। এলাকার আড়তগুলো থেকে নানা ধরনের মাছ ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মোকাম বাজারে বিক্রয় হয়ে থাকে । এখানকার আড়তগুলো থেকে দুরের বিভিন্ন মোকাম বাজারে ট্রাকে শ্যালোইঞ্জিন লাগিয়ে পানি প্রবাহের মাধ্যমে জীবিত পরিবহন করা হয়। তবে বহু দুরের মোকামে জীবিত মাছ নিতে এ পদ্ধতি বলা চলে সহজ নয়। আবার নানা জটিলতা আছে। তিনি আরো বলেন জীবিত ভাবে যে কোনো মাছ আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে বহু দুরের মোকাম বাজারে পাঠাইতে বিভাগীয় কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।