ঢাকা সোমবার, ২৪শে জুন ২০২৪, ১১ই আষাঢ় ১৪৩১


নকলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১৭ হাজার পশু : চাহিদার তুলনায় সাড়ে ৭ হাজার বেশি


১৩ জুন ২০২৪ ১৩:৩৭

আপডেট:
২৪ জুন ২০২৪ ১৯:৫০

 

শেরপুরের নকলায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন খামারি ও স্থানীয় গৃহস্থ পরিবারগুলো প্রায় ১৭ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন। এ বছর উপজেলায় কোরবানি ঈদের জন্য পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০টি। এ হিসেব মতে নকলায় চাহিদার তুলনায় গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বেশি রয়েছে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যে কোন লোক একসাথে একই ধরনের অন্তত ৫টি পশু লালন পালন করলে তাকে সংশ্লিষ্ট পশুর খামারি হিসেবে গণ্য করা হয়। সেমোতাবেক উপজেলায় মোট ২ হাজার খামারি রয়েছেন। এসব খামারে ১৬ হাজার ৮২০টি হৃষ্টপুষ্টকরণ গবাদি পশু রয়েছে, যা আসন্ন ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছ। এরমধ্যে, ষাঁড় ৯ হাজার ৫৭৪টি, বলদ ৭১৯টি, গাভী এক হাজার ৪৫০টি, মহিষ ২৬২টি, ছাগল ৪ হাজার ৪৩০টি ও ভেড়া রয়েছে ৩৮৫ টি। তিনি আরো জানান, গত কয়েক বছরের কোরবানি ঈদের জন্য পশুর চাহিদার গড় হিসেব করে এবছর কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার। উপজেলায় কোরবানির চাহিদার চেয়ে ৭ হাজার ৩০০টি অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত আছে। ফলে কোরবানির পশু পেতে কোনোরকম সংশয় বা সংকটের আশঙ্কা নেই বলে জানান উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ ইসহাক আলী।

কায়দা উত্তর এলাকার খামারি পারভেজ জানান, গতবছরের তুলনায় এবার গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। যেমন ভূষি, খুদ, চাল ও ভুট্টার দাম আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। যে কারণে গবাদিপশু পালনে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। তিনি বলেন গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারনে ঈদ উল ফিতরের মৌসুমে আমি ২১ টি ষাঁড় বিক্রি করে দিয়েছি। তখন ষাঁড়গুলো বিক্রি না করলে এই ঈদে হয়তোবা লাভ বেশি হতো। কিন্তু খাবার ও সার্বিক সেবাদানে আমাকে হিমশিমে পড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই বিক্রি করতে হয়েছে।

সরেজমিনে পারভেজের খামারে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে তার খামারে বিক্রির জন্য প্রাকৃতিক ভাবে মোটাতাজাকরণ করা ১৮ টি ষাঁড় রয়েছে। তার খামারের অধিকাংশ গরু দেশি জাতের। তবে কিছু সংকর কিছু জাতের ষাঁড় ও গাভী রয়েছে। ষাঁড় গুলো ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনে ওজন করে বিক্রি করা হবে। ফলে ক্রেতা সাধারণ তাদের চাহিদা অনুযায়ী কিনতে পারবেন, পাশাপাশি তিনিও ন্যায্য দাম পাবেন বলে মনে করছেন। ষাঁড় ওজন করে বিক্রি করলে ক্রেতা ও বিক্রেতা কারো ঠকার সম্ভাবনা নেই বলে অনেকে মনে করছেন।

নকলা পৌরসভার কুর্শাবাদাগৈড় এলাকার গরুর বাজারসহ চন্দ্রকোনা ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের পশুর বাজারের ইজারাদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই ঐতিহ্যবাহী নকলা পৌরসভার কুর্শাবাদাগৈড় পশুর বাজারসহ চন্দ্রকোনা ও পাঠাকাটা পশুর বাজারে কোরবানির পশু ধুম বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। তারা জানান, নকলার কোন বাজারেই কোন প্রকার চাঁদাবাজি নেই, নেইি হয়রানির কোন নজির। তাই এখানকার বাজার গুলোতে রাত ১২ পর্যন্ত গবাদিপশুসহ সকল প্রকার পণ্য কেনা-বেচা চলে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ ইসহাক আলী জানান, এবছর প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক তালিকাভুক্ত খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে হাটে আগত ব্যবসায়ী, খামারি ও কৃষকরা যেন নির্বিঘেœ তাঁদের পশু বেচা-কেনা করতে পারেন এর জন্য ক্রেতা-বিক্রেতার সার্বিক নিরাপত্তা দিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া উপজেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রতিটি গবাদিপশুর বাজারে ভ্রাম্যমান ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম সেবা প্রদান শুরু করেছে। কোনো পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক এসব মেডিকেল টিমের চিকিৎসকগন চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, আমরা খামারিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে বরাবরই যথাসময়ে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবার পশুর দাম ভালো থাকায় খামারিরা লাভবান হবেন বলে আশাব্যক্ত করেন ড. মুহাম্মদ ইসহাক আলী।