ঢাকা রবিবার, ১১ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২


ছাত্রলীগের ১১১ ইউনিটের ১০৮ কমিটির মেয়াদ নেই


১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:১৬

আপডেট:
১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:১৩

সারাদেশে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক ইউনিট ১১১। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এসব ইউনিটের কমিটির মেয়াদ এক বছর। আর কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর। তবে এই ১১১ কমিটির মধ্যে ১০৮টিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব কমিটির কোনো কোনোটির বয়স তিন বছর- এমনকি ১০ বছরও পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন উপজেলা কমিটি রয়েছে, যেগুলো ১২ থেকে ১৪ বছরের পুরনো।

নতুন নেতৃত্ব না আসায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব ইউনিটের কর্মীরা। সংগঠনের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে গ্রুপিং, কোন্দল। বয়স্করা ছাত্রনেতা হওয়ায় তাদের মধ্যে অর্থ আয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে মূল দলের ভাবমূর্তি। এ ছাড়া সেশনজট, ছাত্রলীগের বয়সসীমা, শিক্ষাজীবনের সমাপ্তির কারণে কোনো পদ না পেয়েই ছাত্রত্ব শেষ করছেন সংগঠনটির লাখো ত্যাগী কর্মী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপ, দীর্ঘদিনের গ্রুপিং মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোতে কমিটি দিতে না পারার প্রধান কারণ।

গত বছরের ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি করা হয়। ২০১৫ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসাইন। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।

অবাক করা তথ্য হলো- রিপন ও রোটনের সময় ঘোষিত কমিটি দিয়েই এখনো চলছে অনেক জেলা ইউনিট। বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি হয় ২০১১ সালের ৯ জুলাই। সেই কমিটি এখনো বহাল। বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় কেবল সভাপতি দিয়েই চলছে শাখাটি।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ ১০৮ কমিটির অন্তত ৩৭টির মেয়াদ শেষ হয়েছে চার থেকে ৯ বছর আগে। ৭১টি চলছে দুই থেকে তিন বছরের পুরনোদের নিয়ে। শোভন-রাব্বানীর ১৪ মাসে মাত্র দুটি ইউনিটে কমিটি হয়। এগুলো হলো- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজসহ কয়েকটি শাখায় সম্মেলন এবং কয়েকটি শাখায় কমিটি ভেঙে দিলেও নতুন কমিটি করতে পারেননি তারা। চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে শোভন-রাব্বানীর পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। দায়িত্ব পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে কেবল নড়াইল জেলায় কমিটি দিয়েছেন তারা।

সোহাগ-জাকির কমিটির সূত্র জানায়, তাদের সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ১০৯ ইউনিটের ৩৭টিতে নতুন কমিটি করা যায়নি। সেগুলোতে শোভন-রাব্বানীও কমিটি দেননি। এগুলো হচ্ছেÑ বরিশাল জেলা ও মহানগর, ঝালকাঠি, ভোলা, বরগুনা, রংপুর জেলা ও মহানগর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও, চট্টগ্রাম মহানগর, কুমিল্লা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, বাগেরহাট ও খুলনা মহানগর, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর জেলা ও মহানগর। এর মধ্যে গাজীপুর মহানগরের সম্মেলন হয়েছে, কমিটি হয়নি। সিলেট জেলা ও মহানগর এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এর মধ্যে সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি ভাঙা হলেও নতুন কমিটি করা হয়নি। নেত্রকোনা জেলা এবং মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়া উপজেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছিল সাত বছর আগে। এ ছাড়া কক্সবাজার জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। রামু উপজেলায় কমিটি নেই ১২ বছর ধরে। মহেশখালী উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই ২০ বছর ধরে।

হিসাব অনুযায়ী, সোহাগ-জাকির ৭২ ইউনিটে কমিটি দিতে পেরেছিলেন। তার আগে সোহাগ-নাজমুল কমিটি প্রায় সাড়ে চার বছর দায়িত্বে থেকে ৮৫ ইউনিটে কমিটি দিয়েছে।

ছাত্রলীগের প্রধান ইউনিট বলে বিবেচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১৮টি হল কমিটি গঠনের পর পেরিয়ে গেছে প্রায় তিন বছর। এই হল শাখাগুলোর অধিকাংশ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদ পেয়েছেন। ফলে হলগুলোতে এক ধরনের সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। একেকটি হলে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে চার থেকে ১০টি গ্রুপ ও উপগ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে।

একই অবস্থা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের বিভিন্ন থানা ও কলেজ ইউনিটের ক্ষেত্রে। দুই ইউনিট মিলে হাতেগোনা সাত থেকে আটটি ইউনিট বাদে বাকি সবই মেয়াদোত্তীর্ণ। এমনকি কোনো কোনো থানায় কমিটি নেই ছয় থেকে আট বছর ধরে।

মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোয় কমিটি করার বিষয়ে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় দ্রুতই হাত দেব। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন থাকায় ইচ্ছে থাকলেও কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন শেষে আমরা সারাদেশের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোতে নতুন নেতৃত্বকে দায়িত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করব।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন থাকায় ছাত্রলীগের কমিটি করা সম্ভব হয়নি। আমরা নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশনা, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজটি কীভাবে সহজ করা যায়, সেটি ঠিক করব। আশা করছি, ধারাবাহিকভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ জায়গায় নতুন কমিটি দিতে পারব।